আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম, উপকারিতা ও চিকিৎসা

আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম

গর্ভবতীর আযরনের চাহিদা মেটানো খুব গুরুত্বপূর্ণ গর্ভের শিশুর সঠিক বিকাশ ও সুস্থ প্রসাবের জন্য। গর্ভাবস্থায় শরীরে আয়রনের চাহিদা অনেকটা বেড়ে যায়। গর্ভাবস্থায় আয়রন ট্যাবলেটের পাশাপাশি আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া জরুরি। তাই আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে সঠিক তথ্য সকলের জানা উচিত।

আয়রন ট্যাবলেট অনেক নারীর কার্মোদ্দীপনা এবং শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখার জন্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। এই উপাদানের অভাবে মাথাব্যথা, শ্বাস প্রশ্বাসের ক্রটি, মাথা ঝিমঝিম করা, দুর্বলতা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়।

এছাড়া মেজাজ খিটমিটে, অনাগ্রহ এবং অমনোযোগী এই সমস্যা হতে পারে। তাই ছোট থেকে খেয়াল রাখতে হবে শিশুর যেন আয়রনের ঘাটতি না দেখা দেয়। আর যথেষ্ট পরিমাণ আয়রণ গ্রহণ করা প্রয়োজন একজন সুস্থ নারীর জন্য।

উদ্ভিজ্জ এবং প্রাণিজ দুই ধরণের খাবার থেকে আয়রন পাওয়া যায়। উদ্ভিজ্জ খাবার থেকে আয়রন গ্রহণ করার জন্য বিভিন্ন ধরণের কচু, মটরজাতীয় খাবার, রঙিন ফলমূল,পালংশাক, কলা, কচুশাক ইত্যাদি রয়েছে।

প্রাণীজ আয়রনের মধ্যে রয়েছে মাছ, মাংস, যকৃৎ ইত্যাদি আয়রনের ভালো উৎস। তাছাড়া আয়রনের চাহিদা পূরণ করে থাকে দুধ, ডাল ও শস্যজাতীয় খাবার। মাসিকের সময় আয়রনের খাবার খাওয়া অনেক জরুরি।

আজকের আর্টিকেলে আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হল।  

আরও পড়ুনঃ ডায়াবেটিসের লক্ষণ, প্রতিরোধে করনীয় ও চিকিৎসা

আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার উপকারিতা 

আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম

আমরা লৌহর পরিপূরক গ্রহণ করি যখন আমাদের শরীরে বা রক্তে আয়রনের ঘাটতি দেখা দেয়। আয়রন ট্যাবলেটের অনেক উপকারীতা রয়েছে। আয়রন সাপ্লিমেন্ট বিশেষভাবে উপকারী যাদের শরীরে রক্তের মাত্রা কম। 

চুলের সমস্যার সমাধান 

আমাদের চুলের বিভিন্ন সমস্যা হয় আয়রনের ঘাটতি দেখা দিলে। আরোও অনেক সমস্যা রয়েছে চুলের বৃদ্ধির পাশাপাশি। এই সমস্যাটির চিকিৎসা করতে হবে আয়রন সম্পূরক গ্রহণ করে। 

আমিসের অভাব পূরণ করে  

আমরা অনেকেই আমিষ খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছি। আয়রন ট্যাবলেট খেতে হবে যারা আমিস খাওয়া অপছন্দ করে। তবে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে আয়রন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে হবে। 

মেয়েদের মাসিক ও গর্ভকালীন সময়ে

আয়রনের ঘাটতি অনুভব করে যে মেয়েদের মাসিক হয় বা যারা গর্ভবতী হয়। ফলস্বরুপ দুধ, ডিম, পালংশাক, মাছ,ইত্যাদি আয়রন সমৃদ্ধ খাবার অথবা আয়রন সাপ্লিমেন্ট নিতে হতে পারে। 

শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে

আমাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতির কারণে শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। আয়রন সাপ্লিমেন্ট নিতে হবে আয়রনের ঘাটতি পূরণের জন্য।

আয়রন ট্যাবলেটের কাজ কি

হিমোগ্লোবিন প্রয়োজন হয় রক্তের হিম উপাদান তৈরির জন্য। হিমোগ্লোবিন অক্সিজেন বিতরণ করে থাকে আমাদের সারা শরীরে। হিমোগ্লোবিনের কার্যকারীতা হ্রাস করে আয়রনের ঘাটতি দেখা দিলে। এনজাইম একটি উপাদান হিসাবে ব্যাবহার করে অক্সিডেশন- হ্রাস প্রক্রিয়া অনেক ইনজাইম।  

গর্ভাবস্থায় আয়রন ট্যাবলেট এর উপকারিতা 

গর্ভকালনি সময়ে আয়রনের চাহিদা বেড়ে যায় মেয়েদের শরীরে। গর্ভবতী মা এবং গর্ভের শিশুর দেহে বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে আয়রনের চাহিদা সঠিকভাবে পূরণ করতে না পারলে। সঠিকভাবে আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম জেনে তারপরেই খেতে হবে।

অনেক সময় রক্তশূন্যতা দেখা দেয় গর্ভবতী মায়েদের আয়রনের অভাবে। আয়রনের অভাবে যেসব রক্তশূন্যতা দেখা দেয় তা আলোচনা করা হলো:

১। ক্লান্তি অনুভাব করা।

২। শরীরে শক্তি কমে যাওয়া অথবা দুর্বল লাগা।

৩। শ্বাস নিতে হাঁপিয়ে উঠা

৪। বুক ধরফড় করা

৫। ত্বক ফ্যাকশে হয়ে যাওয়া।  

আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম – অপকারিতা

১। পিকা নামের একটি সমস্যা তৈরি হতে পারে আয়রনের অভাবজনিত রক্তশূন্যতা থেকে। এ সমস্যা হলে খাবার নয় এমন কিছু খাওয়ার ইচ্ছা হয়। যেমন: দেয়ালের রঙ, কাগজ অথবা মাটি ইত্যাদি। ডাক্তারের পরমর্শ নিতে হবে এমন সমস্যা দেখা দিলে। 

২। গর্ভকালীন রক্তশূন্যতা মা ও শিশুর মৃত্যু ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। 

৩। গর্ভের শিশুর গঠন ও বিকাশ বাধাগ্রস্থ হয় পর্যাপ্ত আয়রনের অভাবে। 

৪। গর্ভবতী মায়ের আয়রনের অভাবে গর্ভের বাচ্চা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই জন্ম নেয়। 

৫। জন্মের সময় বাচ্চার ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম হয়ে থাকে। 

৬। শিশুর বুদ্ধিবৃত্তিক আচারণগত এবং স্বাভাবিক ব্যবহারগত ও ব্যাবহারগত বিকাশ বাধাগ্রস্থ হয়। 

৭। শিশুর শরীরে আয়রনের পরিমাণ কমে যায়।

আয়রনের অভাবে শরীরে যেসব পরিবর্তন ঘটে 

১। আয়রনের অভাবে শ্বাসকষ্টের রোগীদের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায় এবং শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হয়।

২। আয়রনের অভাবে হজমের সমস্যা দেখা দেয়।

৩। আইরনের অভাবে রক্তে সুগারে ঘাটতি দেখা যায়। 

৪। শরীরে রক্ত কমে যায় বা শরীরে রক্ত তৈরি হয় না। 

শেষকথা

আইরনের ঘাটতি দেখা দিলে শরীরে নানা ধরণের সমস্যা দেখা দেয়। তাই নিয়মিত আইরুন সম্বৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে হবে অথবা আইরন ট্যাবলেট খেতে হবে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম মেনে খেতে হবে।

আয়রন ট্যাবলেট সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ

১। আয়রন ট্যাবলেট কেন খেতে হয়?

উত্তরঃ গর্ভের শিশুর সঠিক বিকাশ ও সুস্থ প্রসবের জন্য গর্ভবতীর আয়রনের চাহিদা মেটানো খুব গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় শরীরে আয়রনের চাহিদা অনেকটা বেড়ে যায়। এই বাড়তি চাহিদা মেটাতে গর্ভাবস্থায় আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত আয়রন ট্যাবলেট সেবন করা জরুরি।

২। রক্তস্বল্পতা হলে দিনে কতটুকু আয়রন খাওয়া উচিত?

উত্তরঃ প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে আয়রনের ঘাটতির জন্য একটি সাধারণ জেনেরিক পদ্ধতির দৈনিক ডোজ 150-200 মিলিগ্রাম মৌলিক আয়রন থাকে। এই পদ্ধতিতে প্রতিদিন 3 বার একটি ফেরাস সালফেট ট্যাবলেট নির্ধারণ করা প্রয়োজন কারণ প্রতিটি ট্যাবলেটে প্রায় 60 মিলিগ্রাম এলিমেন্টাল আয়রন থাকে।

৩। আয়রন কখন খাওয়া উচিত সকালে না রাতে?

উত্তরঃ খালি পেটে আয়রন সবচেয়ে ভালো শোষিত হয়, কিন্তু পরিপূরক খাবার পেট খারাপ করতে পারে। পরিপূরক গ্রহণ, একটি বিভক্ত ডোজে সকাল এবং সন্ধ্যায় বা প্রতি দ্বিতীয় দিন শুরু করতে, অল্প পরিমাণে খাবারের সাথে আপনাকে এটি এড়াতে সহায়তা করতে পারে।

আরও পড়ুন-

ডায়াবেটিস কি খেলে ভালো হয় ও খাবারের তালিকা

১ মাসে চুল ঘন করার উপায় ও চুলের যত্নে করনীয়

Leave a Comment