শারীরিক সুস্থ জীবনের জন্য খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা Sustho-jibone-khaldhula-proyojon Sustho-jibone-khaldhula-proyojon

খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা

মানব জীবনের সবচেয়ে বড় চাওয়া এবং পাওয়া একটি সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যার মূল ভিত্তি হলো মানুষের শরীর। এই জন্যই বলা হয় – স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল । আর মানব শরীরকে সুস্থ রাখতে খেলাধুলা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । তাই  আজ আমরা জানব খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা।

মানুষ অনেক কাল আগে থেকেই স্বাস্থ্যকে সকল সুখের মূল হিসেবে দেখছে। খেলাধুলা মানুষের মনের দুশ্চিন্তা লাঘব করে, সহনশীলতা বাড়ায় এবং দৈহিক পরিশ্রমের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। মেদ চর্বি ইত্যাদি দূর করে সুন্দর ও সুঠাম শরীর গঠনে খেলাধুলার বিকল্প নেই। আর স্বাস্থ্যকে ভালো রাখার জন্য প্রয়োজন। কায়িক শ্রম ও শরীর চর্চার সবচেয়ে ভালো এবং সহজ মাধ্যম হলো খেলাধুলা। নিয়মিত খেলাধুলার মাধ্যম শরীরে প্রয়োজনীয় কায়িক শ্রমের চাহিদা মেটানো যায় এবং এর মাধ্যমে স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধিত হয় । উন্নত স্বাস্থ্য উন্নত চিন্তা ভাবনাকে স্থান দেওয়ার মতো উপযুক্ত মন মানসিকতা তৈরীতে সাহায্য করে ।

খেলাধুলার উদ্ভব 

সুপ্রাচীন কাল থেকেই মানুষ খেলাধুলার সাথে পরিচিত। মানুষ নিজেকে সুস্থদেহী, সবল ও কর্মক্ষম রাখার জন্যে বিভিন্ন খেলার প্রচলন করেছিল। খ্রিষ্টপূর্ব ২০৫০ বছর আগে মিশরে শুরু হয় হকি খেলা। মুষ্টিযুদ্ধ, অসিযুদ্ধ, দৌড়-ঝাপ ইত্যাদির ইতিহাসের সূচনাও প্রায় ৪০০০ বছর আগে। প্রাচীন গ্রিসে অলিম্পিক খেলার সূত্রপাত হয় সেই বিশাল খেলাধুলায় গ্রিসের শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়রা দৌড়, ঝাপ, চাকতি নিক্ষেপ, বর্শা নিক্ষেপ, মুষ্টিযুদ্ধ ইত্যাদিতে অংশ নিত।


আরও পড়ুনঃ  দাবা খেলার নিয়ম


সুঠাম শরীর গঠনে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা 

শরীরের সুস্থতা রাখতে গুরুত্ব কল্পনাতীত। দেহের রক্ত চলাচল ঠিক রাখা, কোষগুলোর উন্নয়ন, পরিপাকতন্ত্র কে সচল ও সেটির কর্মক্ষমতা বজায় রাখা ইত্যাদির জন্য প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করা অত্যন্ত আবশ্যক ।

এছাড়াও নানারকমের রোগ ব্যাধি প্রতিরোধেও খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তার বিকল্প নেই । আবার খেলাধুলার মাধ্যমে মানব শরীরের দৈহিক শ্রমের ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়, শরীরের সহনশীলতা বাড়ায় এবং মনের প্রফুল্লতা বৃদ্ধি করে । যেমন: সাঁতার শরীরের মেদ দূর করে এবং ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বাড়ায় । তাই সুস্বাস্থ্য বজায় রাখাতে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম ।

 

শিক্ষা ক্ষেত্রে খেলাধুলা প্রয়োজনীয়তা 

শিক্ষা জীবনের সূচনার সাথে সাথেই মানুষ খেলাধুলার শিক্ষাও লাভ করে । বর্তমান বিশ্বে বিদ্যাশিক্ষার পাশাপাশি খেলাধুলার শিক্ষাও বেশ গুরুত্ব লাভ করছে বরং বলা যায়,খেলাধুলার শিক্ষা বিদ্যাশিক্ষাকে আরো বেশি আকর্ষণীয় করে তুলেছে । এই কারণে এখন শিক্ষার্থীদের উৎসাহকে বাড়ানোর জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি বছর বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে।

চরিত্র গঠনে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা 

খেলাধুলার মাধ্যমে মানুষ অনেক তাড়াতাড়ি নিয়মানুবর্তিতা শিখতে সক্ষম হয়। এটি মানুষকে সুশৃঙ্খল হতে সাহায্য করে। দলীয় খেলায় কোচ- এর কথা মেনে দলপতি নির্বাচিত হয়। আর দলপতি বা দলের অধিনায়কের কথা মেনে সেই দলের অন্য খেলোয়াড়রা একসাথে মিলেমিশে কাজ করে। এভাবে তারা নৈতিক দিক থেকে সবল হয়ে ওঠে যা তাদের চরিত্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।


আরও পড়ুনঃ বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনা আসবে বাংলাদেশে


মানসিক বিকাশে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা 

সুস্থ জীবনের অন্যতম একটি অংশ হলো মানসিক স্বাস্থ্য। আর মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশ ও উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে খেলাধুলা। মানুষের জীবনে মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশ শুরু হয় শিশুকাল থেকেই।

শৈশব অবস্থা থেকেই খেলাধুলার মাধ্যমেই মানুষের মাঝে সৃজনশীল বিকাশের শুরু হয়,নেতৃত্বের ভূমিকা বুঝতে শুরু করে, প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার মতো সাহস তৈরী হয়। আবার খেলাধুলা মানুষের নৈতিক চরিত্রের বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে।

এছাড়াও খেলাধুলার কারণে মানুষের মাঝে অপরাধপ্রবণতা হ্রাস পায়। তাই সব মিলিয়ে বলা যায়, শিশুর বিকাশের জন্য খেলাধুলা অনেক জরুরি বিশেষ করে প্রয়োজন স্বাধীন খেলাধুলা। যেমন : প্রিটেনড প্লে, পেইন্টিং,বোর্ড গেমস,লুকোচুরি খেলা অথবা রং করা ইত্যাদি।

শিশুদের খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা

শিশু গবেষকদের মতে, শিশুদের পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। তার কারণ খেলাধুলা শিশুমনের ইতিবাচক বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তবে সেই খেলার জন্য যে বড় মাঠের প্রয়োজন এমনটা কিন্তু নয়।

বাড়ির সামনে অল্প জায়গা হলেই তা সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ : দড়িলাফ, হাঁটাহাঁটি, লুকোচুরি, দৌড়াদৌড়ি ইত্যাদি খেলা কারণ এই ধরনের খেলাতে বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় না পাশাপাশি এসব খেলা মানসিক অবসাদ, শারীরিক ক্লান্তি, বিষণ্ণতা দূর করে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় এবং মনকে প্রফুল্ল রাখতে সাহায্য করে।

এছাড়াও খেলাধুলায় শরীরের যে কায়িক শ্রম হয় তার জন্য শিশুদের শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বজায় থাকে। আবার খেলাধুলার মাধ্যমে শিশুরা একে অপরের সাথে মিশতে শেখে, তাদের মাঝে সৃজনশীল কর্মকান্ড ও বুদ্ধিমত্তার প্রকাশ পায়। খেলাধুলার মাধ্যমে শিশুরা সামাজিক আচরনের সাথে পরিচিত হয়, সামাজিক সম্পর্কের সাথে পরিচিত হয়।

তাছাড়া খেলাধুলার কারণে শিশুদের উপস্থিত বুদ্ধি বৃদ্ধি পায়। দলীয় খেলা শিশুদের দূরদর্শিতা এবং পরিকল্পনা শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। দৈহিক শ্রম হয় এমন খেলার মাধ্যমে শিশুদের দৈহিক কাঠামো মজবুত হয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। আবার খেলাধুলার পর শিশুরা দ্বিগুন প্রফুল্লতার সাথে পড়াশোনাতে আগ্রহী হয়।

 

বিদ্যালয়ের খেলার মাঠের প্রয়োজনীয়তা 

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান , শিক্ষা, খেলাধুলা এবং খেলার মাঠ এই চারটি একে অপরের সাথে বরাবরই সম্পৃক্ত। এর মধ্যে একটিও যদি অনুপস্থিত থাকে তবে তার নেতিবাচক প্রভাব বাকি তিনটির ওপর পরে। আর বর্তমানে এই চারটির মধ্যে একটির অর্থাৎ ”খেলার মাঠ“ এর অনুপস্থিতি লক্ষ করা যায় যার নেতিবাচক প্রভাব দিন দিন লক্ষ করা যাচ্ছে।

”খেলার মাঠ“ একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় এবং আপরিহার্য একটি অঙ্গ। কারণ শিক্ষার অন্যতম একটি হলো অংশ হলো খেলাধুলা। তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠ থাকা অত্যন্ত জরুরি। বিদ্যালয়ে বর্তমান ছাত্র ছাত্রীরা তাদের খেলাধুলা ও শরীর চর্চার জন্য যে স্থানটি ব্যবহার করে থাকে তা হলো খেলার মাঠ।

শিক্ষার্থীদের প্রাত্যাহিক জীবনে শরীর চর্চা ও খেলাধুলা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এসবের মাধ্যমে তাদের শারীরিক কাঠামো মজবুত হয় এবং মানসিক দৃঢ়তা বৃদ্ধি পায়। আবার বিদ্যালয়ের এই অংশে বিদ্যালয় কতৃপক্ষের তরফ থেকে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করে যার মাধ্যমে একাধারে শিক্ষার্থীরা আনন্দ পায়,মন প্রফুল্ল তাকে এবং অপরদিকে এই খেলাধুলা তাদের দৈহিক সক্ষমতা বাড়ায়।


আরও পড়ুনঃ চুল পড়ার কারণ


খেলাধুলা ও ছাত্রসমাজ 

পাঠ্যবই এবং খেলাধুলা এই দুটির সমন্বয়েই ছাত্র ছাত্রীদের শরীর ও মনের বিকাশ সাধিত হয়। প্রতিদিনের কাজ একঘেয়েমি এবং মানসিক অবসাদ দূর করতে খেলাধুলা যেমন কার্যকরী ভূমিকা পালন করে তেমনই খেলাধুলার মাধ্যমে ছাত্রসমাজ ঐক্যবোধ এবং শৃঙ্খলাবোধের শিক্ষা পায়।

খেলার মধ্যে ছাত্র ছাত্রীরা তাদের দলনেতা বা দলনেত্রীর আদেশ পালন করতে শেখে। খেলাধুলার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ভ্রাতৃত্ববোধ এবং সৌহার্দ্যমূলক ব্যবহার শেখে এবং সহজেই নিয়মানুবর্তিতা শেখে।

আবার খেলাধুলার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রতিযােগিতার মনোভাব প্রকাশিত ও বিকশিত হয়। তাসের মনে তখন খেলায় জিততে চাওয়ার একাগ্র আকাঙ্ক্ষা তৈরী হয় যা পরবর্তীতে তাদেরকে তাদের জীবনের কঠিন পথগুলোকে অতিক্রম করতে সাহায্য করে।

উপরন্তু এইভাবে তারা সুস্থ ও দায়িত্ববান নাগরিকে পরিণত হয় এবং এইভাবেই উদার মানবচরিত্রের গঠন হয় যা একটি সুস্থ ও শৃঙ্খলাপূর্ণ সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

খেলাধুলার অপকারিতা

আমরা খেলাধুলার উপকারিতা সম্পর্কে অনেক কিছুই জানলাম। কিন্তু জার উপকারিতা রয়েছে তার কিছু না কিছু কারাপ দিক ও রয়েছে। খেলাধুলা তার বিকল্প নয়। খেলাধুলাতে কিছু কারাপ দিক রয়েছে যেমন;

  • অতিরিক্ত খেলাধুলা করলে স্বাস্থ্যর জন্য হুমকি স্বরূপ হতে পারে
  •  ফুটবল, কাবাডি, কুস্তি খেলায় রয়েছে মারাত্মক ঝুকি।
  •  অতিরিক্ত খেলাদুলায় আসক্ত হলে জিবনের স্বাভাবিক বিকাশের অন্তরায় হয়ে দাড়ায়
  •  ছাত্ররা বেশি বেশি খেলাধুলায় আসক্ত হলে পড়াশোনায় মনযোগী হয়না।
  •  অনেক সময় পরাজয় মেনে নিতে না পেরে মারামারি ঝামেলায় জরায়।

আরও পড়ুনঃ ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার উপায়


উপসংহার

খেলাধুলা শুধু শরীর গঠনের সহায়ক না এইটা আনন্দদায়ক। তাই আজ আমরা জানলাম খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে। এই খেলাধুলার মধ্যমে মানুষ তার একটা দায়িত্ব সম্পর্কে উপলব্ধি করতে পারে এবং সে পায় একটি মর্যাদা। খেলাধূলা মানুষের মন ও শরীরকে অনেক দৃঢ় করে। সুন্দরভাবে বাঁচতে শরীর ও মনের সুস্থ্যতার বিকল্প কিছু নেই। খেলাধূলা আমাদের উভয় জিনিসেরই উন্নতি সাধন করে। বর্তমান যুগে খেলাধুলা একটি আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। যার জন্য তরুণরা খেলাদুলার দিকে ঝাপিয়ে পরছে আর আই খেলা টাকে পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছে এবং অনেক এই সফল হচ্ছে।

আশা করি, আমাদের আর্টিকেলটি পরে আপনি অনেক উপকিত হয়েছেন। এবং আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ

 

আরও পড়ুন- 

চুল পড়ার কারণ ও প্রতিকার

ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ ও প্রতিকার

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।