আপেল সিডার ভিনেগার এর উপকারিতা
অ্যাপল সিডার ভিনেগার (ACV) হলো এক ধরণের ভিনেগার যা আপেলের রস থেকে তৈরি করা হয়। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী স্বাস্থ্য উপাদান যা হাজার বছর ধরে ব্যবহার করা হচ্ছে।
আপেল সিডার ভিনেগার অ্যাসিটিক অ্যাসিড, প্রোবায়োটিক এবং এনজাইম সমৃদ্ধ, যা এটিকে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী করে তোলে। আজকের আর্টিকেলে আপেল সিডার ভিনেগার এর উপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
আরও পড়ুনঃ লবঙ্গের উপকারিতা ও অপকারিতা, লবঙ্গ খাওয়ার নিয়ম
অ্যাপল সিডার খাওয়ার উপকারিতা

অ্যাপল সিডার ভিনেগার (ACV) খাওয়ার অনেক সম্ভাব্য উপকারিতা রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:
১। ওজন কমানো
আপেল সিডার ভিনেগার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে এবং ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করতে পারে, যা ওজন কমাতে সহায়তা করে।
২। রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ
আপেল সিডার ভিনেগার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে, বিশেষ করে টাইপ 2 ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য।
৩। হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্য
আপেল সিডার ভিনেগার “খারাপ” LDL কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে এবং “ভাল” HDL কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। এটি রক্তচাপ কমাতেও সাহায্য করতে পারে।
৪। হজম উন্নত করা
আপেল সিডার হজম উন্নত করতে, পেট ফাঁপা এবং অম্বল কমাতে এবং প্রোবায়োটিকের বৃদ্ধিকে উত্সাহিত করতে সাহায্য করতে পারে।
৫। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
আপেল সিডার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে।
৬। ত্বকের স্বাস্থ্য
আপেল সিডার ভিনেগার ব্রণ, একজিমা এবং ছত্রাক সংক্রমণের মতো ত্বকের সমস্যাগুলির চিকিত্সায় সাহায্য করতে পারে।
৭। চুলের স্বাস্থ্য
আপেল সিডার চুলের বৃদ্ধি উন্নত করতে, খুশকি দূর করতে এবং চুলের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
৮। মুখের স্বাস্থ্য
আপেল সিডার দাঁতের এনামেল শক্ত করতে, দাঁতের প্লাক কমাতে এবং দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করতে পারে।
৯। ক্যান্সার প্রতিরোধ
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে আপেল সিডার কিছু ধরণের ক্যান্সারের কোষের বৃদ্ধি বন্ধ করতে সাহায্য করতে পারে।
১০। জয়েন্টের ব্যথা উপশম
আপেল সিডার জয়েন্টের ব্যথা এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহারের উপায়
- ACV পানিতে মিশিয়ে পান করা যেতে পারে।
- এটি সালাদ ড্রেসিং হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
- এটি মেরিনেড হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
- এটি ত্বক এবং চুলের উপর টোনার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
অ্যাপল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম
পরিমাণ
- প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক গ্লাস পানিতে এক টেবিল চামচ (15 মিলি) ACV মিশিয়ে খেতে পারেন।
- আপনি সারাদিনে দুই থেকে তিনবার এই মিশ্রণটি খেতে পারেন।
- ACV কখনোই একা খাওয়া উচিত নয়, অবশ্যই পানিতে মিশিয়ে খেতে হবে।
আপেল সিডার ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা
- ACV অতিরিক্ত পরিমাণে ব্যবহার করা উচিত নয়। এটি দাঁতের এনামেল ক্ষয় করতে পারে এবং পেটে অস্বস্তি হতে পারে।
- ACV গ্রহণ করার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলা উচিত, বিশেষ করে আপনি যদি গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী হন, ডায়াবেটিসের ঔষধ খান, বা অন্য কোনও ঔষধি অবস্থা থাকে।
যারা আপেল সিডার ভিনেগার খাবেন না
১। গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মহিলা
আপেল সিডার ভিনেগার এর গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মহিলাদের উপর প্রভাব সম্পর্কে পর্যাপ্ত গবেষণা নেই। তাই, এই সময়ে ACV খাওয়া এড়িয়ে চলা ভালো।
২। ডায়াবেটিস রোগী
আপেল সিডার রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে পারে। যারা ডায়াবেটিসের ঔষধ খান, তাদের আপেল সিডার খাওয়ার আগে ডাক্তারের সাথে কথা বলা উচিত। কারণ আপেল সিডার ঔষধের সাথে প্রতিক্রিয়া করতে পারে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা অনেক কমিয়ে ফেলতে পারে।
৩। পেটের সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি
যাদের পেটে আলসার, গ্যাস্ট্রাইটিস, বা অন্য কোন পেটের সমস্যা আছে, তাদের ACV খাওয়া উচিত নয়। কারণ ACV পেটের সমস্যা আরও খারাপ করতে পারে।
৪। দাঁতের সংবেদনশীলতায় আক্রান্ত ব্যক্তি
আপেল সিডার দাঁতের এনামেল ক্ষয় করতে পারে। যাদের দাঁত সংবেদনশীল, তাদের আপেল সিডার খাওয়া উচিত নয়।
৫। কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি
আপেল সিডার ভিনেগার কিডনির কার্যকারিতা ব্যাহত করতে পারে। যাদের কিডনির সমস্যা আছে, তাদের ACV খাওয়া উচিত নয়।
৬। ঔষধ খাওয়া ব্যক্তি
ACV কিছু ঔষধের সাথে প্রতিক্রিয়া করতে পারে। তাই, আপনি যদি কোন ঔষধ খান, তাহলে ACV খাওয়ার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলা উচিত।
৭। অ্যালার্জি
যাদের আপেল সিডার এর প্রতি অ্যালার্জি আছে, তাদের অবশ্যই ACV খাওয়া উচিত নয়।
মনে রাখবেন
- ACV একটি ঐতিহ্যবাহী স্বাস্থ্য উপাদান এবং এর অনেক সম্ভাব্য স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে।
- ACV ব্যবহারের আগে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলা এবং আপনার জন্য উপযুক্ত নিয়ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা গুরুত্বপূর্ণ।
- আপেল সিডার ভিনেগার কেবল একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারার পরিপূরক হিসেবে ব্যবহার করা উচিত।
অ্যাপেল সাইডার ভিনেগারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
আপেল সিডার ভিনেগার সাধারণত নিরাপদ হলেও, অতিরিক্ত ভুলভাবে ব্যবহার করলে এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।
সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
হজম সমস্যা: আপেল সিডার পেটে জ্বালাপোড়া, গ্যাস, এবং অম্বলের কারণ হতে পারে। বিশেষ করে খালি পেটে ACV খেলে এই সমস্যা বেশি হতে পারে।
দাঁতের এনামেল ক্ষয়: আপেল সিডার অম্লযুক্ত হওয়ায় এটি দাঁতের এনামেল ক্ষয় করতে পারে। আপেল সিডার ভিনেগার পান করার পরে পানি দিয়ে কুলি করা বা খাওয়ার পরে দাঁত ব্রাশ করা এই সমস্যা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
আপেল সিডার ভিনেগার এর উপকারিতা – অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
নিম্ন পটাসিয়ামের মাত্রা: দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত মাত্রায় আপেল সিডার সেবন করলে রক্তে পটাসিয়ামের মাত্রা কমে যেতে পারে।
ত্বকের জ্বালা: আপেল সিডার ভিনেগার সরাসরি ত্বকে লাগালে জ্বালাপোড়া হতে পারে। এছাড়াও, নিম্ন ঝুঁকিপূর্ণ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে যেমন:
গলা জ্বালা: পানিতে মেশানো ছাড়া ACV পান করলে গলায় জ্বালাপোড়া লাগতে পারে।
ওষুধের সাথে মিথষ্ক্রিয়া: আপেল সিডার ভিনেগার কিছু ওষুধের, যেমন ডায়াবেটিসের ঔষধ, এর কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে বা অবাঞ্ছিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
যদি আপনি ACV খাওয়ার পরে কোন গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনুভব করেন, তাহলে অবিলম্বে আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহারের কিছু টিপস
১। ACV সবসময় পানিতে মিশিয়ে পান করুন।
২। খাওয়ার পর ACV পান করা ভালো।
৩। দাঁতের এনামেল রক্ষার জন্য ACV পান করার পরে পানি দিয়ে কুলি করুন।
৪। সরাসরি ত্বকে ACV লাগাবেন না।
আপনি যদি গর্ভবতী, স্তন্যদানকারী হন, কোনো ঔষধ খান বা অন্য কোন স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে তাহলে ACV গ্রহণের আগে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন। আপেল সিডার ভিনেগার এর উপকারিতা থাকলে এই খুব সতর্কতার সাথে তা খেতে হবে।
পরিশেষে
আপেল সিডার ভিনেগার এর উপকারিতা অনেক রয়েছে। তবে সেটা পরিমিত পরিমাণে নিয়ম মেনে খেলে। না হলে হিতে বিপরিত হতে পারে। নিয়মিত নিয়ম মেনে খেলে এর সুফল পাওয়া যাবে। মাত্রাধিক খাওয়ার ফলে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। আশা করি আজকের আর্টিকেলে আপেল সিডার ভিনেগার এর উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত বোঝাতে পেরেছি।
আপেল সিডার ভিনেগার এর উপকারিতা সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্তর / FAQ
১। আপেল সিডার ভিনেগার কিভাবে খেতে হয়?
উত্তরঃ সবচেয়ে ভালো উপায় হলো, রান্নায় এ ভিনেগার ব্যবহার করা। ঘরে মেয়োনিজ তৈরির সময় বা সালাদেও দিতে পারেন ভিনেগার। পানির সঙ্গে মিশিয়ে পানীয় হিসেবেও পান করা যেতে পারে এটি। যেমন, এক গ্লাস পানিতে ১/২ টেবিলচামচ (৫-১০ মিলিলিটার) আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে পান করতে পারেন।
২। ভিনেগার খেলে কি কোন ক্ষতি হয়?
উত্তরঃ আপেল সিডার ভিনেগার এর উপকারিতা রয়েছে তেমন অপকিারিতার মধ্যে যসেব ক্ষতি হয়। অধিক পরিমাণে এই ভিনেগার খাওয়ার ফলে দাঁত, ইসোফেগাস স্টমাক লাইনিং এর ক্ষতি করতে পারে। তাছাড়া পটাশিয়াম এর মাত্রা কমে যায়। যার ফলে ডায়রিয়া, বদহজম সহ হাড়ের ও ক্ষতি করে। তাই ভিনেগার খাওয়ার আগে ডাক্তার এর পরামর্শ নিতে হবে।
৩। ভিনেগার কি অন্ত্রের জন্য ভালো?
উত্তরঃ এটি পলিফেনল নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের একটি সমৃদ্ধ উৎস, যা আপনার “ভাল” অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াকে সমর্থন করে। এটিতে থাকা অ্যাসিটিক অ্যাসিডটিও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল, যা ব্যাখ্যা করে কেন লোকেরা প্রাচীন গ্রীকদের মতো ক্ষত পরিষ্কার করতে ভিনেগার ব্যবহার করেছিল।
আরও পড়ুন-
ঘি এর উপকারিতা, ঘি খাওয়ার নিয়ম ও পুষ্টিগুণ
কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা