চুলকানি দূর করার ক্রিম
চিকিৎসা শাস্ত্রে চুলকানিকে প্রুরিটাস বলা হয়। এর মানে হল একটি অস্বস্তিকর অনুভূতি যার ফলে জায়গাটিতে আঁচড়াতে ইচ্ছে করে। চুলকানির বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। সব চেয়ে সাধারণ কারণটি হল শুষ্ক ত্বক।
অনেক সময় মানুষ এই সকল সমস্যার জন্য চুলকানি দূর করার ক্রিমও ব্যবহার করে। কিন্তু চুলকানির সময় ঘর্ষণের কারণে শুষ্ক এবং খসখসে ত্বকে চুলকানি এবং জ্বালা হয়। চুলকানির কারণে অন্যান্য উপসর্গও দেখা দিতে পারে, যেমন, জায়গাটি লাল হয়ে যাওয়া,
ফোসকা পড়া, ফুসকুড়ি হওয়া এবং কখনও রক্তও দেখা যেতে পারে অতিরিক্ত আঁচড়ানর জন্য। কারও ক্ষেত্রে স্থায়ী চুলকানির পিছনে স্বাস্থ্যের অন্য কারণও থাকতে পারে, যেমন চর্ম রোগ, সোরাইসিস, গর্ভাবস্থা, এবং খুবই সামান্য ক্ষেত্রে ক্যান্সার। দেখা গিয়েছে যে যাদের অনেক রকমের রোগ আছে, যেমন মধুমেহ, এলার্জি এবং হাঁপানি, তাদের চুলকানি বেশি হয়।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা কমতে থাকে। এই কারণে বয়স্ক মানুষদের মধ্যে চুলকানি বেশি দেখা যায়। ত্বকের চুলকানি বিব্রতকর একটি সমস্যা। এ সমস্যা থেকে রেহাই পেতে শুরুতেই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে এমন কোনো কথা নেই।
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, ত্বকের সাধারণ সমস্যা অথবা সরল চর্মরোগ থেকে চুলকানির সূত্রপাত হয়েছে। আপনার চুলকানি অনুভূত হলে প্রথমে কিছু ঘরোয়া চিকিৎসা চেষ্টা করে দেখতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ ফর্সা হওয়ার ট্যাবলেট এর নাম ও ব্যবহারবিধি
বিভিন্ন চর্মরোগ এর নাম
ঘামাচি
চর্ম রোগের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ একটি সমস্যা ঘামাচি। সাধারণত ঘামাচি তখনই হয় যখন অতিরিক্ত ঘাম ত্বকের মধ্যে ঘাম-গবন্ধ করে দেয়। যার ফলে ঘাম বেরোতে না পেরে ত্বকের উপরিভাগে বিভিন্ন ধরনের লাল লাল আমার মত ছোপ ছোপ হয়ে যায়।
ঘামাচি খুবই সাধারণ হল প্রচন্ড চুলকানি হয়ে থাকে।তাই ঘামাচির ক্ষেত্রে চুলকানি দূর করার ক্রিম ব্যবহার না করে,ঘরোয়া কিছু উপাদান ব্যবহার করেই তার থেকে উপশম পাওয়া যাবে সহজেই।
দাদ
শরীরে কোন স্থানে ফাঙ্গা ছড়িয়ে গেলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে একে দাদ বলে। এটি বিভিন্ন জায়গায় যেমন মাথায়, পায়ের কুঁচকিতে, পিঠে, হাতে হতে পারে। এটি ছোঁয়াচে রোগ হওয়ার পাশাপাশি খুব সহজে শরীরের সমস্ত জায়গায় রোগটি ছড়িয়ে পড়ে।
আক্রান্ত স্থানটি গোল গোল চাকার মত হয়ে থাকে। লোমযুক্ত জায়গায় দাদ দেখা দিলে ওই জায়গার লোক একদমই কমে যায়। এবং প্রচন্ড চুলকানি অনুভূত হয়।
পাঁচড়া
এই রোগটি সহজ হওয়ার পাশাপাশি খুবই বেশি পরিমাণে ছড়ায়। এ লোকটি সাধারণত অপরিষ্কার কাপড়-চোপড় এবং নিয়মিত গোসল না করার ফলে হয়ে থাকে। এই রোগটিতে সারা শরীর লাল লাল ছোট ছোট দাগ হয়ে থাকে। এবং খুবই অস্বাভাবিক পরিমাণে চুলকায়।
একজিমা
এটি সাধারণত লালচে, শুষ্ক, খসখসে, হাত-পায়ের ত্বকে ছোট ছোট পানির ফুসকুড়ি ইত্যাদি সবই একজিমা এর লক্ষণ। অতিরিক্ত সাবান শ্যাম্পু থেকে একজিমা সংক্রমিত হতে পারে। অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম ওর সাথে জায়গায় একজিমা বেশি হয়।
সোরিয়াসিস
এটি খুবই জটিল একটি চর্মরোগ। এটি দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার পাশাপাশি শরীরের অন্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। এই রোগটি যত পুরানো হবে ততই জটিল আকার ধারণ করতে থাকে। এই রোগে কোষ বৃদ্ধির হার অতিরিক্ত বেড়ে যায়। এই রোগটি শনাক্ত হওয়ার সাথে সাথে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া উচিত। এই রোগটি সাধারণত বংশগতভাবে ছড়ায়।
চুলকানির কারন
চুলকানি দূর করার জন্য বিভিন্ন ধরনের চুলকানি দূর করার ক্রিম বাজারে পাওয়া যায়। এই ক্রিমগুলির কার্যকারিতা চুলকানির কারণ এবং তীব্রতার উপর নির্ভর করে। সাধারণত, চুলকানির কারণ অনুযায়ী ক্রিমগুলিকে নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করা যায়:
১.ছত্রাকজনিত সংক্রমন
২.এলার্জির কারণে
৩.ত্বকের শুষ্কতা বা সংবেদনশীলতা
৪.চর্ম রোগ
১. খেলোয়াড়ের পা, জক ইটি, ত্বকের টিনিয়া ইত্যাদি ছত্রাকজনিত সংক্রমণের কারণে চুলকানি হলে, সেই সংক্রমণ দূর করার জন্য অ্যান্টিফাঙ্গাল ক্রিম ব্যবহার করা হয়। এটি চুলকানি দূর করার ক্রিম। এই ক্রিমগুলিতে সাধারণত ক্লোট্রিমাইজোল, মিকোনাজল, বাটারট্রি ইত্যাদি অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান থাকে।
২. অ্যালার্জির কারণে চুলকানি হলে, সেই অ্যালার্জেন থেকে দূরে থাকার পাশাপাশি অ্যান্টিহিস্টামিন ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। এই ক্রিমগুলিতে সাধারণত ডাইফেনহাইড্রামিন, লোরাটাডিন, বা সেটিরিজিন ইত্যাদি অ্যান্টিহিস্টামিন উপাদান থাকে। তাই অ্যালার্জির জন্য এই চুলকানি দূর করার ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে।
৩. ত্বকের শুষ্কতা বা সংবেদনশীলতার কারণে চুলকানি হলে, ময়েশ্চারাইজার ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। এই ক্রিমগুলি ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
৪. কিছু চর্মরোগের কারণেও চুলকানি হতে পারে। যেমন, এক্সিমা, সোরিয়াসিস ইত্যাদি। এই রোগের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধের পাশাপাশি চুলকানি দূর করার জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজার ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে।
বাংলাদেশে চুলকানি দূর করার ক্রিম এর মধ্যে জনপ্রিয় ক্রিমগুলো হলোঃ
১.ফাঙ্গিডার্ম ক্রিম
২.হিস্টামিন ক্রিম
৩.মিল্ক অফ ম্যাগনেসিয়া ক্রিম
৪.লোশন ক্যালামাইন
• ফাঙ্গিডার্ম ক্রিম: এই ক্রিমটি খেলোয়াড়ের পা, জক ইটি, ত্বকের টিনিয়া ইত্যাদি ছত্রাকজনিত সংক্রমণের কারণে চুলকানি দূর করতে ব্যবহার করা হয়।
• হিস্টামিন ক্রিম: এই ক্রিমটি অ্যালার্জির কারণে চুলকানি দূর করতে ব্যবহার করা হয়।
• মিল্ক অফ ম্যাগনেসিয়া ক্রিম: এই ক্রিমটি ত্বকের শুষ্কতা বা সংবেদনশীলতার কারণে চুলকানি দূর করতে ব্যবহার করা হয়।
• লোশন ক্যালামাইন: এই ক্রিমটি ত্বকের চুলকানি, জ্বালাভাব এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
চুলকানি দূর করার ক্রিম ব্যবহারে সতর্কতা
চুলকানি দূর করার ক্রিম ব্যবহার করার সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলি খেয়াল রাখতে হবে:
• চুলকানি দূর করার জন্য ক্রিম ব্যবহার করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
• ক্রিমটি ব্যবহার করার আগে হাতে পরিমাণমতো ক্রিম নিয়ে তা আঙুলের ডগা দিয়ে আক্রান্ত স্থানে পাতলা করে লাগাতে হবে।
• ক্রিমটি লাগানোর পর হাত ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।
• ক্রিমটি লাগানোর পর আক্রান্ত স্থানে পোশাক না পরলে ভালো হয়।
• ক্রিমটি লাগানোর পর যদি কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
চুলকানি দূর করার ক্রিম ব্যবহারের পাশাপাশি কিছু ঘরোয়া প্রতিকারও কার্যকর হতে পারে। যেমন, আক্রান্ত স্থানে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা, শীতল সেঁক দেওয়া, বা অ্যালোভেরা জেল লাগানো।
ক্রিম ব্যবহারের সময় করণীয়
•চুলকানি দূর করার ক্রিম লাগানোর আগে আক্রান্ত স্থান ভালো করে পরিষ্কার করে নিন।
• ক্রিম লাগানোর পর আক্রান্ত স্থান ঢেকে রাখবেন না।
• ক্রিম লাগানোর পর হাত ধুয়ে ফেলুন।
ক্রিম ব্যবহারের সময় সাবধানতা
• ক্রিম লাগানোর আগে যদি আপনার ত্বকে কোনো ক্ষত বা ঘা থাকে, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
• ক্রিম ব্যবহারের সময় যদি আপনার ত্বকে কোনো প্রকার অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, তাহলে ক্রিম ব্যবহার বন্ধ করুন এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
চুলকানি এড়াতে করনীয়
চুলকানি এড়াতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ত্বক পরিষ্কার রাখলে ত্বকের উপর থাকা ধুলোবালি, ঘাম, এবং মৃত কোষ দূর হয়। এতে ত্বকের ছিদ্রগুলো বন্ধ হয় না এবং ত্বকের মধ্যে থাকা ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক বৃদ্ধি পায় না।
চুলকানি এড়াতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার জন্য নিম্নলিখিত নিয়মগুলো মেনে চলুন:
• প্রতিদিন কমপক্ষে দুইবার গোসল করুন।
• গোসলের সময় সাবান দিয়ে ভালো করে শরীর ধুয়ে ফেলুন।
• বিশেষ করে, ঘামাচির স্থানগুলো ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।
• গোসলের পর ত্বক ভালো করে মুছে নিন।
• পোশাক এবং বিছানার চাদর নিয়মিত পরিষ্কার করুন।
• ত্বককে শুষ্ক হতে দেবেন না। ত্বক শুষ্ক হলে চুলকানি হতে পারে। তাই নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
• পোশাক পরুন যাতে ত্বক শ্বাস নিতে পারে। আঁটসাঁট পোশাক পরলে ত্বকে ঘাম জমে চুলকানি হতে পারে।
• পোকামাকড় কামড় থেকে সাবধান থাকুন। পোকামাকড় কামড়ালে সাথে সাথে অ্যান্টিহিস্টামাইন ক্রিম বা ওষুধ ব্যবহার করুন।
• ত্বকের কোন সমস্যা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
পরিশেষে
তাই আমরা সব শেষে বলতে পারি যে,আমরা যদি সব সময় নিজেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখি,তাহলে আমরা নিজেকে চুলকানি রোগ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারব।তাই নিজে পরিষ্কার থাকুন,নিজের পরিবেশ কেও পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করুন।
চুলকানি দূর করার ক্রিম সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর
১.চুলকানির ভালো মলম কোনটি?
উত্তর:যদি দাওয়াত টাইপের কিছু হয় তবে Fintom ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। উপকার পাবেন।
২.পুরো শরীরে চুলকানি থাকলে কি করলে তা ভালো হবে?
উত্তর:নিমপাতা ব্লেন্ড করে শরীরে মাখিয়ে রাখুন কয়েক ঘণ্টার জন্য। সেটা শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।আশা করি কোন ক্রিম ছাড়াই উপকার পাবেন।
৩.দাউদের জন্য সবচেয়ে ভালো ক্রিম কোনটি?
উত্তর: ১.পেডিসন ক্রিম – pevisone(সানোফি)
২.ফাঙ্গিসন ক্রিম-Fungison(কেমিস্ট)
আরও পড়ুন-
ন্যাপ্রোসিন 500 এর কাজ কি, ব্যবহার ও কার্যকারিতা
ব্রণ দূর করার উপায় ও রূপচর্চা করার পদ্ধতি সমুহ