তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম
আজ আমরা জানব তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম। চলুন তা জেনে নেওয়া যাক, জাতিকে বলা হয় আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি অর্থ্যাৎ আশরাফুল মাখলুকাত। এই পৃথিবীতে আমাদের জন্মই হয়েছে আল্লাহর ইবাদতের জন্যে।
যে বান্দার আল্লাহর ইবাদত বন্দেগীতে দিনের বেশিরভাগ সময় কাটে তার জীবনের যত বাধাই আসুক না কেন সেই বান্দা মন ছোট না করে ইতিবাচকতার সাথে সেই কঠিন সময় পার করে। কিন্তু আমরা মানুষ আমাদের মধ্যে বিচ্যুতি আসবে এটাই স্বাভাবিক
আর এইসকল কঠিন সময়ে আমরা বেশি বেশি করে তাজুদের নামাজের নিয়ম এর মাধ্যমে আমাদের রবের স্মরণ করব। আল্লাহ ওনার বান্দাদের কঠিন পরিক্ষায় ফেলেন বার বার আর এই পরিক্ষায় প্রতিবার পরার পরই আমরা বারে বারেই আল্লাহর দরবারে দুহাত তুলে ক্ষমা প্রার্থনা করি, চোখের পানি ফেলে কষ্টের কথা জানান দেই আরও বলি আমাদের মনের অনেক অব্যক্ত কথা।
কোন মানুষকে একই কথা বার বার বললে সেই মানুষটির আপনার প্রতি দেরীতে হলেও বিরক্তি ভাব প্রকাশ করবে কিন্তু মহান রাব্বুল আল-আমিনের কাছে যতই কিছু চাই না কেন আমরা,বার বার যতই বলি তিঁনি খুশি হন, বান্দার চোখের পানি আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয়।
আল্লাহ তা’আলাকে নিজের মনের কথা বলার অনেকগুলো সময়ের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সময় হচ্ছে তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম সময় আল্লাহর কাছে মনের কথা ব্যক্ত করা। আজ আমরা সেই তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে জানব।
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ যথাঃ কালিমা, নামাজ, রোযা, হজ্ব ও যাকাত। এই পাঁচটি কাজ যেকোন মুসলিমের জন্যে অবশ্যই পালন করা জরুরী, এর বাইরেও নফল অনেক ইবাদত আছে যা আমাদের জন্যে ফরজ না করা হলেও এগুলো পালন করলে সোয়াবের পরিমাণ অনেক দ্বিগুণ হয়ে আমাদের আমল নামায় জমা হয়।
আজকে আমরা জানব এমন একটি নফল ইবাদতের কথা যা আমাদের মানসিক দুশ্চিন্তা ও সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে। আমরা অনেকেই জানি এই বিশেষ ইবাদতের নাম তবুও হয়ত সঠিক নিয়ম বা ফজিলত সম্পর্কে অবগত নই। ইবাদতের নাম হলো “তাহাজ্জুদ”।
তাহাজ্জুদ নামাজ
সহজভাবে বলতে গেলে যদি এশার নামাজের পর বা রাতে ঘুমানোর আগে আমরা দু’রাকাত নফল নামাজ আদায় করি সেই নামাজকে আমরা ” কিয়াম-আল- লাইল” বলে জানব আর যদি এশার নামাজ শেষ করে ঘুমিয়ে পরে এরপর রাত্রির শেষ ভাগে বা ফজরের কিছু সময় আগে উঠে পবিত্রতার সাথে ওযু করে দুই বা তার অধিক নামাজ আদায় করি তাহলে তাকে বলা হয় “তাহাজ্জুদ”।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম আল্লাহর সাথে সম্পর্ক সুদৃঢ় করার এবং আল্লাহর সবচেয়ে কাছাকাছি যাওয়ার অন্যতম উপায় হচ্ছে তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করা। আল কুরআনে ঘুমের অনেকগুলো আরবি প্রতিশব্দ ব্যবহৃত হয়েছে যার মধ্যে “নু-আস” অর্থাৎ ঝিমুনি ভাব ( Drowse / Slumber)। স্বল্প সময়ের ঘুম বা Power Nap যেখানে আশেপাশে যা হচ্ছে সে বিষয়েও অবগত থাকা যাচ্ছে এই ঘুমের আরবি প্রতিশব্দ ‘সি-না”।
আরও পড়ুনঃ বদনজর থেকে বাঁচার দোয়া
ঘুমের সবচেয়ে গভীরতম অবস্থাকে আরবীতে বলে “হুজুত” অর্থ্যাৎ শেষ রাতের ঘুম যেখানে মানুষ সম্পূর্ণ ঘুমন্ত অবস্থায় থাকে, এই ঘুম আমাদের সবার কাছে বেশ আরামের ঘুম কারন তখন শরীরের অবসাদ ভাব চুড়ান্ত পর্যায়ে বোধ হয়। এই যে চুড়ান্ত অবসাদের পর আসা আরামের ঘুম যার নাম “হুজুত”। এই হুজুতের ঘুমকে সম্পূর্ণ অবজ্ঞা/ ত্যাগ করে উঠে যে সালাত আদায় করা হয় তাকেই বলে ” সালাতুল তাহাজ্জুদ” বা “সালাতুল হুজুত”।
ভেবে দেখুন সকল প্রাণীকুল যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তখন আপনি ফজরের আগে আগে ঘুম বিসর্জন দিয়ে উঠলেন, শীতের দিন হলে কথাই নেই, সেই ঘুম আরও বেশি আরামের এবং সেই ঘুম ছেড়ে উঠতে কষ্ট আরও বেশি, ঘুম থেকে উঠে আপনি পরিষ্কার ঠান্ডা পানি দিয়ে ওযু করলেন, আপনার সালাতের স্থান পরিষ্কার পরিপাটি করে রাখা, আপনি সালাতের জন্যে উপযুক্ত পোশাক পরে দু রাকাত, চার রাকাত যতখানি সম্ভব সালাত আদায় করলেন।
আল্লাহর কাছে গুনাহের জন্যে কাদলেন, ক্ষমা চাইলেন। আপনার এই স্বল্প সময়ের ইবাদত আল্লাহর কাছে অনেক প্রিয়, যারা নিয়মিত তাহাজ্জুদ আদায় করেন তাদেরকে আল্লাহ সুবাহান আল্লা তা’আলা অনেক পছন্দ করেন এবং মর্যাদা প্রদান করেন।
তাহাজ্জুদ নামাজের সঠিক সময়
এই বিশেষ ইবাদত করার উপযুক্ত সময় হলো রাত্রির শেষভাগে, সঠিকভাবে বলতে গেলে এশার পর থেকেই এই সালাতের সময় শুরু হয় এবং ফজরের আগ পর্যন্ত এই ইবাদতের সময় থাকে।
তাহাজ্জুদ ও কিয়াম-আল- লাইল এই দুই ধরনের ইবাদতের মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে।
এবার আসি সালাতুল তাহাজ্জুদ কত রাকাত পড়তে হবে এই বিষয়ে।
এই সালাত দুই রাকাত করে পড়া উত্তম। বুখারী শরিফ থেকে পাওয়া গেছে যে মা আয়েশা (রাঃ) বর্ননা করেছেন রমজান বা রমজানের বাইরে বিশ্বনবী এগার (১১) রাকাতের বেশি পড়তেন না। এর মধ্যে আট (৮) রাকাত ছিল সালাতুল তাহাজ্জুদ এবং বাকী তিন (৩) রাকাত ছিল সালাতুল বিতর। তাই বলা যায় যে আমরা আট (৮) রাকাত পড়তে পারি, এর চেয়ে কম বা বেশিও পড়তে পারি।
এই সময়ে বেশি বেশি দোয়া করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কারন এই সময়ে আল্লাহ তা’আলা সর্বনিম্ন আসমানে নেমে আসেন এবং ওনার নিকট দোয়া করার জন্যে আহবান জানান।
আরও পড়ুনঃ হালাল ব্যবসায়ের আইডিয়া
সালাতুল তাহাজ্জুদ পড়ার নিয়ম?
- ওজুর নিয়ত করা।
- সম্পূর্ণ নিয়ম মেনে ওজু সম্পন্ন করা।
- পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন স্থান নির্বাচন করা।
- তাকবিরে তাহরিমা “আল্লাহ হুআকবার” বলে নিয়ত বাঁধা।
- ছানা পাঠ করা।
- সূরা ফাতেহা পাঠ করা
- সূরা মিলিয়ে শুদ্ধ কেরা’আত পাঠ করা।
- এরপর যথাক্রমে রুকু ও সেজদাহ করা।
- বৈঠকে বসে একে একে তাশাহুদ, দুরুদ ও দোয়া মাসুরা পাঠ করা।
- সবশেষে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে নামাজ শেষ করা
পুরুষেরা শব্দ করে কেরা’আত পাঠ করতে পারবে তবে মহিলারা নিজের কানে শ্রবণ করা যায় এরকম আওয়াজে কেরা’আত পাঠ করবে। যেকোন সূরা দিয়েই এই সালাত আদায় করা যাবে। তাজুদের নামাজের নিয়ম নবীজি (সাঃ) তাহাজ্জুদ নামাজ কখনো চার, কখনো ছয়, কখনো আট রাকাত পড়তেন। কিন্তু এর চেয়ে কম যেমন দুই রাকাত বা আট রাকাতের বেশিও পড়া যাবে, এতে কোন সমস্যা নেই।
এবার জেনে নেব তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলতগুলো সম্পর্কে
- সালাতুল তাহাজ্জুদ নিয়মিত আদায় করলে মনের প্রশান্তি বৃদ্ধি পায়।
- দোয়া কবুলের জন্যে শ্রেষ্ঠ সময়গুলোর মধ্যে একটি এই তাহাজ্জুদের সময়।
- এই সালাতের জন্যে অনেক ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হয়, খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠা স্বাস্থ্যের জন্যেও বেশ উপকারী।
- চেহারায় এক ধরনের আলাদা নূর আসে।
- নিজের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের জন্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা যায়।
- অলসতা দূর হয়।
- নিজের মনের সব চাহিদা এই জাহানের মালিকের কাছে নির্দ্বিধায় প্রকাশ করা যায় যা অন্য সকলের কাছে ব্যক্ত করা যায় না।
- পরকাল সম্পর্কে ভাবতে বাধ্য করে।
- আল্লাহ তাহাজ্জুদ আদায়কারীকে উচ্চ মর্যাদা প্রদান করেন।
- আল্লাহর কাছে তাহাজ্জুদ আদায়কারী বিশেষ সম্মান রয়েছে।
- নিজের কৃতকর্মের জন্যে রবের কাছে মন থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করা যায়।
- শয়তানের ওয়াস ওয়াসা থেকে দূরে থাকা যায়।
- মনোবল ও চেতনা বাড়ে।
- আল্লাহর প্রতি ঈমান ও বিশ্বাস দৃঢ় হয়।
শেষ কথা
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম সবশেষে বলা যায় যে, আমরা যতক্ষন জীবিত আল্লাহ তা’আলা আমাদের গুনাহের জন্যে আমাদেরকে ক্ষমা করবেন। যদি আমরা কায়মনোবাক্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই এবং পরবর্তীতে আর কখনই সেই ভুল না করি, কোন ইচ্ছা পূরণের ক্ষেত্রেও একই ভাবে আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে হবে আর সেই সমর্পণের জন্যে তাহাজ্জুদ একটি অতিশয় উপযুক্ত সময়।
তাহাজ্জুদ নামাজকে বলা হয় শ্রেষ্ঠতম নফল ইবাদত, তাই আসুন সবাই অলসতা ত্যাগ করে মহান রব্বুল আল-আমিনের দরবারে প্রার্থনা করি যাতে উনি আমাদের ওপর রহমত বর্ষন করেন। আপনার সুস্থতা কামনা করে আজকের মত এখানেই শেষ করছি ধন্যবাদ।
আরও পড়ুন-
ফিতরা দেওয়ার নিয়ম ও পদ্ধতি
হতাশা থেকে মুক্তির উপায় ইসলামিক