নাকের সর্দি দূর করার উপায় ও প্রাকৃতিক চিকিৎসা

নাকের সর্দি দূর করার উপায়

ঋতু পরিবর্তনের এই সময়ে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় নাকের সর্দির সমস্যা। এই সমস্যা একবার দেখা দিলে সহজে ভালো হতে চায় না।

অনেক সময় নাকের সর্দির পাশাপাশি দেখা দেয় জ্বরও। যেহেতু করোনাভাইরাসের একটা ভয় আমাদের সাথী,তাই থাকতে হবে বাড়তি যত্নে।

যখন আমাদের শরীর প্রয়োজনের চাইতে বেশি মিউকাস তৈরি করে তখন বাড়তি মিউকাস নাক দিয়ে বেরিয়ে যায়। এর ফলে নাক দিয়ে পানি ঝরার মত সমস্যা হয়।

যদি মিউকাস নাক দিয়ে বের হতে না পারে তা গলায় জমা হয়ে শুকনা কাশি হতে পারে। আমাদের শরীরের জন্য মিউকাস ক্ষতিকর নয় বরং এটি অন্যান্য যেকোনো ইনফেকশনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহযোগিতা করে।

তবে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি মিউকাস শরীরে তৈরি হলে সেখান থেকেই শুরু হয় সমস্যা। বিশেষ করে শীতের সময় অথবা  এলার্জি হলে, সাইনাসের সমস্যা দেখা দিলে, ধুলাবালি বা বায়ু দূষণের কারণেও এরকমটা হতে পারে।

আজকের আর্টিকেলে আমরা নাকের সর্দি দূর করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি আপনারা উপকৃত হবেন।

আরও পড়ুনঃ গরম পানি খাওয়ার উপকারিতা ও স্বাস্থ্যবিষয়ক তথ্য

নাকের বন্ধভাব দূর করার উপায়

নাকের সর্দি দূর করার উপায়

একজন চিকিৎসক জানান, অ্যান্টিহিস্টামিন বা নাকের জন্য ব্যবহৃত নানা ধরনের স্টেরয়েড আপনার কাজে আসতে পারে।

আবার আপনারা নাকের জন্য প্রয়োজনীয় স্যালাইন ব্যবহার করতে পারবেন। তাছাড়াও কিছুক্ষণ পরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে নাক ধুলেও সমস্যা কমতে পারে। এতে শ্বাস নেওয়ার অসুবিধা দূরে হবে।

সর্দি দূর করার ঘরোয়া উপায়

  • রসুন নাক বন্ধ হওয়ার সমস্যা সমাধানে সুন্দরভাবে কাজ করে।
  • নাকের সর্দি  সমস্যা সমাধানে আদাও বেশ কার্যকর। 
  • নাকের সর্দি দূর করার উপায় হিসেবে লেবু খাওয়া যেতে পারে।  
  • তেজপাতা অনেক সময় সর্দিতে আমাদের মুখে রুচি বাড়িয়ে থাকে।
  • পেঁয়াজ এর ঝাঁঝ নাক বন্ধ প্রতিরোধে কার্যকরী।
  • এ ছাড়া কিছু নিয়ম মেনে চললেও আপনি নাকের সর্দি হতে উপকার পাবেন।

নাকের সর্দি দূর করার উপায় – প্রাকৃতিক চিকিৎসা

এই সমস্যায় সবচেয়ে বেশি ভোগেন তারা যাদের নাকের হাড় একটু বাঁকা। অনেক সময় গর্ভবতী নারীদের বিশেষ কোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে এমনটা হতে পারে।

নাক দিয়ে সর্দি পড়া, গলাব্যথা, নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ, শুষ্ক কাশি, ঢোক গিলতে সমস্যা ইত্যাদি হলো এর পরিচিত লক্ষণ। এর বাইরে মাথাব্যথা বা গলা বসার মতো সমস্যা হতেও পারে।

চলুন জেনে নেয়া যাক সর্দিতে নাক বন্ধ হলে করণীয় কিছু প্রাকৃতিক পদ্ধতি – 

১। গরম ভাপ

নাকের সর্দি দূর করার উপায় হিসেবে কাজ করতে পারে গরম পানির ভাপ। পরিষ্কার পানিতে তেজপাতা ও লবঙ্গ দিয়ে ফুটিয়ে নিতে হবে। এরপর চুলা বন্ধ করে দিবেন।

পরিষ্কার গামছা বা তোয়ালে দিয়ে মাথা ঢেকে গরম পানির ভাপ নিবেন। এতে শ্বাসনালীতে কোনো প্রকার বাধা থাকলে তা দূর হয়। দিনে অন্তত দুই বার এভাবে গরম পানির ভাপ নিতে পারেন।

ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টি অ্যালার্জিক ওষুধ খেতে পারেন। তবে মনে রাখবেন ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনোভাবেই ওষুধ খাওয়া যাবে না। 

২। ডিসপোজেবল মাস্ক

অনেক সময় এলার্জির কারণে দেখা যেতে পারে নাকের সর্দির সমস্যা। আপনি যদি এলার্জির কারণে সর্দিতে ভুগে থাকেন তবে আপনি ব্যবহার করতে পারবেন ডিসপোজেবল মাস্ক।

এতে অনেকটাই উপকার পাবেন। করোনাসহ সব রকম ভাইরাস থেকে বেচেঁ থাকা সহজ হবে। পাশাপাশি দূর হবে নাকের সর্দির সমস্যা। 

৩। অ্যাপল সাইডার ভিনেগার

আমাদের শরীর সুস্থ রাখতে অ্যাপল সাইডার ভিনেগারের উপকারিতার কথা জানা আছে নিশ্চয়ই! এর রয়েছে অসংখ্য কার্যকারিতা। অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার নিয়মিত খেলে শরীরে উপকার দেখা যাবে চোখে পড়ার মতো।

সর্দির কারণে গলা ব্যথা হলে হালকা গরম পানিতে অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার ও মধু মিশিয়ে পান করতে পারেন। এতে অনেকটাই সুস্থতা অনুভব করবেন।

৪। আদা চা

নাকের সর্দি দূর করার উপায় হিসেবে বিভিন্ন রকমের চা পান করা যেতে পারে। যদি সর্দির কারণে নাক দীর্ঘক্ষণ বন্ধ থাকে তবে আদা ও মধু দিয়ে চা খেতে পারেন। এটি আপনাকে দ্রুত সুস্থ হতে সহায়ক হবে। 

৫। গোল্ডেন মিল্ক

নাকের সর্দি দূর করার উপায় হিসেবে আপনাকে মুক্তি দিতে পারে গোল্ডেন মিল্ক। পরিমাণমতো দুধ এবং কাঁচা হলুদ মিশিয়ে একসঙ্গে ফুটিয়ে নিন।

এবার অল্প পরিমাণ ঠান্ডা করে হালকা গরম থাকা অবস্থায় তা পান করুন। এসব পানীয় আপনার শরীরের ভেতরের ইনফেকশন দূর করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

৬। রসুন খান

রসুন হলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের সর্বোত্তম উৎস যা ইমিউন সিস্টেমকে শ্বেত রক্তকণিকা বৃদ্ধি করতে  সাহায্য করে। এটি অ্যান্টিবডি তৈরিতে সাহায্য করে, যা শ্বাসযন্ত্র সুস্থ রাখে। দিনের মধ্যে অন্তত দুইবার গরম স্যুপে রসুন মিশিয়ে খান। রসুনের ঝাঁঝালো গন্ধ এবং স্বাদ  নাকের সর্দি দূর করার উপায় হিসেবে কাজ  করবে। 

প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য

  • প্রচুর পরিমাণে পানি ও পানি জাতীয় খাবার খাবেন এতে করে মিউকাস নরম হয়ে বেরিয়ে যাবে।
  • মৌসুমী সবজি দিয়ে বানানো স্যুপ খাবেন।
  • লবণ পানি দিয়ে গার্গল করতে পারেন।এতে নাক খোলার সাথে সাথে গরার ভাইরাস ও জীবাণু বের হয়ে যাবে।
  • ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে স্যালাইন দিয়ে নাক পরিষ্কার করতে পারেন।

পরিশেষে

একটু সতর্ক থাকাটা আমাদের সুস্থ থাকার মূল হাতিয়ার।সবসময় পরিষ্কার পরিছন্ন থাকলে ক্ষতিকর যে কোনো রোগ জীবাণুর আক্রমণের সম্ভাবনা কমে যাবে।

আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদেরকে জানালাম নাকের সর্দি দূর করার উপায় সম্পর্কে। বিভিন্ন ঘরোয়া উপায়ে নাকের সর্দির প্রকোপ থেকে বাচাঁর উপায় সম্পর্কে জেনে উপকৃত হবেন। আর্টিকেলটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

নাকের সর্দি সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর/FAQ

১) সর্দি হলে নাক দিয়ে পানি পড়ে কেন?

উত্তর: ঝাল থেকে শ্বাসপ্রশ্বাস প্রক্রিয়াকে রক্ষা করার জন্য এটা নাকের নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। অতিরিক্ত ঠাণ্ডার সময়ও নাকে বাড়তি মিউকাস জমা হয় এবং সেটি বাইরের ঠাণ্ডাকে নিঃশ্বাসে সঙ্গে ফুসফুসে প্রবেশে বাধা দেয়।

২) নাক দিয়ে পানি পড়লে কি করা উচিত?

উত্তর: ফেক্সোফেনাডিন কি নাক দিয়ে পানি পড়া বন্ধ করে? ফেক্সোফেনাডিন, একটি অ্যান্টিহিস্টামিন, অ্যালার্জির কারণে সর্দি নাকের লক্ষণগুলি উপশম করতে সহায়তা করতে পারে। এটি অন্যান্য অ্যালার্জি উপসর্গ যেমন হাঁচি এবং চুলকানি বা জলযুক্ত চোখ উপশম করতে পারে।

৩) নাকের সর্দি কোথায় থেকে আসে?

উত্তর: নাক ও শ্বাসনালির গ্রন্থি দিনে দুই কোয়ার্ট শ্লেষ্মা বা মিউকাস তৈরি করে যা একটা পাতলা স্তর হয়ে নাক ও শ্বাসনালিকে শুকিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। শ্লেষ্মা ফুসফুসকে ময়লা ধূলিকণা, জীবাণু, ধোঁয়া, ভাইরাস ও অন্যান্য বাহ্যিক বস্তু ঢোকা থেকে রক্ষা করে। ঠাণ্ডা বা জীবাণুর আক্রমণে শ্লেষ্মা বা মিউকাস নিঃসরণ বেড়ে যায়।

আরও পড়ুন-

সর্দি কাশির ট্যাবলেট এর নাম, ব্যাবহার ও সতর্কতা

সর্দির ট্যাবলেট এর নাম, সেবনবিধি ও সঠিক চিকিৎসা

Leave a Comment