প্রেসার বেড়ে গেলে করণীয়
বর্তমান সময়ে কর্মব্যস্ততা, অস্বাস্থ্যকর খাবার ও জীবনযাপন আর মানসিক চাপের কারণে বেশীরভাগ মানুষই আক্রান্ত হচ্ছে হাইপারটেন্শন বা উচ্চ রক্তচাপ অথবা প্রেসার বেড়ে যাওয়ার মতো রোগে।
এক সময় ধরে নেয়া হত কেবল বয়স্ক মানুষ অর্থাৎ ৪০ বছরের বেশি হলেই কারও উচ্চ রক্তচাপের বা প্রেসার বাড়ার মতো আশঙ্কা তৈরি হয়।
কিন্তু বর্তমান সময়ে নানাবিধ কারণে কম বয়সেও নারী থেকে পুরুষ সবাই আক্রান্ত হচ্ছেন উচ্চ রক্তচাপে।
আজকের আর্টিকেলে আমরা প্রেসার বেড়ে গেলে করণীয় কি, কিভাবে প্রেসার কমানো সম্ভব, কি ওষুধ খেতে হবে এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
আরও পরুনঃ চিকেন পক্স এর ঔষধ এর নাম, কার্যকারিতা ও চিকিৎসা
উচ্চ রক্তচাপ কি

মানুষের শরীরের অভ্যন্তরে ধমনির মধ্য দিয়ে রক্ত প্রবাহ হচ্ছে রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেশার। হৃৎপিণ্ড থেকে রক্ত যখন পুরো শরীরের বিভিন্ন অংশে প্রবাহিত হতে থাকে, তখন ধমনির দেয়ালে চাপ অনুভুত হয়। তাই প্রেসার বেড়ে গেলে করণীয় কি সেটি আমাদের জানা থাকা দরকার।
কিছু কিছু প্রাথমিক লক্ষণ দেখলেই বুঝা যায় যে,তার ব্লাড প্রেসার বেড়ে গেছে। কিন্তু তার সঠিক তথ্য পাওয়ার জন্য ব্লাড প্রেসার মাপা জরুরি। তাই প্রেসার বেড়ে গেলে করণীয় হলো সর্বপ্রথম নিজের প্রেসার পরিমাপ করা।
একজন সুস্থ মানুষের রক্তচাপ অথবা প্রেসার এর পরিমাপ থাকার কথা ১২০/৮০ মিলিমিটার মার্কারি। কিন্তু সেটি, যদি কারো পরপর দুইদিন ১৪০/৯০ এর বেশি থাকলে, তখন সেটিকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাই প্রেসার বলে চিহ্নিত করা হয়। তবে রোগীর বয়স ৮০ বছর বা তার অধিক হলে রক্তচাপের মাত্রাও বেশি হবে।
প্রেসার বেড়ে গেলে কি করতে হবে
৯৫ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে প্রেসার বেড়ে যাবার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ থাকে না। বাকি পাঁচ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে ভিন্ন কারণে প্রেসার বেড়ে যেতে পারে। এসব কারণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কিডনির অসুখ, অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির অসুখ যেমন থাইরয়েড।
মানুষের কিছু জন্মগত রোগের কারণে উচ্চ রক্তচাপ ও হতে পারে এবং কখনো কখনো মায়েদের গর্ভকালীন অবস্থায় ও রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে।
তাই প্রেসার বেড়ে গেলে করণীয় কি তা আমাদের জানতে হবে। তবে সাধারণ ভাবে প্রেশার হাই হলে আপনার মধ্যে তাৎক্ষণিক কিছু শারীরিক জটিলতা দেখা দেবে।
যেমন: মাথা ঘোরানো, মাথা ব্যথা, ক্লান্তি, অজ্ঞান হওয়ার অবস্থা, বমি ভাব লাগা, হঠাৎ বুক ধড়ফড় করা, দৃষ্টি ঝাপসা হতে থাকা, অবসাদ ভাব লাগা, স্বাভাবিকভাবে নিশ্বাস নিতে অসুবিধা ইত্যাদি।
আপনার প্রেসার বেড়ে গেলে করণীয় গুলো হলো আপনার শারীরিক চলাচল কমিয়ে দিন। শান্ত হয়ে বসুন । পারলে আরামদায়ক কোনো স্থানে বসুন অথবা এক পাশে শুয়ে পড়ুন।
কেননা, এটি রক্তের চাপ কমতে সাহায্য করে।এছাড়া ইন্সট্যান্ট মুক্তির জন্য,রক্তের চাপ কমাতে খেতে পারেন তেঁতুলের রস। তেঁতুলের রসের পরিবর্তে খেতে পারেন লেবুর পানি।
প্রেসার বেড়ে গেলে কি ঔষধ খেতে হবে
উচ্চ রক্তচাপ বা হাই প্রেসার এর রোগীদেরকে ডাক্তাররা বলেন হাইপার টেনশন এর রোগী , এই রোগে আক্রান্ত সব রোগীদের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা ঘুমনোর সময় ওষুধ খাবার পরামর্শ দেন রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যে।
তবে যেসব রোগী রাতে নিয়মিত ঘুমানোর আগে হাইপার-টেনশনের ওষুধ খাচ্ছেন, তাদের রক্তচাপ দিনে ও রাতে অনেকটা কম থাকে। হাই প্রেসার এমন একটি রোগ যেটার জন্য অবশ্যই আপনাকে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। প্রেসার বেড়ে গেলে করণীয় কি তা অবশ্যই চিকিৎসকের কাছ থেকে পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করতে হবে।
হাই প্রেসার এর রোগীদেরকে সবসময় একটা নিয়মিত রুটিনের মধ্যে চলতে হয়। সেই সাথে বেসিক ও কমন কিছু ঔষধও সেবন করতে হয় তবে তা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী।
নিম্নে হাই প্রেসারের রোগীদের জন্য বেসিকো কমন কিছু ঔষধের নাম দেয়া হলো।
1.metoprolol
2.atenolol
3.labetalol
4.carvedilol
5.Prinivil
6.Zestril
উচ্চ রক্তচাপ বা হাই প্রেসার এর জন্য বাজারের বিভিন্ন ধরনের ঔষধ পাওয়া যায়। তবে উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের প্রয়োজন একটা ভালো ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে ওষুধ সেবন করা।
প্রেসার বেড়ে গেলে করণীয় – নিয়ন্ত্রণে রাখতে করণীয়
যাঁদের রক্তচাপ অনেক বেশি তাঁদের অনেক সময়েই নিয়মিত ওষুধ খেয়ে যেতে হয়। অনেক সময়ে সব কিছুর পরেও রক্তচাপ কমানো মুশকিল হয়ে পড়ে। তাই বেশি বাড়াবাড়ি হওয়ার আগেই বাড়িতে কিছু ঘরোয়া উপায় মেনে চলার চেষ্টা করুন। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন বেছে নিন।
হয়তো অনেকটাই সমস্যা কমতে পারে।তাই প্রেসার বেড়ে গেলে করণীয় কি আমাদের জানতে হবে।
১.ব্লাড প্রেশারে ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের খাবারে অতিরিক্ত লবণ গ্রহন হতে,এড়িয়ে চলতে হবে। তাদের খাদ্যতালিকায় গোলাপী লবণ ব্যবহার করতে হবে।আরও পানি পান করা স্বাভাবিকভাবে রক্তচাপ কমাতেও সাহায্য করতে পারে। উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তিরা কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করে তাদের রক্তচাপ কমাতে পারেন খুব সহজেই।
১.ব্যায়াম মানুষের প্রাকৃতিকভাবে রক্তচাপ কমাতেও কিন্তু সাহায্য করতে পারে। রক্তচাপে বা হাই প্রেসারে ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের অবশ্যই সক্রিয় থাকতে হবে। এবং তাদের সহজ ব্যায়াম হলো হাঁটা, সাঁতার কাটা,অথবা লাফানো ইত্যাদিতে নিযুক্ত করা উচিত।
২.মানসিক চাপ এবং রাগ এড়ানো স্বাভাবিকভাবে রক্তচাপ কমাতেও সাহায্য করবে। ধ্যান এবং যোগব্যায়াম প্রাকৃতিকভাবে রক্তচাপ কমানোর জন্য ভাল বিকল্প।যাক সবজি ফলমূল জাতীয় খাবার-দাবার বেশি বেশি গ্রহণ করুন। আর অবশ্যই চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
৩.আপনার প্রেশারের সমস্যা ঠিক রাখতে আপনার খাবারের চাটে যুক্ত খাবার নিষিদ্ধ করা জরুরী। ধূমপান এবং অ্যালকোহল উজ্জ্বলতা চাপের জন্য দায়ী। আপনি নিজেকে বিরত রাখবেন। উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তাই সঠিক সময়ে সঠিক ভাবি নিজের ঘুম করা দরকার।
প্রেসার বেড়ে গেলে কি সমস্যা হতে পারে
প্রেসার বেড়ে গেলে অনেক সমস্যা হতে প্রেসার বেড়ে গেলে করণীয় কি তা আমাদের সকলের জানা দরকার। বেড়ে গেলে মানুষের নানা ধরনের সমস্যায় ভুগতে হয়।কারন একজন প্রেসারের রোগীর যেকোনো সময় সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন
১.মাথাব্যথা – এটি উচ্চ রক্তচাপের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ।
২.চোখে ঝাপসা দেখা – উচ্চ রক্তচাপ রেটিনার ক্ষতি করতে পারে, যার ফলে ঝাপসা দেখা, দৃষ্টি হারানো, এবং অন্যান্য চোখের সমস্যা হতে পারে।
৩.ক্লান্তি – উচ্চ রক্তচাপ হৃৎপিণ্ডকে কঠোর পরিশ্রম করতে বাধ্য করে, যার ফলে ক্লান্তি।
৪.হৃদরোগ – উচ্চ রক্তচাপ হৃৎপিণ্ডের পেশীগুলিকে দুর্বল করে, যার ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
৫.কর্ণারি ধমনী রোগ – উচ্চ রক্তচাপ ধমনীতে প্লাক জমা হতে পারে, যা কর্নারি ধমনী রোগের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
৬.হার্ট ফেইলিওর – দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ রক্তচাপ হৃৎপিণ্ডকে দুর্বল করে তোলে, যার ফলে হার্ট ফেইলিওর হতে পারে
পরিশেষে
তাই আপনই যদি হাইপ্রেশার অথবা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগে থাকেন,তাহলে নিয়মিত প্রেসারের ওষুধ খেয়ে যেতে হবে। কোনও ভাবেই আপনি প্রেসারের ওষুধ খেতে ভুলবেন না। প্রেসার যদি নিয়ন্ত্রণে চলে আসে, তবুও এই অবস্থা বজায় রাখতে ওষুধ নিয়মিত খাওয়ার কোন বিকল্প নাই।
এর ব্যাতিক্রম হলে আবার প্রেসার বেড়ে যেতে পারে। তখন শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে। চেষ্টা করতে হবে কয়েক মাস পর পর ব্লাড প্রেসার পরীক্ষা করানোর। প্রয়োজন হলে চিকিৎসক ওষুধ বদলাতে পারেন।
প্রেসার সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ
১.হাই প্রেসার এর রোগীদের কি বমি বমি ভাব হয়??
উত্তর: হ্যা হয়।
২.প্রেসার বেড়ে গেলে কি খাওয়া উচিত নয়?
উত্তর: লবন।
৩.কি খেলে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা বেশি দেখা দেয়?
উত্তর: অ্যালকোহল এবং ধূমপান।
আরও পড়ুন-
কিসমিস খাওয়ার অপকারিতা, খাদ্যাভ্যাস ও সতর্কতা
সর্দি কাশির ট্যাবলেট এর নাম, ব্যাবহার ও সতর্কতা