রসুন খাওয়ার উপকারিতা
দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হলো রসুন (Garlic)। তরকারিতে একটু রসুন না দিলে যেন রান্নাই অসম্পূর্ণ থেকে যায়। কিন্তু রসুন খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে কি সবার জানা আছে? আজকের আর্টিকেল সাজিয়েছি ভেষজ গুণসম্পন্ন রসুন খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে।
পেঁয়াজ জাতীয় একটি ঝাঁঝালো সবজি রসুন। এর বৈজ্ঞানিক নাম Allium sativum। তরকারিকে সুস্বাদু করার জন্য পেঁয়াজ, মরিচের সাথে রসুনও (Garlic) ব্যবহার করা হয়। শুধু রান্নার ক্ষেত্রেই নয়, প্রাচীনকাল থেকেই রসুন (Garlic) ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
রান্নার মসলা এবং ভেষজ ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত রসুনের রয়েছে অনেক উপকারিতা। শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে প্রাকৃতিক দাওয়াই হিসেবে কাজ করে রসুন। খালি পেটে এক কোয়া রসুন খাওয়ার অভ্যাস আপনাকে অনেক রোগ থেকে মুক্তি দিবে। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেই রসুন খাওয়ার উপকারিতা।
আরও পড়ুনঃ মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
রসুন খাওয়ার উপকারিতা – পুষ্টিগুণ

“হারবাল ওয়ান্ডার ড্রাগ” নামে খ্যাত রসুনে (Garlic) রয়েছে অনেক পুষ্টি এবং বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ। এগুলো মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। রসুন খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানার আগে জেনে নেই এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। এই মসলাটি বিভিন্ন রকম ভিটামিন এবং মিনারেলের ভান্ডার। প্রতি ১০০ গ্রাম রসুনে রয়েছে :
- শক্তি – ১৪৯ কিলো ক্যালরি (৬২৩ কিলো জুল)
- শর্করা – ৩৩.০৬ গ্রাম
- ডায়েটারি ফাইবার – ২.১ গ্রাম
- ফ্যাট – ০.৫ গ্রাম
- প্রোটিন – ৬.৩৬ গ্রাম
- পানি – ৫৯ গ্রাম
এছাড়াও রসুনে রয়েছে –
- থিয়ামিন (ভিটামিন বি১)
- রিবোফ্লাবিন (ভিটামিন বি২)
- নায়াসিন (ভিটামিন বি৩)
- প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড (ভিটামিন বি৫)
- ভিটামিন বি৬
- ফোলেট (ভিটামিন বি৯)
- সেলেনিয়াম
- সালফার
- ভিটামিন সি
- কোলিন
- ক্যালসিয়াম
- ম্যাগনেসিয়াম
- আয়রন
- ম্যাঙ্গানিজ
- পটাশিয়াম
- ফসফরাস
- সোডিয়াম এবং
- জিংক
রসুনে বিদ্যমান “অ্যালিসিন” নামক এক প্রকার জরুরী এবং গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। যা অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ভাইরাল, অ্যান্টি-ফাঙ্গাল এবং অ্যান্টি-অক্সিজেন্ট বৈশিষ্ট্যে সমৃদ্ধ। অ্যালিসিন ক্যান্সারসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দূর করতে ভূমিকা রাখে। এই উপাদানটির উপস্থিতির কারণে রসুনকে “সুপারফুড” হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ থাইরয়েড কমানোর উপায়
রসুন খাওয়ার উপকারিতা সমূহ
সুস্থ থাকার জন্য প্রাচীনকাল থেকেই মানুষেরা রসুন (Garlic) খেতেন। বিজ্ঞানীরা বিশ্লেষণ (Analysis) করে বলেছেন, নিঃসন্দেহে রসুন একটি হারবাল ওয়ান্ডার ড্রাগ। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক হিপোক্রেটিস রসুনকে ব্যবহার করেছিলেন সারভাইকাল ক্যান্সারের চিকিৎসায়। প্রচুর পুষ্টিগুণ সম্পন্ন রসুনের রয়েছে অনেক উপকারিতা। রসুন খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো :
১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে রসুন
রসুনের এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টি-ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। খালি পেটে রসুন খেলে উপকার বেশি পাওয়া যায়।
২. উচ্চ রক্তচাপ কমাতে রসুন
স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাক এর অন্যতম কারণ হলো উচ্চ রক্তচাপ। রসুন (Garlic) উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। শরীরের এলডিএল বেড়ে গেলে রক্তচাপ বেড়ে যায়। জানা যায়, ৬০০ থেকে ১৫০০ মিলিগ্রাম রসুন ২৪ সপ্তাহের মধ্যেই উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে ফেলতে পারে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে অন্তত দুই কোয়া রসুন খেলে উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যা থাকবে না।
৩. মস্তিষ্কের সুস্থ বিকাশে রসুন
রসুনে বিদ্যমান অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরকে অক্সিডেটিভ ড্যামেজ থেকে রক্ষা করে। শরীরের অক্সিডেশন বা জারণ প্রক্রিয়াকে কমাতে সাহায্য করে এবং কোষকে রাখে স্বাস্থ্যকর। রসুনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটায়। মস্তিষ্কের রোগ আলঝেইমার বা স্মৃতিভ্রংশ এবং ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রম প্রতিরোধ করে রসুন।
৪. রক্ত সঞ্চালন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে রসুন
রসুন শরীরের রক্ত সঞ্চালন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুই কোয়া রসুন খেলে এর উপকার পাবেন। রক্ত সঞ্চালনে বাধাগ্রস্থ হয়ে যেসব রোগের সৃষ্টি হয়, রসুন সেগুলো রোধ করতে সাহায্য করে ।
৫. পুরুষের যৌনক্ষমতা বাড়াতে রসুন
বিভিন্ন কারণে পুরুষের যৌনক্ষমতা কমে যেতে পারে। এক্ষেত্রে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুই কোয়া রসুন খেলে ধীরে ধীরে যৌনক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। রসুন খেলে রক্ত সঞ্চালন ক্ষমতা বৃদ্ধি প্রায়। তাই বলা হয় এর সাথে যৌনক্ষমতার সম্পর্ক আছে।
৬. শরীরকে ডি-টক্সিফাই করতে রসুন
যে সকল খাবার শরীর থেকে ক্ষতিকর পদার্থ নিষ্কাশন করতে সাহায্য করে তাদেরকে ডিটক্স ফুড বলে। রসুন (Garlic) অত্যন্ত কার্যকর একটি ডিটক্স ফুড। এতে উপস্থিত বায়ো একটিভ সেলিনিয়াম, সালফার এবং গ্লুটাথিওন ডিটক্সে ভূমিকা রাখে।
৭. ক্যান্সার প্রতিরোধে রসুন
রসুনে উপস্থিত সালফার ক্যান্সার কোষকে বাধা প্রদান করে। সেই সাথে বিভিন্ন রকম টিউমারকেও বাধা প্রদান করে। এর কার্যকারীতার প্রমাণ পাওয়া যায় কোলন, অন্ননালী, প্রোস্টেট এবং কিডনির ক্যান্সারের ক্ষেত্রে। আইওয়া উইমেনস হেলথ স্টাডি অনুসারে, “যে সকল মহিলারা অন্যান্য শাকসবজি এবং ফলের সঙ্গে নিয়মিত রসুন খান, তাদের কোলন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা ৩৫% কম।”
৮. হজম শক্তি বৃদ্ধিতে রসুন
রসুন (Garlic) পাকস্থলীর ঝিল্লিকে অধিক গ্যাস্ট্রিক রস তৈরি করতে উদ্দীপিত করে। ফলে খাবার দ্রুত হজম হয়। অস্বাস্থ্যকর খাবারের ফলে শরীরে জমাকৃত ক্ষতিকর পদার্থ অর্থাৎ লিভার থেকে টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করে রসুন। রসুনে রয়েছে ব্যাকটেরিয়ারোধী বৈশিষ্ট্য। যা E.coli এবং Salmonella এই দুইটি ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে। এগুলো খাদ্যে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে।
৯. হাড় শক্তিশালী করতে রসুন
হাড়ের ক্ষয় কমাতে রসুন সাহায্য করে এবং হাড়কে করে শক্তিশালী। বিশেষ করে নারীদের হাড়ের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় রসুন কার্যকরী। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঋতুচক্রের শেষ সীমায় থাকা নারীদের ইস্ট্রোজেনের অভাব দূর করে রসুন (Garlic)।
আরও পড়ুনঃ ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়
১০. অ্যান্টিবায়োটিক গুণ সম্পন্ন রসুন
অ্যান্টিবায়োটিক গুণে অনন্য রসুন। এতে বিদ্যমান অ্যালিসিন নামক উপাদান একটি বায়ো একটিভ এন্টিবায়োটিক। এটি সংক্রমণ এবং ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। অ্যালিসিন যে সমস্ত অনুজীবের উপরে কাজ করে –
- ছত্রাক এবং এর বিভিন্ন উপাদান
- ভাইরাল সংক্রমণ
- প্রোটোজোয়া
- বিভিন্ন রকম ব্যাকটেরিয়া (যেমন – E.coli এবং Salmonella)
১১. কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রসুন
রক্তের একটি চর্বি জাতীয় উপাদানের নাম কোলেস্টেরল। LDL এর পরিমান বৃদ্ধি পেলে এবং HDL এর পরিমাণ পর্যাপ্ত পরিমাণ শরীরে না থাকলে গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন রসুন গ্রহণের ফলে শরীরের মোট কোলেস্টেরলের পরিমাণ এবং LDL এর মাত্রা ১০ থেকে ১৫% কমে যায়।
১২. ত্বকের যত্নে রসুন
রসুন (Garlic) আপনার ত্বক ভালো রাখবে। ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ পড়তে দিবে না। রসুন ত্বকের কালো দাগ দূর করে এবং ব্রণের উপকার করে। এক্ষেত্রে প্রতিদিন সকালে দুই কোয়া রসুন খালি পেটে খেলে ভালো ফলাফল পাবেন।
১৩. হৃদপিন্ডের শক্তিবর্ধক রসুন
যারা হৃদপিন্ডের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য রসুন (Garlic) খুবই উপকারী। মাঝেমধ্যে বুকের বা-পাশে ব্যথা অনুভূত হওয়া, সিঁড়ি দিয়ে উঠতে কষ্ট এরকম সমস্যা হলে রসুন খেতে পারেন। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুই কোয়া রসুন পানি দিয়ে গিলে খাবেন। ফলে হৃদপিণ্ড হবে শক্তিশালী এবং রক্ত সঞ্চালন ক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে।
১৪. ফুসফুসের সংক্রমণ প্রতিরোধে রসুন
বিভিন্ন কারণে ফুসফুসে সংক্রমণ হতে পারে। ফুসফুসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য রসুনের রস কার্যকরী। রসুনের রসের সঙ্গে হলুদ গুড়া গরম পানি দিয়ে চায়ের মত খেলে সংক্রমণ থাকে না। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুই কোয়া রসুন খাওয়া অত্যন্ত কার্যকরী।
১৫. অন্ত্রের জন্য ভালো রসুন
খালি পেটে রসুন (Garlic) খেলে যকৃত এবং মুত্রাশয় সঠিকভাবে তাদের কার্য সম্পাদন করে। এছাড়াও খালি পেটে রসুন খাওয়ার ফলে পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়। হজম এবং ক্ষুধার উদ্দীপক হিসেবেও কাজ করে। স্ট্রেস বা মানসিক চাপের কারণে আমাদের অনেক সময় গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয়। খালি পেটে রসুন খাওয়ার ফলে আমাদের স্নায়বিক চাপের পরিমাণ কমে যায়। ফলে এই সকল সমস্যা দূর হয়।
১৬. চর্বি কমাতে রসুন
শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বের করতে সাহায্য করে রসুন। তাই আপনার শরীরে উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল বা চর্বি থাকলে রসুনের শরণাপন্ন হতে পারেন।
১৭. ছত্রাক সংক্রমণের বিরুদ্ধে রসুন
ছত্রাক সংক্রমণের প্রতিষেধকরূপে কাজ করে রসুন। ছত্রাক আক্রান্ত স্থানে রসুনের তেল বা জেল ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। মুখ এবং ঠোঁটের ক্ষতেও রসুনের পেস্ট ব্যবহারে উপকার পাওয়া যায় ।
১৮. এলার্জি প্রতিরোধে রসুন
দেহের জীবাণুনাশক হিসেবেও রসুন কাজ করে। এলার্জিজনিত শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রদাহ কমাতে রসুন কার্যকরী। এছাড়াও ফুসকুড়ি, ছোট কামড় এবং চুলকানির মতো সমস্যাগুলো থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য রসুন ভূমিকা রাখে।
১৯. কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে রসুন
রসুন (Garlic) ক্লান্তি দূর করে শরীরের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। যাদের হৃদরোগ আছে তাদের হার্টের রেট কমায় এবং দুর্বলতা কাটিয়ে তুলে রসুন। তাই কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য নিয়মিত রসুন খেতে পারেন। রসুন খাওয়ার উপকারিতা
২০. আয়ু বৃদ্ধিতে রসুন
স্বাস্থ্যকর গুণাবলী থাকার কারণে রসুন মানুষের দীর্ঘায়ু লাভ করতে সাহায্য করে। উচ্চ রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয় রসুন। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ বা ইমিউন সিস্টেমকে সচল রাখে। বয়স্ক রোগীদের জন্য এটি বেশ উপকারী।
২১. ধাতুর বিষক্রিয়া প্রতিহত করতে রসুন
শরীরকে ভারী ধাতুর বিষক্রিয়া থেকে রক্ষা করে রসুন। গবেষণায় দেখা গেছে, রসুন গ্রহণকারীদের ভারী ধাতুর বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম। সেই সঙ্গে মাথাব্যথা উপশমেও সাহায্য করে রসুন।
২২. অবাঞ্চিত ফোলা বা গোটা দূর করতে রসুন
অনেকের শরীরেই বিভিন্ন জায়গায় ফোলা পিণ্ড থাকে। যা বাড়ে না, কমে না, মিশে যায় না এমনকি ব্যাথাও করে না। এই রকম ফোলা পিণ্ড বা গোটা মুছে ফেলতে চাইলে প্রতিদিন সকালে ৬-৮ কোয়া রসুন সকালে খালি পেটে এবং দুপুর ও রাত্রে খাবার পর দুই কোয়া রসুন খাবেন। যার ফলে ফোলাটা ধীরে ধীরে মিশে যাবে।
আরও পড়ুনঃ ফর্সা হওয়ার ডাক্তারি ক্রিম
রসুন খাওয়ার অপকারিতা
রসুন খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে তো জানলাম। কিন্তু রসুন যে সবার শরীরেই ভালো ফল নিয়ে আসবে তা নয়। রসুনের রয়েছে কিছু অপকারিতাও। রসুন খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো :
- অতিরিক্ত মাত্রায় রসুন খাওয়ার ফলে এতে বিদ্যমান রাসায়নিক উপাদান অ্যালিসিন লিভারে বিষক্রিয়া তৈরি করতে পারে।
- রসুন রক্তের ঘনত্ব কমায়। যারা ওয়ারফারিন, অ্যাসপিরিন ইত্যাদি ওষুধ সেবন করেন ; তাদের অতিমাত্রায় রসুন খাওয়া উচিত নয়। এর ফলে রক্ত অতিরিক্ত পাতলা হয়ে যেতে পারে।
- রসুনে বিদ্যমান সালফার যৌগ পেটে গ্যাস তৈরি করে। তাই খালি পেটে রসুন খেলে অনেকের ডায়রিয়া হতে পারে।
- অতিরিক্ত রসুন খেলে রক্তচাপ কমে যেতে পারে।
- অতিরিক্ত রসুন খেলে মুখে দুর্গন্ধ হয়। এতে বিদ্যমান সালফার যৌগের কারণে এমনটা হয়।
- গর্ভবতী নারীর রসুন খেলে সেক্ষেত্রে প্রসব বেদনা বেড়ে রক্তক্ষরণ হতে পারে। এছাড়াও শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের রসুন খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। কারণ এতে দুধের স্বাদ পাল্টে যেতে পারে।
- অতিরিক্ত রসুন খেলে “হাইফিমা” থাকার সম্ভবনা থাকে। আইরিস এবং কর্নিয়ার মাঝে রক্তক্ষরণ ঘটাকে হাইফিমা বলে। এর ফলে অনেক সময় দৃষ্টিশক্তি হারানোর সম্ভাবনা থাকে ।
শেষকথা
আশা করছি উপরের আলোচনা থেকে রসুন খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে একটি ধারণা পেয়েছেন। রসুনের রয়েছে অসংখ্য উপকারিতা। পরিমাণমতো নিয়মিত রসুন খাবেন। তাহলেই এর সঠিক ফলাফল পাবেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা সবচেয়ে বেশি। কারণ প্রক্রিয়াকরণের পর এর পুষ্টিগুণ অনেকটা কমে যায়। অ্যালিসিন শরীরে বেশি ঢুকলে তা বিষক্রিয়া ঘটায়।
যদি শরীরে মাপ মত হয় “অ্যালিসিন” তাহলে এটি ওষুধের মত কাজ করে। রসুন শুকিয়ে বা রান্নায় দিলে এর উপকারিতা অনেক কমে যায়। তাই স্বাস্থ্যের জন্য কাঁচা রসুন সবচেয়ে বেশি উপকারী। শুধু রসুন খেতে যদি অসুবিধা হয়, সেক্ষেত্রে অন্য কিছুর সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন। যেমন – সালাদ বা দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে বা ধনে পাতার সঙ্গে বেটে ইত্যাদি উপায়ে।
রসুন খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কিত প্রশ্ন এবং উত্তর / FAQ’s
১. কোন রসুন স্বাস্থ্যের জন্য বেশি ভালো?
উত্তর : বন্য রসুন এবং লবঙ্গ রসুন উভয়েরই স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রায় একই রকম। এরা এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টি-ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ। তবে নিয়মিত রসুনের চেয়ে বন্য রসুন রক্তচাপ কমাতে অধিক কার্যকরী।
২. কোলেস্টেরল হলে দিনে কত কোয়া রসুন খাওয়া উচিৎ?
উত্তর : গবেষণা অনুযায়ী, প্রতিদিন এক কোয়া বা ৩-৬ গ্রাম রসুন খেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা ১০% কমতে পারে।
আরও পড়ুন-
থাইরয়েড হলে কি কি সমস্যা হয়
কাঠবাদাম এর উপকারিতা