কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম, সতর্কতা ও সেবনবিধি

কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম

কৃমি মানব দেহের জন্য অনেক ক্ষতিকর পরজীবী যা আমাদের দেহে বাসা বাধে। তবে এই কৃমি আকারে অনেক ছোট হলেও তা মানুষের শরীর থেকে শূন্য দশমিক দুই মিলিলিটার রক্ত শুষে নিতে পারে। তাই প্রত্যেকের কৃমির ট্যাবলেট খাওয়া দরকার।

সুস্থ ব্যাক্তি চার পাঁচ মাস পরপর কৃমির ট্যাবলেট খেলে কোন ক্ষতি হয় না। আজকের আর্টিকেলটি থেকে জানতে পারবেন কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম এবং এর আনুষাঙ্গিক আরও বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে। আপনারা যারা কৃমি রোগে আক্রান্ত তারা এই বিষয়ে সঠিকভাবে জানতে পারবেন।

আবার অনেকের মনে প্রশ্ন থাকতে পারে, তাহলে বাচ্চাদের কৃমির ঔধের নাম কি? কিভাবে খেতে হবে। নিচে শিশুদের কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম ও দেওয়া হলো:

  • দুই থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের টিকা দিবসে টিকা কেন্দ্রে নিয়ে কৃমির ঔষধ খাওয়ানো উচিৎ।
  • প্রতি ৪ থেকে ৬ মাস পরপর কৃমির ঔষধ খাওয়ালে কৃমি সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব।

আরও পড়ুনঃ alatrol এর কাজ কি, ব্যবহার, সতর্কতা ও সেবনবিধি

কৃমি নিরাময়ের জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধ

কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম

Albendzole: বাজারে .Albendzole কে .Alben, Cintel এসব নামে পাওয়া যায়। দুই বছরের বেশি বয়সী শিশুদের জন্য  দুই চামচ সিরাপ ২ ডোজ। ১ বছর থেকে ২ বছর বয়সী শিশুদের জন্য ১ ডোজ। এরপরও যদি সমস্যা মনে হয় তাহলে ৩ সপ্তাহ পর আরো ১ বার খাওয়ানো যাবে।

Levamisol:  বাচ্চার ওজনের ওপর ভিত্তি করে Levamisol দেওয়া হয়। ১ কেজি ওজনের বাচ্চার জন্য 3 mg .Levamisol ডোজ দেওয়া হয়।

Mebendazole:বাজারে Mebendazole কে Meben নামে পরিচিত। এটা মূলত ট্যাবলেট ও সিরাপ আকারে পাওয়া যায়। দুই বছরের বেশি বয়সী শিশুদের জন্য 100 MG করে দিনে ২ বার পরপর ৩ দিন খাওয়াতে হবে ।

কৃমির ঔষধের নাম সমূহ

  • 1.Albendzole(এ্যালবেন্ডজোল)
  • 2.Mebendazole(মেবেন্ডজোল)
  • 3.Praziquantel(প্রাজিকুয়ান্টেল)
  • 4.Ivermectine(ইভারমেক্টিন)
  • 5.Levamisol( লিভোমিসোল)

অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন এতগুলো কৃমির ঔষধের মধ্যে কোন ঔষধ সব চেয়ে ভালো। নিম্নে কিছু ভালো মানের ট্যাবলেটের  নাম দেওয়া হলো:

  • Almex tablet
  • Albezen tablet
  • Ben-A tablet
  • Estazol tablet

কৃমি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় 

কৃমি হলে ভয়ের কিছু নেই। এতক্ষণে আপনারা হয়তো কৃমি দূর করার উপায় জেনে গিয়েছেন, তারপরেও আরও কিছু কৃমি থেকে বাঁচার উপায় পয়েন্ট আকারে বলে দেই আপনাদের সহজে মনে রাখার সুবিবধার্থে।

  • স্যানিটারি পায়খানা ব্যবহার করবেন। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখবেন। খালি পায়ে পায়খানা ব্যবহার করবেন না।
  • পায়খানা ব্যবহার শেষে ভালো করে সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করে ধুয়ে নিবেন। নখের কোণাগুলোর দিকে নজর রাখুন।
  • শিশুর ন্যাপকিন-ডায়াপার বদলানোর পর ভাল করে হাত ধুয়ে নিন।
  • খাবার ও পানি সবসময় পরিষ্কার ও নিরাপদ রাখবেন। দূষিত পানি পান করবেননা, রান্নার কাজেও ব্যবহার করবেননা।
  • থালাবাসন পরিষ্কার করে ধুবেন,  ধোয়ার কাজেও নিরাপদ পানি ব্যবহার করুন।
  • খাওয়ার আগে ও পরে ভাল করে হাত ধুয়ে নিবেন সাবান দিয়ে।
  • আপনারা নিজেদের ও বাচ্চাদের নখ সময় মত কেটে, ছোট রাখুন।
  • রান্নার আগে শাকসবজি পরিষ্কার পানিতে ভালো করে ধুয়ে নিবেন।
  • রান্না করা খাবার সব সময় ঢেকে রাখবেন। খোলা খাবার কখনই খাবেন না।
  • নিজের ও শিশুদের হাতের নখ কাটবেন ও পরিস্কার রাখবেন।
  • খালি পায়ে হাঁটা থেকে বিরত থাকুন।সবসময় সবজায়গায়  জুতা বা স্যান্ডেল ব্যবহার করবেন। 
  •  যেকোনো ধরনের ফল খাবার আগে ভালো  করে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিবেন।
  • বাইরে থেকে বাসায় আসার পর ভালো করে সাবান দিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে নিবেন।
  • বাচ্চাদের কাপড় অন্য জায়গায় সরিয়ে রাখবেন। প্রয়োজনে পানিতে স্যাভলন ব্যবহার করবেন ।
  • নিয়মিত একবার করে গোসল করবেন।
  • পরিষ্কার পরি-চ্ছন্নতা বজায় রাখুন।
  • হেক্সিসল বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করবেন।

কীভাবে বুঝবেন কৃমি হয়েছে

কৃমিতে আক্রান্ত হলে সাধারণত শিশুদের পেট ফুলে যায়। অপুষ্টিতেও ভুগতে থাকে শিশুরা। সেই সাথে প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে পুষ্টির অভাব, রক্তশূন্যতা, আমাশয়, পেট ফাঁপা, পেট কামড়ানো এবং পায়খানার রাস্তায় চুলকানি সহ বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দেয়। এসব লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ওষুধ খেতে হবে।

এজন্য কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে হবে।

কৃমি দূর করার উপায়

প্রতি ৩ মাস পর পর পরিবারের সবাই মিলে কৃমির ঔষধ খাওয়া উচিৎ। ঔষধের ধরণ অনুযায়ী কোন ডোজ কখন খেতে হবে তা চিকিৎসকের কাছে জেনে নিতে হবে। শিশুদের জন্য সিরাপ রয়েছে। শিশুর বয়স যদি ২ বছরের বেশি হয় তবে কৃমির ঔষধ খাওযার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম ও সতর্কতা 

  • শিশু অথবা বড় ,যাদের পেটে কৃমি বেশি, ঔষধ খেলে তাদের বমি বমি ভাব হতে পারে। এছাড়া পেট ও মাথা ব্যথার মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তবে এগুলো বড় ধরনের কোনো সমস্যা না। এসব লক্ষণ খুব বেশি সময় থাকে না।
  •  একই সাথে খালি পেটে কৃমিনাষক ঔষধ না খাওয়া, ঔষধ খাওয়ার পর বেশিক্ষণ রোদে না থাকা, পিটি না করার পরামর্শ দেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
  •   কৃমি পরজীবী হিসেবে মানুষের পেটে বসবাস করে এবং খাবারের অধিকাংশ পুষ্টি খেয়ে ফেলে। এর কারণে শিশুরাই বেশিরভাগ পুষ্টিহীনতায় ভোগে। কৃমি মানুষের অন্ত্র থেকে রক্ত শোষণ করে। এজন্য শিশুরা রক্তশূন্যতার মত রোগেও ভোগে। বদহজম, ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্ট তৈরি করে। এমনকি শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধির ব্যাঘাত ঘটে।
  •  কৃমির খুব বেশি সংক্রমণ মৃত্যুর কারণও হতে পারে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. সামিউল ইসলাম বলেছেন, ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে কৃমি নির্মূলের লক্ষ্যে পাঁচ  থেকে ষোলো বছর বয়সী শিশুদের এক ডোজ কৃমিনাশক ওষুধ বিনামূল্যে খাওয়ানো হবে। একই সঙ্গে কৃমির পুনরায়সংক্রমণ রোধে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও স্যানিটারি পায়খানা ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন করা হবে। তিনি আরও বলেন, পরিচ্ছন্নতা ও স্যানিটারি পায়খানা ব্যবহারে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য শিক্ষা দেওয়ার ফলে তা অভ্যাসে পরিণত হবে।
  •  শিশুর ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য পরিচর্যার ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। যা থেকে ভবিষ্যতে শিশুরা কৃমিসহ অন্যান্য পরজীবীবাহিত রোগব্যাধি থেকেও পরিত্রাণ পায়।

বাচ্চাদের কি ভিটামিন খেতে হয়

বড় হোক বা বাচ্চা ,কৃমির ঔষধ খেলে বমি বা পাতলা পায়খানা হতে পারে।ফাতেমা পারভীন জানান, পেটে অতিরিক্ত কৃমি থাকলে ওষুধ খাওয়ার পর বমি বা পাতলা পায়খানা হতে পারে। সারাদেশে প্রতিবছর  দুই কোটি শিশুকে  দুইবার ভিটামিন এ ক্যাপসুল ও ১ কোটি ৯০ লাখ শিশুকে কৃমির ঔষধ খাওয়ানোর কর্মসূচি পালন করা হয়।

কৃমি যেভাবে ছড়ায়

প্রাণীদেহে কৃমি হচ্ছে পরজীবী প্রাণী। কৃমির একমাত্র খাবার হচ্ছে রক্ত। কৃমির সাধারণত আমাদের শরীরে প্রবেশ করে খাবার গ্রহনের মাধ্যমে। কৃমি খাবার, পানি, বাতাস, টয়লেটের কমোড, বাথরুমের দরজা, দরজার হ্যান্ডেল,পশুর লালা, বিড়াল ,গরু ও কুকুরের পশম ইত্যাদি জায়গায় থাকে।

কৃমির এই ডিম গুলো আমাদের খাবার গ্রহণের মাধ্যমে আমাদের দেহে প্রবেশ করে। আমাদের দেহের সংক্রমণ বাড়ায়, বংশবৃদ্ধি করে, দেহের অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে।

পরিশেষে

কৃমির ঔষধ খাওয়ার মাধ্যমে কৃমি সংক্রমণ থেকে নিস্তার পাওয়া সম্ভব। তবে, কৃমির ঔষধ খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে জানতে পারলাম কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম কৃমির রোগ কিভাবে ছড়ায়, কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়,এর কি কি লক্ষণ রয়েছে এবং আরো বিস্তারিত অনেক কিছু পোষ্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এ ধরনের স্বাস্থ্য সচেতনতা মূলক আরো আর্টিকেল পড়তে আমাদের সাথে থাকুন।

কৃমির ট্যাবলেট সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর/FAQ

১। কৃমির ঔষধের নাম কী?

উত্তর: কৃমির ঔষধের অনেক নাম আছে। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত কৃমির ঔষধের মধ্যে রয়েছে Almex tablet, Albezen tablet, Ben-A tablet ইত্যাদি।

২। কৃমির ঔষধ কখন খাওয়া উচিত?

উত্তর:  কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম হলো কৃমির ঔষধ সাধারণত প্রতি ৩ মাস পরপর খাওয়া উচিত। তবে, কৃমির সংক্রমণ বেশি হলে বা জটিল লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কৃমির ঔষধ খাওয়া উচিৎ।

৩। কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম কী?

উত্তর: কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম নির্ভর করে ঔষধের ধরণ এবং রোগীর বয়স ও ওজনের ওপর। সাধারণ কিছু কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম :

  • অ্যালবেনডাজল: 150mg বড়ি বা 5mg  সিরাপ, একবারে খাওয়া।
  • মেবেনডাজল: 100mg বড়ি বা 5mg সিরাপ, ৩ দিন পরপর ৩দিন খাওয়া।
  • প্যারামেকসামিন: 100mg বড়ি বা 5mg সিরাপ, ৩ দিন পরপর ২ দিন খাওয়া।

আরও পড়ুন-

বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার ওষুধের নাম ও সেবনবিধি

টাইফয়েড এর লক্ষণ সমূহ, প্রতিকার ও চিকিৎসা পদ্ধতি

Leave a Comment