কিসমিস খাওয়ার অপকারিতা
কিসমিস আমাদের অনেকেরই প্রিয় খাবার। কিসমিসে যেমন পুষ্টিগুন আছে তেমন অপকারিতা ও আছে।
তাই আমরা জানবো কিসমিস খাওয়ার অপকারিতা কি। কিসমিস সাধারণত মিষ্টি খাবার তৈরি করতে আমরা ব্যবহার করি।
এই কিসমিশের অনেক উপকারিতা থাকলেও বেশি পরিমান খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়।
এই নিবন্ধে আমরা জানাবো বেশি কিসমিস খেলে আমাদের শরীরে কি ধরনের ক্ষতি হয় এবং কিসমিস খাওয়ার অপকারিতা কি।
কিশমিশের উপকারিতা ও অপকারিতা, পুষ্টিগুণ, সেবনের নিয়ম ও কতটুকু খেতে হবে, কিশমিশের অপকারিতা, ভেজানো কিসমিস খাওয়ার নিয়ম, প্রতিদিন কতটি কিসমিশ খাওয়া উচিত সবই এই এই আর্টিকেলে আলোচনা করবো।
আরও পড়ুনঃ ঘি এর উপকারিতা, ঘি খাওয়ার নিয়ম ও পুষ্টিগুণ
কিসমিসের পুষ্টি উপাদান

মানবদেহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান গুলো কিসমিসের মধ্যে অনেক বেশি বিদ্যমান রয়েছে ফলে উপকারের পাশাপাশি কিসমিস খাওয়ার অপকারিতা অনেক। বিশেষজ্ঞদের মতে,
প্রতি ১০০ গ্রাম কিসমিসে রয়েছে-
- এনার্জি ৩০৪ কিলোক্যালরি,
- কার্বোহাইড্রেট ৭৪.৬ গ্রাম,
- ডায়েটরি ফাইবার ১.১ গ্রাম,
- ফ্যাট ০.৩ গ্রাম,
- প্রোটিন ১.৮ গ্রাম,
- ক্যালসিয়াম ৮৭ মিলিগ্রাম,
- আয়রন ৭.৭ মিলিগ্রাম,
- পটাসিয়াম ৭৮ মিলিগ্রাম
- সোডিয়াম ২০.৪ মিলিগ্রাম।
এর প্রত্যেকটি উপাদানই আমাদের দেহ ও সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন এবং অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
কিসমিসের খাওয়ার ক্ষতিকর দিক
কিসমিস অতিরিক্ত খেলে আমাদের শরীরে যে সমস্যা গুলো হয় তা নিম্নে আলোচনা করা হলো।আজ আমরা জানবো কিসমিস খাওয়ার অপকারিতা গুলো কি কি।
১। অতিরিক্ত শর্করা ও ক্যালোরি
কিসমিস অত্যন্ত মিষ্টি এবং ক্যালোরি সম্পন্ন হতে পারে। অতিরিক্ত খাবার কনসামপশনের কারণে ওজন বৃদ্ধি হতে পারে এবং ডায়াবেটিস বা হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি হতে পারে।
২। ফাইবারের অধিক খাবার
কিসমিসে ফাইবারের পরিমাণ অনেক বেশি থাকতে পারে, ফলে প্রচুর পরিমানে কিসমিস খেলে বদহজমের সমস্যা এবং পাচন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
৩। এলার্জির ঝুঁকি
কিছু মানুষের দেহে কিসমিসে সংবেদনশীলতা বা এলার্জি হতে পারে, যা ত্বকে ফুসকুড়ি বা চুলকানির জন্য কারণ হতে পারে।
৪। শারীরিক অসুস্থতা
অতিরিক্ত কিসমিস খাওয়ার দরুন প্রায় প্রতিদিনের খাবারের সঙ্গে একই পরিমাণে অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার কিছুটা বাদ দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
৫। ডায়বেটিস রুগীর অসুখ বৃদ্ধি
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কিসমিস কোনভাবেই খাওয়া উচিত না। ডায়বেটিস রুগীরা কিসমিস খেলে ডায়াবেটিস বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৬। কোষ্ঠকাঠিন্য বৃদ্ধি
কিসমিসে অনেক বেশি ফাইবার থাকে তাই অতিরিক্ত কিসমিস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়।
৭। দাতের ক্ষতি
কিসমিসে চিনির পরিমাণ বেশি থাকে তাই কিসমিস খেলে দাতে ক্ষতি হয়।কিসমিস খাওয়ার পরে অবশ্যই দাত ব্রাশ করা উচিত।
কিসমিস একটি সম্পূর্ণ পুষ্টিযুক্ত খাবার। তবে এর অতিরিক্ত খাবার সম্পদ অস্বাস্থ্যকর হতে পারে এবং কিছু মানুষের জন্য এর সাথে সংঘটিত এলার্জির ঝুঁকি রয়েছে। তাই সঠিক পরিমাণে এবং উপযুক্ত পরমানে কিসমিস খাওয়া উচিত।
কিসমিস খাওয়ার নিয়ম
অনেক সময় কিসমিস খাওয়ার অপকারিতা বেশি হতে পারে তাই আমাদের জানতে হবে কিসমিস কি পরিমান খেতে হবে। আপনি চাইলে প্রত্যেকদিনের নি্ম্নলিখিত খাদ্য তালিকায় কিসমিস নিয়মিত এড করতে পারেন।
- নিয়মিত শুকনো কিসমিস খেতে পারেন।
- ফলের সালাদের সাথে কিসমিস মিশিয়ে খাওয়া যায়।
- রোজ সকালে খালি পেটে কিসমিস খাওয়া যায়।
- মিষ্টি জাতীয় খাবারে চিনির পরিবর্তনে কিসমিস দেওয়া যেতে পারে।
- পানিতে ভিজিয়ে কিসমিস খাওয়া যেতে পারে।
- সকালের নাস্তা ওটসের সাথে কিসমিস মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
- ব্রকলি, গাজরের সাথে মিশ্রণ করে কিসমিস খাওয়া যায়।
সকালে খালি পেটে কিসমিস খাওয়ার নিয়ম
উপরের আলোচনা থেকে আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি মানবদেহে কিসমিস খাওয়ার অপকারিতা। যাইহোক, কিসমিস থেকে পুষ্টিগুন পেতে হলে সকালে খালি পেটে খাওয়া হলে ভেজানো কিশমিশ সবচেয়ে কার্যকর নইলে কিসমিস খাওয়ার অপকারিতা বেশি হবে।
এটি করতে রাতে এক গ্লাস পানিতে কিছু কিসমিস ভিজিয়ে রাখুন। সকালে খালি পেটে ওই ভিজানো কিশমিশ খান এবং গ্লাসের পানি পান করুন।
এটি নিয়মিত করার মাধ্যমে, আপনি আপনার স্বাস্থ্যের উপর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব দেখতে পাবেন। সকালে খালি পেটে কিসমিস খেলে অনেক পরিমানে কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা পাওয়া যায়।
প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত
কিসমিসের পুষ্টিগুন অনেকটাই বেশি। তাই প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমান কিসমিস খাওয়া উচিত। সঠিক পরিমান কিসমিস না খেলে কিসমিস খাওয়ার অপকারিতা বেশি হতে পারে। মাত্রাতিরিক্ত কিসমিস খেলে শরীরের জন্য ক্ষতি হতে পারে।
কিসমিসে থাকা প্রোটিন, ফাইবার, আয়রন, ভিটামিন-বি৬ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকার তবে বেশি খাওয়া ক্ষতি। প্রতিদিন নিয়মিত আমাদের ৪০ থেকে ৫০ গ্রাম কিসমিস খাওয়া উচিত।
কিসমিসের উপকারিতা
কিসমিস খাওয়ার অপকারিতা কি এই বিষয়ে যেমন আমাদের জানা জরুরী ঠিক তেমনই জানা দরকার কিসমিশের খাওয়ার উপকারীগুলোও। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে, রক্তশূন্যতা দূর করতে, হজমের উন্নতি, রোগ প্রতিরোধ, যৌন স্বাস্থ্য রক্ষা, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদিতে কিশমিশের অনেক উপকারিতা রয়েছে।
১। রক্তের ঘাটতি দূর করে
রক্তস্বল্পতার চিকিৎসায় কিশমিশ খুবই উপকারী। পরিমিত পরিমাণে কিশমিশ নিয়মিত সেবন রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে কারণ এতে আয়রন রয়েছে। এতে তামাও রয়েছে। এটি রক্তে লোহিত কণিকা তৈরি করতে সাহায্য করে। এর জন্য নিয়মিত ৩০-৪০ গ্রাম কিশমিশ খেতে পারেন।
২। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করুন
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে প্রাকৃতিক খাদ্য উপাদানের মধ্যে কিশমিশের রয়েছে অনেক উপকারিতা। এতে থাকা পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
রক্ত সঞ্চালন প্রচার করে এবং হেমাটোপয়েটিক ক্ষমতা উন্নত করে, রক্তচাপ অনেকাংশে কমানো যেতে পারে। এজন্য নিয়মিত ৩০-৪০ গ্রাম কিশমিশ খেলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
৩। কিশমিশ হজমশক্তি বাড়ায়
সুস্থ থাকার জন্য একটি ভালো পরিপাকতন্ত্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে কিশমিশ আমাদের হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। প্রতি রাতে এক গ্লাস পানিতে কিছু কিসমিস ভিজিয়ে রাখুন। পরদিন সকালে ওই কিসমিস খান।
৪। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
কিশমিশের উপকারিতা নিয়মিত কিশমিশ খেলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয়। এটি করার জন্য, ভেজা কিসমিস খান এবং নিয়মিত পানিতে কিশমিশ ভিজিয়ে রাখুন। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে।
৫। শরীরের ডিটক্সিফিকেশন
নিয়মিত কিশমিশ খাওয়ার অভ্যাস শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে। সকালে খালি পেটে কিশমিশ ভিজিয়ে খেলে শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের হয়ে যায়। কিসমিস-মিশ্রিত পানি পান করলে অতিরিক্ত উপকার পাওয়া যায়।
৬। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
অল্প পরিমাণে কিশমিশ খাওয়া ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কারণ কিশমিশের গ্লাইসেমিক সূচক কম থাকে, তাই তারা ইনসুলিনের প্রতিক্রিয়া উন্নত করতে সাহায্য করে।
গ্লাইসেমিক ইনডেক্স একটি নির্দিষ্ট খাদ্য উপাদান। এতে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকে। এটি রক্তে শর্করার বৃদ্ধির সাথে লড়াই করে।
আমরা যে সমস্ত চিনিযুক্ত খাবার খাই তাতে কিসমিস যোগ করলে তা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে এবং খাবারে স্বাদ যোগ করবে। কিন্তু ডায়াবেটিস রোগীদের ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী কিসমিস খাওয়া উচিত।
শেষ কথা
উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে সবাই কিসমিস খাওয়ার অপকারিতা কি ও ব্যবহার বিধি সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেয়েছেন।
যদিও কিশমিশের ক্ষতিকারক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। তবে নিয়মিত অল্প পরিমাণে খেলে আপনি উপকার পাবেন।
কিসমিস সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ
১। কিসমিস খেলে কি ক্ষতি হয়?
উত্তরঃ কিসমিস বেশি খেলে ডিহাইড্রেশন, বদহজম এবং পেট সংক্রান্ত অন্যান্য সমস্যা হতে পারে। ত্বকের অ্যালার্জি- কিশমিশ খাওয়া কিছু মানুষের অ্যালার্জির সমস্যাও হতে পারে।
২। কিশমিশ খেলে কি মোটা হয়?
উত্তরঃ ওজন বৃদ্ধির জন্য প্রতিদিন সব মিলিয়ে ছোটো একমুঠো কিশমিশ খাওয়াই যায়, তবে শুধুমাত্র কিশমিশ খেলেই কিছু ওজন বাড়ে না।
৩। প্রতিদিন কি পরিমান কিসমিস খাওয়া উচিত?
উত্তরঃ পুষ্টিবিদদের মতে, দিনে ৪০ থেকে ৫০ গ্রাম কিসমিস খাওয়া যায়।
আরও পড়ুন-
খাঁটি মধু চেনার উপায়, কৌশল ও সঠিক পদ্ধতিসমুহ
লবঙ্গের উপকারিতা ও অপকারিতা, লবঙ্গ খাওয়ার নিয়ম