বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার ওষুধের নাম
সাধারণত জীবাণু পেটে যাবার কারণে শিশুদের ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানার মত অসুখ হয়ে থাকে। শিশুদের ক্ষেত্রে পাতলা পায়খানা চিন্তার কারণ হয়ে দাড়ায়।
কেননা, প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা থেকে সৃষ্ট পানিশূন্যতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা না হলে এই পানিশূন্যতা মারাত্মক রূপ ধারণ করতে পারে।
যে শিশুরা বুকের দুধ পান করে, তাদের পায়খানা স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা নরম আর আঠালো হয়। সেটা ডায়রিয়া নয়। তবে বাচ্চার যদি স্বাভাবিকের তুলনায় বাড়ে বাড়ে ঘনঘন পাতলা পায়খানা হয় সেটাও ডায়রিয়া হিসেবে গণ্য করা যায়।
আজকের আর্টিকেলে আমরা বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার ওষুধের নাম, বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা হলে করনীয় ও শিশুদের যত্ন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি আপনারা উপকৃত হবেন।
আরও পড়ুনঃ ঘুমের ঔষধের নাম কি, কাজ ও ওষুধ খাওয়ার নিয়ম
বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা কেন হয়

সাধারণত পরিপাকতন্ত্রে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবী সংক্রমণের ফলে এই পাতলা পায়খানার সমস্যা হতে পারে। দিনে তিন বার বা তার চেয়ে অধিক বার ঘনঘন পাতলা পায়খানা হলে তা ডায়রিয়া বলে ধরা যেতে পারে।
শিশুদের ক্ষেত্রে ডায়রিয়া তীব্র হলে চাল ধোয়া পানির মতো পায়খানা নির্গত হয়। বাজারে আপনি বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার ওষুধের নাম ও বিভিন্ন ওষুধ পাবেন। তবে সবচেয়ে ভালো হবে যদি আপনি ঘরোয়া ভাবে চিকিৎসা চালিয়ে যান।
শীতকালে ঋতু পরিবর্তনের সময় শিশুদের পাতলা পায়খানা রোগ বেশি হয়। ‘কিন্তু যদি পাতলা পায়খানার সঙ্গে রক্ত, জ্বর, প্রচণ্ড পেটব্যথা বা কামড়ানো, পিচ্ছিল মল, মলত্যাগে ব্যথা ইত্যাদি জটিল অবস্থা সৃৃষ্টি হয় তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
আপনাকে অনেকেই বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার ওষুধের নাম বলবে, তবে সাধারণ পাতলা পায়খানা হলে আপনি নিজেই বাসায় বসে নিজের অথবা নিজের শিশুর চিকিৎসা করতে পারেন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল পানিশূণ্যতা এড়াতে প্রচুর পরিমাণে তরল পানীয় ও খাবার খাওয়া।
বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার ঘরোয়া চিকিৎসা
প্রথমত, মনে রাখতে হবে যে,পাতলা পায়খানা শিশুদের জন্য খুবই বিপজ্জনক কারণ এটি ডিহাইড্রেশন (পানিশূন্যতা) এর দিকে ধাবিত করতে পারে। তাই বাজারে প্রচুর বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার ওষুধের নাম পেয়ে যাবেন, তবে কখনোই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ঔষধ দেবেন না।
তরল খাবার
১. প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার খাওয়ান যেমন ORS (Oral Rehydration Solution), ডাবের পানি, স্যালাইন, ঝোল, স্যুপ ইত্যাদি।
২. মায়ের দুধ নিয়মিত খাওয়ান।
৩. হালকা এবং সহজ হজম হওয়া খাবার খাওয়ান যেমন ভাতের মাড়, খিচুড়ি, মসুর ডাল, পেঁপে, কাঁচা কলা ইত্যাদি।
৪. তেলেভাজা, মশলাদার, এবং চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করুন।
অন্যান্য বিষয় যেগুলো খেয়াল রাখা জরুরি সেগুলো হলো
১. শিশুর হাত বারবার সাবান ও পানি দিয়ে ধুয়ে দিন।
২. শিশুর পায়খানা পরিষ্কার করার সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন।
৩. শিশুকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে দিন।
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন
৪.যদি ডায়রিয়া ২৪ ঘন্টার বেশি স্থায়ী হয়।
৫.যদি শিশু অনেক বার বমি করে।
৬.যদি শিশুতে জ্বর থাকে।
৭.যদি শিশু অলস থাকে বা খাওয়া बंद করে দেয়।
৮.যদি শিশুর মল তে রক্ত থাকে।
মনে রাখবেন, এই প্রতিকারগুলি শুধুমাত্র সাধারণ পরামর্শ হিসেবে দেওয়া হয়েছে। আপনার শিশুর স্বাস্থ্যের বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকলে, আপনি অনেক ধরনের বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার ওষুধের নাম পেয়ে যাবেন তবে, সর্বদা একজন ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।
বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার কিছু ওষুধের নাম
বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা ওষুধের নাম এর অভাব নেই।তবে অবশ্যই কোন ওষুধ কোন কাজে লাগে তা জেনেই আপনাকে বাচ্চাকে ওষুধ সেবন করানো উচিত।তাই আপনাদের জন্য নিম্নে কিছু বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার ওষুধের নাম দেয়া হলো
১) জিংক ট্যাবলেট
২) লোপারামাইড
৩) অ্যান্টিবায়োটিক
১) জিংক ট্যাবলেট
১. ডায়রিয়ার তীব্রতা কমাতে ও দ্রুত সারাতে সাহায্য করে।
২. ৬ মাস থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের জন্য প্রতিদিন ১ টি ২০ মি.গ্রা. জিংক ট্যাবলেট ১০ দিন ধরে খাওয়ান।
৩.জিংক ট্যাবলেট গুঁড়ো করে পানিতে মিশিয়ে বা চামচ দিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে।
২) লোপারামাইড
১.পাতলা পায়খানার সংখ্যা কমাতে ব্যবহার করা হয়।
২.২ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য লোপারামাইড দেওয়া উচিত নয়।
৩. ২ বছরের বেশি বয়সী শিশুদের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী লোপারামাইড ব্যবহার করুন।
৩) অ্যান্টিবায়োটিক
১.জীবাণুঘটিত ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে ডাক্তার অ্যান্টিবায়োটিক লিখে দিতে পারেন।
২.শুধুমাত্র ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করুন।
কিছু ওষুধের নাম:
১. ORS (Oral Rehydration Solution): স্যালাইন
২. Zinc dispersible tablet: জিংক ট্যাবলেট
৩. Loperamide: লোপারামাইড
৪. Ciprofloxacin: সিপ্রোফ্লক্সাসিন (অ্যান্টিবায়োটিক)
৫. Amoxicillin: অ্যামোক্সিসিলিন
৬. Amodis Syrup ( এমোডিস সিরাপ )
৭. Zox Syrup ( জক্স সিরাপ )
৮. Filmet Syrup ( ফিলমেট সিরাপ )
৯. Nitanid Syrup ( নাইটানিড সিরাপ )
বাচ্চাদের যেন পাতলা পায়খানা না হয় সেজন্য কি কি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে?
বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার ওষুধের নাম – কিছু সতর্কতা
আমরা যদি প্রথম থেকে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করে তাহলেই, নিজের বাচ্চাকে পাতলা পায়খানার মতো রোগ থেকে নিরাপদে রাখতে পারব। বাঁচার কিছু হলেই আমরা প্রথমেই ওষুধের পিছে দৌড়াই। আপনি বাজারে বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার ওষুধের নাম পেয়ে যাবেন।
তবে আমাদের আগে থেকেই সতর্কতা অবলম্বন করলে এই রোগ থেকে নিরাময় হওয়া সম্ভব। নিম্নোক্ত বিষয়গুলো যদি আমরা মেনে চলি তাহলেই, আমাদের বাচ্চাকে পাতলা পায়খানার মতো রোগ থেকে বাঁচাতে সক্ষম হব।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
• হাত ধোয়া: খাবার খাওয়ানোর আগে, টয়লেট ব্যবহারের পর এবং বাচ্চার ডায়াপার পরিবর্তনের পর সাবান ও পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত ধোয়া।
• খাবার পরিষ্কার রাখা: খাবার ভালোভাবে রান্না করা, ঢেকে রাখা এবং ফ্রিজে সংরক্ষণ করা।
• পানি: নিরাপদ পানি খাওয়ানো। সন্দেহজনক পানি ফুটিয়ে ঠান্ডা করে খাওয়ানো।
• খেলনা পরিষ্কার রাখা: বাচ্চাদের খেলনা নিয়মিত সাবান ও পানি দিয়ে ধোয়া।
• পরিবেশ পরিষ্কার রাখা: বাচ্চাদের খেলার জায়গা পরিষ্কার রাখা।
খাবার
• বুকের দুধ: ছয় মাস পর্যন্ত শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ানো।
• সুষম খাবার: ছয় মাসের পর থেকে পুষ্টিকর ও সুষম খাবার খাওয়ানো।
• নিরাপদ খাবার: বাইরে থেকে কেনা খাবার পরিষ্কার ও নিরাপদ কিনা তা নিশ্চিত করা।
• পানিশূন্যতা রোধ: পাতলা পায়খানা হলে স্যালাইন, ORS বা ORS घोल খাওয়ানো।
• রোটাভাইরাস টিকা: বাচ্চাদের রোটাভাইরাস টিকা দেওয়া।
• পোকামাকড়ের কামড় থেকে রক্ষা: পোকামাকড়ের কামড় থেকে বাচ্চাদের রক্ষা করা।
• পর্যাপ্ত বিশ্রাম: বাচ্চাদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়ার ব্যবস্থা করা।
• চিকিৎসা: বাচ্চাদের যদি পাতলা পায়খানা হয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
পরিশেষে
তাই পরিশেষে বলা যায় যে, নিজের বাচ্চাকে সুস্থ রাখার জন্য অবশ্যই নিজেকে সুস্থ থাকতে হবে। নিজের সুস্থ থাকলেই নিজের বাচ্চাকে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখা সম্ভব। নিজেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। ঘরোয়া ভাবে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। নিজেরা সতর্ক হয়ে চললেই,নিজের বাচ্চাকে সুস্থ রাখা সম্ভব।
বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ
১.পানির মত পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কি?
উত্তরঃ পাতলা পায়খানার চিকিৎসায় মূল করণীয় হলো শরীরের পানি ও লবনের ঘাটতি মেটানো। এজন্য বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা হলে প্রচুর পরিমাণে খাবার স্যালাইন, তরল পানীয় ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত। সাধারণত প্রতিবার পাতলা পায়খানা হওয়ার পর এক প্যাকেট বা আধা লিটার করে খাবার স্যালাইন খাওয়ার উপদেশ দেয়া হয়।
২. শিশুর পাতলা পায়খানা হলে কখন হাসপাতালে নিতে হবে?
উত্তরঃ পানিশূন্যতার পরিমাণ যদি, তীব্র হয়, তাহলে শুধু পানি অথবা তরল কিছু খেয়ে সেটিকে ঠিক করা সম্ভব হয় না, এসব ক্ষেত্র লক্ষ্য হলে অবশ্যই শিশুকে হাসপাতালে নিতে হবে।
৩.বুকের দুধ খাওয়ানো শিশুর পাতলা পায়খানা বন্ধ করার উপায়?
উত্তরঃ 6 থেকে 24 ঘন্টার জন্য বুকের দুধ খাওয়ানোর মধ্যে কাও লেকট্রোলাইট বা পেডিয়ালাইট অফার করুন শুধুমাত্র যদি আপনার শিশু স্বাভাবিকের চেয়ে কম ঘন ঘন প্রস্রাব করে।
আরও পড়ুন-
হাটুর ব্যাথা সারানোর ঘরোয়া উপায় ও চিকিৎসা
মাথা ব্যথার ওষুধের নাম, কার্যকারিতা ও চিকিৎসা