গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা
গর্ভাবস্থার শুরু থেকে সন্তান প্রসব হওয়ার সময়কাল ৯ মাস। গর্ভকালীন এই ৯ মাসকে চিকিৎসকরা তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন।
- প্রথম ট্রাইমেস্টার (১-১৩ সপ্তাহ) অর্থাৎ ১-৩ মাস।
- দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টার (১৪-২৭ সপ্তাহ) অর্থাৎ ৪-৬ মাস।
- তৃতীয় ট্রাইমেস্টার (২৮-৪২ সপ্তাহ) অর্থাৎ ৭-৯ মাস।
প্রথম ট্রাইমেস্টার হিসেব করা হয়, গর্ভবতী হওয়ার আগে শেষ পিরিয়ডের প্রথম দিন থেকে। গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভপাতের আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। অর্থাৎ প্রথম তিন মাস অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়াও গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে সকালের অসুস্থতা (Morning sickness), মেজাজের পরিবর্তন (Mood swing) এবং ক্লান্তি অনেক বেড়ে যায়।
তাই এই সময় গর্ভবতী মাকে অনেক বেশি যত্নে রাখতে হবে তার শারীরিক এবং মানসিক ক্ষেত্রে। শারীরিকভাবে সুস্থ রাখার জন্য সঠিক খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন। গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের সঠিক খাবার গ্রহণ মায়ের সুস্থতা এবং সন্তানের সুস্থতার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে মায়ের খাবার তালিকায় সুষম খাবার বেশি পরিমাণে রাখতে হবে। কারণ সুষম খাবার ভ্রুণের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ নিশ্চিত করে। এছাড়াও গর্ভকালীন জটিলতাগুলো হ্রাস করতে সাহায্য করে এবং মায়ের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।
খেয়াল রাখতে হবে যেন ক্যালসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি-১২, ওমেগা-৩ এগুলোর অভাব না হয় মায়ের। কারণ শিশুর ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানোর জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত পুষ্টির। আজকের আর্টিকেলের আলোচ্য বিষয়, গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা সম্পর্কে।
আরও পড়ুনঃ গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কত দিন পর বোঝা যায়
গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা – বর্ণনা

গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা এমন হওয়া উচিত যেন তা ভ্রুনের সুস্থ বৃদ্ধি এবং বিকাশ নিশ্চিত করে। গর্ভে থাকাকালীন সন্তান সম্পূর্ণ চাহিদা তার মায়ের থেকে পূরণ করে। তাই বলা চলে, মা সুস্থ হলে সন্তান সুস্থ।
এই সময় মায়ের শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকা অত্যন্ত জরুরী। নিচে গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবারের একটি তালিকা বর্ণনা করা হলো :
ফলিক অ্যাসিড
ফলিক এসিড হচ্ছে এক ধরনের বি ভিটামিন (ভিটামিন বি-৯)। ইতিমধ্যেই আমরা জেনেছি, গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। সঠিক পরিমাণে ফলিক এসিড গ্রহণ করলে গর্ভপাতের এই সম্ভাবনা প্রায় ৭০% কমে যায়।
এছাড়াও ফলিক এসিড গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুরজ্জু গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকায় ফলিক এসিড অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। একজন গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিন ৬০০ মাইক্রোগ্রাম বা ০.৬০ মিলিগ্রাম ফলিক অ্যাসিড প্রয়োজন।
তবে প্রয়োজনের পুরোটা ফলিক এসিড খাবার থেকে পাওয়া অনেক কঠিন। এইজন্য খাবার খাওয়ার পাশাপাশি প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০০ মাইক্রোগ্রাম বা ০.৪০ মিলিগ্রাম ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট গ্রহণ করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকগণ।
ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার
- বিভিন্ন প্রকার শাকে ফলিক অ্যাসিড পাওয়া যায়। যেমন : পালং শাক, পাট শাক, কচু শাক, পুঁই শাক, সজনে পাতা, মেথি শাক, সবুজ ডাটা শাক, নটে শাক, লাউ শাক এবং মূলা শাক।
- সবজি যেমন : মটরশুঁটি, ফুলকপি, বরবটি, ঢেঁড়স, শিম, ব্রকলি এবং বাঁধাকপিতে ফলিক এসিড পাওয়া যায়।
- ফলিক এসিড বিভিন্ন ধরনের ডালে পাওয়া যায়। যেমন : ছোলার ডাল, মুগ ডাল এবং মাসকলাই ডাল।
- ফলমূল যেমন : কমলা, স্ট্রবেরী, মাল্টা, পাকা কলা, অ্যাভোকাডো ইত্যাদি।
- আখরোট, পেস্তা বাদাম, ডিম, চিয়া সিড, সূর্যমুখী বীজ, শতমূলী, লিভার (প্রাণীর যকৃত), সাদা চাল ইত্যাদি খাবারেও ফলিক অ্যাসিড বিদ্যমান।
ভিটামিন সি
গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকায় ভিটামিন সি অন্যতম। ভিটামিন সি ক্রমবর্ধমান শিশুর হাড় এবং টিস্যু বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়া দাঁত এবং মাড়ির বিকাশের জন্য ভিটামিন সি অনেক কার্যকরী। গর্ভবতী মায়ের দৈনিক ৮৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি গ্রহণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, বেশিক্ষণ রান্না করলে ভিটামিন সি এর পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়।
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার
- বিভিন্ন ধরনের ফলে (মূলত টক ফল) ভিটামিন সি রয়েছে। যেমন : লেবু, পেয়ারা, আমলকি, আমড়া, জাম্বুরা, জলপাই, জাম, কমলা, মাল্টা ইত্যাদি ।
- শাকসবজি যেমন : লাল এবং সবুজ ক্যাপসিকাম, ব্রকলি, কাঁকরোল ইত্যাদি।
- কাঁচা মরিচ এবং ধনিয়া পাতা।
ক্যালসিয়াম
ক্যালসিয়াম শিশুর দাঁত এবং হাড়ের বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। গর্ভবতী মায়ের শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দিলে গর্ভস্থ শিশু তার মায়ের হাড় থেকে ক্যালসিয়াম সরবরাহ করবে। যার ফলে মায়ের দেখা দিবে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি জনিত সমস্যা।
চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকায় ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারের পাশাপাশি ১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে হবে।
ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার
- দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবার। যেমন : টক দই এবং পনির।
- বিভিন্ন ধরনের মাছ। যেমন : রুই, কাতলা, টাকি, পুটি, টেংরা, ভেটকি, রূপচাঁদা, চিংড়ি, চাপিলা ইত্যাদি। তবে কাঁটাসহ ছোট মাছ খেলে তুলনামূলক বেশি ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।
- বিভিন্ন ধরনের শাক। যেমন : লাল শাক, পুইশাক, সবুজ ডাটা শাক, কচু শাক, সজনে পাতা, মেথি শাক ইত্যাদি।
- বিভিন্ন ধরনের বীজ। যেমন : সরিষা, তিল ও তিসির বীজ।
- শস্যদানা যেমন : গম, যব, কাউন ও চিরা।
- টফু এবং সয়াবিন।
ভিটামিন ডি
ভিটামিন ডি শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, সুস্থ দাঁত এবং হাড়ের বিকাশ এবং শিশুর স্বাভাবিক কোষ বিভাজনে ভূমিকা রাখে। শিশুর বুদ্ধি বিকাশে ভিটামিন ডি সাহায্য করে। এটি আমাদের শরীরে ফসফেট এবং ক্যালসিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকায় প্রথম থেকেই ভিটামিন ডি গ্রহণ করা জরুরী।
ভিটামিন ডি এর প্রধান উৎস সূর্যের আলো। আমাদের ত্বক সূর্যের আলোতে বিদ্যমান অতিবেগুনী রশ্মি ব্যবহার করে ভিটামিন ডি প্রস্তুত করে। গর্ভবতী মায়ের উচিত কমপক্ষে ৩০ মিনিট প্রতিদিন সরাসরি সূর্যের আলোতে থাকা।
তবে জামাকাপড় দিয়ে শরীর ঢাকা থাকার কারণে অনেক সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ডি তৈরি হয় না। যার কারণে সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ভিটামিন ডি ট্যাবলেট সেবন করার প্রয়োজন হয়।
ভিটামিন ডি জাতীয় খাবার
- বিভিন্ন ধরনের মাংস, ডিম।
- বিভিন্ন ধরনের মাছ যেমন : রুই, কাতলা, মৃগেল ও তেলাপিয়া।
- ফর্টিফাইড ভোজ্য তেল।
আয়রন
গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকায় আয়রন জাতীয় খাবার রাখতে হবে। আয়রন শিশুর বিকাশে সাহায্য করে এবং প্রসবকালে রক্তপাতের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। এছাড়া আয়রনের ঘাটতি থাকলে শরীরে যথেষ্ট পরিমাণ অক্সিজেন পায় না। শরীরে আয়রন শোষণ বৃদ্ধি করে ভিটামিন সি। তাই আয়রনযুক্ত খাবারের সঙ্গে ভিটামিন সি যুক্ত খাবারও খেতে হবে।
আয়রন জাতীয় খাবার
- গরু এবং খাসির মাংস (Red meat), ডিম।
- বিভিন্ন ধরনের মাছ। যেমন : কাচকি, মলা, চাপিলা, টেংরা, শিং ইত্যাদি।
- বিভিন্ন ধরনের বীজ। যেমন : মিষ্টি কুমড়া, সূর্যমুখী, পদ্ম, তিল, তিসি, সরিষা, সয়াবিন ইত্যাদির বীজ।
- বিভিন্ন ধরনের শস্যদানা। যেমন : লাল চাল, যব, ভুট্টা, কাউন, চিড়া ইত্যাদি।
- শুকনো ফল (Dry fruits) এবং বাদাম। যেমন : চিনাবাদাম, পেস্তাবাদাম, আখরোট, খেজুর ও নারিকেল (শুকনো)।
- বিভিন্ন ধরনের শাক। যেমন : লাল শাক, ডাটা শাক, পাট শাক, মূলা শাক, লাউ শাক, পুঁই শাক, মালঞ্চ শাক ইত্যাদি।
- সবজির মধ্যে রয়েছে আলু, ব্রকলি, মাশরুম এবং মটরশুটি।
- বিভিন্ন ধরনের ডাল। যেমন : মুগ, মসুর, মটর, ছোলা ও মাসকলাই।
- দুধ এবং পনির।
ভিটামিন এ
গর্ভস্থ শিশুর ফুসফুস, হৃদপিণ্ড, কিডনি ও স্নায়ুতন্ত্র গঠন এবং চোখের সুস্থতা রক্ষায় সাহায্য করে ভিটামিন এ। গর্ভবতী মায়ের ভিটামিন এ এর অভাব হলে শিশুর নানা রকম জটিলতা দেখা দেয়। তাই মা শিশুর সুস্থতা রক্ষায় ভিটামিন এ খুবই জরুরী।
ভিটামিন এ জাতীয় খাবার
- দুধ এবং দুদ্ধজাত খাবার। যেমন: দই এবং পনির।
- সবুজ, লাল ও হলুদ সবজি। যেমন : মিষ্টিকুমড়া, মিষ্টি আলু, গাজর, লাল শাক, কচু শাক ও পালং শাক।
- রঙিন ফল। যেমন : পাকা পেঁপে, আম, তাল, ডেওয়া ও বাঙ্গি।
- তৈলাক্ত মাছ এবং ডিম।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : মাছের তেল এবং কলিজায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ আছে। সাধারণ অবস্থায় এই খাবারগুলো খাওয়া গেলেও গর্ভাবস্থায় না খাওয়াই উত্তম। এতে করে শিশুর ক্ষতি হতে পারে। গর্ভবতী মা অতিরিক্ত ভিটামিন এ সেবন করলে শিশুর চোখ, হৃদপিণ্ড, ফুসফুস এবং মাথার খুলির মতো অঙ্গে জন্মগত ত্রুটি হতে পারে।
অতিরিক্ত ভিটামিন এ সেবন করলে শিশুর চোখ, হৃদপিণ্ড, ফুসফুস এবং মাথার খুলির মতো অঙ্গে জন্মগত ত্রুটি হতে পারে।
আমিষ বা প্রোটিন
গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকায় অবশ্যই প্রোটিন রাখতে হবে। প্রোটিন ভ্রুণের সঠিক বিকাশের জন্য কার্যকরী। এছাড়াও প্রোটিন মায়ের স্তন কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি করে। গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিন প্রায় ৭০-১০০ গ্রাম প্রোটিনের প্রয়োজন।
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার
- লাল মাংস
- মুরগী
- ডিম
- ডাল
- মাছ ( দেশি ছোট মাছ) ইত্যাদি
তরল খাবার
গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি পান করা জরুরী। পানি পান করতে সমস্যা হলে পানি জাতীয় খাবার খেতে হবে। যেমন : ডাবের পানি ও স্যালাইন। এছাড়াও তরল জাতীয় খাবার যেমন : চিকেন স্যুপ, ভেজিটেবিল স্যুপ এই জাতীয় খাবার গুলো ডায়েটে রাখতে হবে।
গর্ভকালীন সময়ে শিশুর বৃদ্ধি হরমোনের ব্যালেন্সের জন্য তরল খাবার অনেক বেশি দরকার। সাধারণত চিকিৎসকগণ একজন গর্ভবতী মাকে দৈনিক ১৮-২০ গ্লাস পানি পান করতে বলেন।
অন্যান্য
উপরে বর্ণিত গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকায় নিম্নোক্ত খাবার সমূহও রাখতে হবে। যেমন:
- শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট
- ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড
- ভিটামিন বি-৬
- ভিটামিন বি-১২
- আয়োডিন সমৃদ্ধ খাবার
- আঁশ জাতীয় খাবার
- জিংক সমৃদ্ধ খাবার
- DHA (Docosahexaenoic acid) সমৃদ্ধ খাবার
গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা – সর্তকতা
- গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাস (First trimester) অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এই সময় গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। তাই খাওয়া-দাওয়া এবং সকল ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতার প্রয়োজন।
- একেক জনের শারীরিক অবস্থা একেক রকম। তাই কোন সাপ্লিমেন্ট বা ওষুধ সেবনের পূর্বে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
- ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার তালিকা অনুসরণ করুন। কারণ কিছু খাবার আছে যা মা ও শিশুর শরীরের জটিলতা অনেক বৃদ্ধি করে।
- আয়রন-ফলিক এসিড ট্যাবলেট এর সঙ্গে একই সাথে ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া যাবে না। একসঙ্গে খেলে আয়রনের কার্যকারিতা কমে যাবে।
- এন্টাসিড বা ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়ার অন্তত এক ঘন্টা পূর্বে অথবা দুই ঘন্টা পরে আয়রন ট্যাবলেট খেতে হবে।
- কোন খাবার গ্রহণে যদি পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় শরীরে, তাহলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন।
শেষকথা
একটি সুস্থ সন্তান জন্মানো প্রত্যেক গর্ভবতী মায়েরই কাম্য। তবে গর্ভকালীন সময় এতটা সহজ নয়। কয়েকটি ধাপের মধ্যে দিয়ে এবং বিভিন্ন রকম পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে একজন গর্ভবতী নারী সন্তান জন্ম দেয়। এই সময় সন্তান সম্ভাবা মায়ের শারীরিক এবং মানসিকভাবে অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে স্বাস্থ্যকর খাবার খান। একেবারে বেশি না খেয়ে কিছুক্ষণ অন্তর অল্প খাবার খান। এই সময় চেষ্টা করবেন নিজেকে হাইড্রেটেড রাখতে। হাটাহাটি এবং হালকা ব্যায়ামের অভ্যাস করতে হবে এই সময়। শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিকভাবেও সুস্থ থাকার চেষ্টা করতে হবে।
এক্ষেত্রে শুধু গর্ভবতী নারী নয় পরিবারের সবারই উচিত তার সঠিক খেয়াল রাখা। সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে তাকে খুশি রাখার। এছাড়াও গর্ভবতী মায়ের যত্ন এবং খাবার সম্পর্কে কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাবেন।
গর্ভকালীন সময়ে মায়ের মাধ্যমে পুষ্টি শিশুর শরীরে আসে। তাই গর্ভবতী মাকে অবশ্যই সুস্থ থাকতে হবে। উপরে আলোচনা করেছি গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা বিষয়ে। আশা করছি আপনাদের উপকারে আসবে।
গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা সম্পর্কিত প্রশ্ন এবং উত্তর / FAQ
১. গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় কোন খাবার রাখা যাবে না?
উত্তর : গর্ভবতী মায়েদের যেসব খাবার থেকে বিরত থাকা উচিত –
- কাঁচা অথবা আধা পাকা পেঁপে
- আনারস
- আঙ্গুর
- অপাস্তুরিত দুধ
- কাঁচা ডিম
- আধাসিদ্ধ মাংস
- ক্যাফেইন
- সামুদ্রিক মাছ
- কলিজা
২. গর্ভাবস্থায় সিভিট খাওয়া কি নিরাপদ?
উত্তর : সিভিটে আছে ভিটামিন সি। গর্ভস্থ শিশুর জন্য ভিটামিন সি খুবই উপকারী। এটি আয়রন শোষণেও সাহায্য করে। তাই গর্ভাবস্থায় সিভিট খাওয়া নিরাপদ।
৩. গর্ভাবস্থায় কি ভাত খাওয়া ভালো?
উত্তর : হ্যাঁ, গর্ভাবস্থায় ভাত খাওয়া ভালো। কারণ ভাত হচ্ছে কার্বোহাইড্রেট এর একটি উৎকৃষ্ট উৎস এবং গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। মা এবং শিশু উভয়ের জন্য কার্বোহাইড্রেট অনেক জরুরী। তবে অতিরিক্ত মাত্রায় কার্বোহাইড্রেট সেবন করা উচিত নয়। উত্তম হবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এর পরিমাণ নির্ধারণ করা।
৪. গর্ভাবস্থায় টক ফল খাওয়া যাবে কি?
উত্তর : হ্যাঁ, গর্ভাবস্থায় টক ফল খাওয়া যাবে। কারণ এসব ফলে রয়েছে নানাবিধ পুষ্টি উপাদান। তবে কিছু ফল এড়িয়ে চলতে হবে। যেমন :
- কাঁচা বা আধপাকা পেঁপে
- আনারস
- আঙ্গুর
আরও পড়ুন-
এলার্জি চুলকানি দূর করার উপায় ও ঘরোয়া পদ্ধতি
কাশি দূর করার উপায় ও প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতি