২ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা
গর্ভাবস্থার সম্পূর্ণ সময়কে প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় এই তিনটি ট্রাইমেস্টার এ ভাগ করা হয়েছে। গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় মাস অর্থাৎ ৫-৮ সপ্তাহ প্রথম ট্রাইমেস্টারের অন্তর্ভুক্ত। ২ মাসের গর্ভবতী নারীর শারীরিক এবং মানসিক লক্ষণসমূহ প্রায় ১ম মাসের মতোই হয়।
তবে বেশিরভাগ নারীরা দ্বিতীয় মাসে গর্ভাবস্থা অনুভব করতে পারেন। গর্ভবতী মায়ের প্রতিটি সময় এবং প্রতিটি মুহূর্তই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকলেই একটি গর্ভবতী নারী সুস্থ বাচ্চা জন্ম দিতে পারবে।
খুশির খবর এই যে, বর্তমান সময়ে প্রতিটি সন্তান সম্ভাবা নারী তাদের নিজের যত্ন নিয়ে অনেক বেশি সচেতন। গর্ভাবস্থার বিভিন্ন পর্যায়ের খাবার তালিকা সম্পর্কে তারা অনেক বেশি সার্চ করেন এবং সে অনুযায়ী চলার চেষ্টা করেন। সার্চ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ২ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা।
গর্ভাবস্থায় দ্বিতীয় মাসে কোন খাবারগুলো খাওয়া উচিত এবং কোন খাবারগুলো খাওয়া উচিত না এটা নিয়ে অনেকেই জানতে চান। তাই আপনাদের সুবিধার্থে আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে ২ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা।
এছাড়া আরও আলোচনা করব দ্বিতীয় মাসের শারীরিক লক্ষণ, কোন খাবার খাওয়া যাবেনা, সতর্কতা ইত্যাদি সম্পর্কে। সম্পূর্ণ আর্টিকেল পড়ার অনুরোধ রইল।
আরও পড়ুনঃ গর্ভবতী মায়ের গ্যাসের ঔষধ এর নাম ও খাওয়ার নিয়ম
২ মাসের গর্ভবতী মায়ের শারীরিক লক্ষণ

গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় মাসে গর্ভস্থ ভ্রুণ একগুচ্ছ কোষ থেকে ধীরে ধীরে জীবদেহের একটি আকৃতি লাভ করে। কিন্তু একে মানুষের ভ্রুণ বলে চেনার উপায় নেই। এই সময় হাত-পা থাকে কুঁড়ি আকারে এবং মাথা, গলা ও চোখ থাকে সুস্পষ্ট। পরবর্তীতে কুঁড়ির মতো হাত-পা শনাক্তপযোগী হাত-পায়ে পরিণত হয়।
যকৃত, হৃদপিণ্ড, যৌনাঙ্গ, মেরুদন্ড, স্নায়ুতন্ত্র এবং ফুসফুসের উল্লেখযোগ্য বিকাশ ঘটে। গঠিত হয় অস্থি এবং পেশী। যদিও গর্ভাবস্থার প্রথম দুই মাস পর্যন্ত বেশিরভাগ অঙ্গই থাকে অগঠিত অবস্থায়। তবে দ্বিতীয় মাসের শুরু হয় দেহের বেশিরভাগ অঙ্গতন্ত্র গঠনের কাজ। নিম্নে গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় মাসের শারীরিক লক্ষণগুলো দেওয়া হলো :
- প্রায় প্রতিটি গর্ভবতী নারীর সকালের অসুস্থতা (Morning sickness) প্রকাশ পায়। গর্ভবতী মায়েদের সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর বমির ভাব হতে পারে। অনেকের আবার এই সময় বমিও হয়।
- গর্ভাবস্থার প্রথম মাসের তুলনায় দ্বিতীয় মাসে জরায়ুর আকার বৃদ্ধি পায়। বৃদ্ধি পেতে থাকা জরায়ু বা ইউটেরাস ব্লাডার বা মূত্রথলির ওপর চাপ দিতে থাকে ক্রমাগত। যার কারণে এই সময় প্রস্রাব করার প্রবণতা অনেক বৃদ্ধি পায়।
- দ্রুত মন মেজাজ এর পরিবর্তন (Mood swing) লক্ষ্য করা যায় এই সময়।
- স্তনের উল্লেখযোগ্য কিছু পরিবর্তন হয়। যেমন – স্তনের আকারে বৃদ্ধি পায়, স্তনের বোঁটা (Nipple) গাঢ় রং ধারণ করে ইত্যাদি।
- অদ্ভুত রকম খাবারের প্রবল ইচ্ছা জাগা। যেমন – মাটি, আইসক্রিম, সিগারেটের ছাই ইত্যাদি।
- মুখের মধ্যে অত্যাধিক লালা নির্গমন।
- মাথা ঘোরা এবং মাথা ব্যথা
- বুকে জ্বালা বা অম্বল
- বদহজম বা পেট খারাপ
- কোষ্ঠকাঠিন্য
- রক্তে তরলের ঘনত্ব বৃদ্ধি এবং অনেক বেশি প্রস্রাবের কারণে তৃষ্ণা অনেক বেশি পায়।
- সাদাস্রাব স্বাভাবিকের তুলনায় পুরু বা পাতলা হতে পারে।
- জরায়ুতে ব্যথাজনক টান সৃষ্টি হয়।
২ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকাসমুহ
গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় মাস প্রথম মাসের মতোই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় সুষম খাবারের তালিকা অনেক বেশি ভূমিকা রাখে। ২ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা নিচে আলোচনা করা হলো :
১। ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার
অনাগত শিশুকে নিউরাল টিউবের ত্রুটি থেকে রক্ষা করতে ফলিক অ্যাসিড সাহায্য করে। ফলিক অ্যাসিড এক ধরনের বি ভিটামিন (ভিটামিন বি-৯)। ২ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকাতে অবশ্যই ফলিক এসিড থাকতে হবে।
একজন গর্ভবতী নারীর প্রতিদিন ৬০০ মাইক্রোগ্রাম বা ০.৬০ মিলিগ্রাম ফলিক অ্যাসিড দরকার। খাবার থেকে প্রয়োজনীয় ফলিক এসিডের চাহিদা পূরণ না হলে চিকিৎসকগণ ফলিক এসিড ট্যাবলেট গ্রহণ করার পরামর্শ দেন।
তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট গ্রহণ করবেন। ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবারগুলো হল :
- বিভিন্ন প্রকার শাক যেমন : পালং শাক, পাট শাক, কচু শাক, পুঁই শাক, সজনে পাতা, মেথি শাক, নটে শাক, লাউ শাক, মূলা শাক এবং সবুজ ডাটা শাক।
- বিভিন্ন প্রকার সবজি যেমন : মটরশুঁটি, ফুলকপি, বরবটি, ঢেঁড়স, শিম, ব্রকলি এবং বাঁধাকপি।
- বিভিন্ন ধরনের ডাল যেমন : ছোলার ডাল, মুগ ডাল এবং মাসকলাইয়ের ডাল।
- বিভিন্ন প্রকার ফলমূল যেমন : কমলা, স্ট্রবেরী, মাল্টা, পাকা কলা, অ্যাভোকাডো ইত্যাদি।
- আখরোট, পেস্তা বাদাম, ডিম, চিয়া সিড, সূর্যমুখী বীজ, শতমূলী, লিভার (প্রাণীর যকৃত), সাদা চাল ইত্যাদি।
২। আয়রন সমৃদ্ধ খাবার
গর্ভবতী মায়েদের জন্য আয়রন অপরিহার্য একটি পুষ্টি উপাদান। শিশুর বিকাশে সাহায্য করার পাশাপাশি প্রসবকালে রক্তপাতের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে আয়রন। আয়রনের অভাব হলে শরীর যথেষ্ট পরিমাণ অক্সিজেন পায় না।
যেহেতু ভিটামিন সি শরীরে আয়রন শোষণ বৃদ্ধি করে। তাই আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের পাশাপাশি ভিটামিন সি যুক্ত খাবারও খেতে হয়। আয়রন সমৃদ্ধ খাবারগুলো হলো :
- গরু এবং খাসির মাংস (Red meat), ডিম।
- দুধ এবং পনির।
- বিভিন্ন ধরনের শাক। যেমন : লাল শাক, ডাটা শাক, পাট শাক, মূলা শাক, লাউ শাক, পুঁই শাক, মালঞ্চ শাক ইত্যাদি।
- বিভিন্ন ধরনের মাছ। যেমন : কাচকি, মলা, চাপিলা, টেংরা, শিং ইত্যাদি।
- শুকনো ফল (Dry fruits) এবং বাদাম। যেমন : চিনাবাদাম, পেস্তাবাদাম, আখরোট, খেজুর ও নারিকেল (শুকনো)।
- বিভিন্ন ধরনের বীজ। যেমন : মিষ্টি কুমড়া, সূর্যমুখী, পদ্ম (শুকনো), তিল, তিসি, সরিষা, সয়াবিন ইত্যাদির বীজ।
- সবজির মধ্যে আছে আলু, ব্রকলি, মাশরুম এবং মটরশুটি।
- বিভিন্ন ধরনের ডাল। যেমন : মুগ, মসুর, মটর, ছোলা ও মাসকলাই।
- শস্যদানা যেমন : লাল চাল, যব, ভুট্টা, কাউন, চিড়া ইত্যাদি।
৩। ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার
ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার শিশুর দাঁত এবং হাড়ের বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ২ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকাতে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাবার থাকতে হবে। যেসব খাবারে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় তার তালিকা নিচে দেওয়া হলো :
- দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবার। যেমন : টক দই এবং পনির।
- বিভিন্ন ধরনের শাক। যেমন : লাল শাক, পুইশাক, সবুজ ডাটা শাক, কচু শাক, সজনে পাতা, মেথি শাক ইত্যাদি।
- বিভিন্ন ধরনের মাছ। যেমন : রুই, কাতলা, টাকি, পুটি, টেংরা, ভেটকি, রূপচাঁদা, চিংড়ি, চাপিলা ইত্যাদি। তবে কাঁটাসহ ছোট মাছ খেলে তুলনামূলক বেশি ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।
- শস্যদানা যেমন : গম, যব, কাউন ও চিরা।
- বিভিন্ন ধরনের বীজ। যেমন : সরিষা, তিল ও তিসির বীজ।
- টফু এবং সয়াবিন।
৪। ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার
২ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা অবশ্যই ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবারযুক্ত হতে হবে। শিশুর স্নায়ুতন্ত্র গঠন, ফুসফুস, কিডনি, চোখের সুস্থতা ইত্যাদিতে সাহায্য করে ভিটামিন এ। ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার গুলো হলো :
- দুধ এবং দুদ্ধজাত খাবার। যেমন: দই এবং পনির।
- তৈলাক্ত মাছ এবং ডিম।
- রঙিন ফল। যেমন : পাকা পেঁপে, আম, তাল, ডেওয়া ও বাঙ্গি।
- সবুজ, লাল ও হলুদ সবজি। যেমন : মিষ্টিকুমড়া, মিষ্টি আলু, গাজর, লাল শাক, কচু শাক ও পালং শাক।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : গর্ভাবস্থায় কলিজা এবং মাছের তেল খাবেন না। এই খাবারগুলোতে অতিরিক্ত পরিমাণ ভিটামিন এ রয়েছে। যা গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতি করতে পারে।
৫। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার
গর্ভস্থ শিশুর হাড় এবং টিস্যু বৃদ্ধিতে সহায়তা করে ভিটামিন সি জাতীয় খাবার। দাঁত ও মাড়ির বিকাশেও এই ভিটামিন অনেক কার্যকরী। গর্ভবতী মায়েদের জন্য ভিটামিন সি অতীব জরুরী একটি পুষ্টি উপাদান। মনে রাখবেন, বেশিক্ষণ রান্না করলে ভিটামিন সি এর পুষ্টিগুণ কিন্তু নষ্ট হয়ে যায়। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবারগুলো হলো :
- বিভিন্ন ধরনের ফলে (সাধারণত টক ফল) ভিটামিন সি আছে। যেমন : লেবু, পেয়ারা, আমলকি, আমড়া, জাম্বুরা, জলপাই, জাম, কমলা, মাল্টা ইত্যাদি ।
- কাঁচা মরিচ এবং ধনিয়া পাতা।
- শাকসবজি যেমন : লাল এবং সবুজ ক্যাপসিকাম, ব্রকলি, কাঁকরোল ইত্যাদিতে ভিটামিন সি রয়েছে।
৬। প্রোটিন বা আমিষ সমৃদ্ধ খাবার
গর্ভাবস্থায় ভ্রুনের সঠিক বিকাশের জন্য আমিষ প্রয়োজন। আমিষ বা প্রোটিন মায়ের স্তন কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তাই ২ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকাতে প্রোটিন রাখতে হবে। প্রোটিন বা আমিষ সমৃদ্ধ খাবার হচ্ছে :
- লাল মাংস (Red meat) যেমন : গরু বা খাসির মাংস।
- মুরগী
- ডিম
- দেশি ছোট মাছ
- ডাল (উদ্ভিজ্জ আমিষ) ইত্যাদি
৭। জিংক সমৃদ্ধ খাবার
দুই মাসের গর্ভবতী মায়ের জিংক সমৃদ্ধ খাবার অনেক বেশি প্রয়োজন। বিশেষ করে বমির ভাব, বদহজম বা পেটের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য এই খাদ্য উপাদানটি প্রয়োজনীয়। জিংক সমৃদ্ধ খাবার গুলো হলো :
- আলু
- পেঁয়াজ
- কাজুবাদাম
- মাশরুম
- সবুজ শিম
- মিষ্টি কুমড়ার বীজ ইত্যাদি
৮। স্টার্চ সমৃদ্ধ খাবার
দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় শক্তির চাহিদা পূরণ করতে স্টার্চ সমৃদ্ধ খাবার অনেক জরুরী গর্ভবতী মায়েদের জন্য। গর্ভাবস্থার শুরুতে গর্ভবতী নারীদের জন্য স্টার্চ সমৃদ্ধ খাবার দৈনন্দিন খাবার তালিকায় রাখতে হবে। স্টার্চ সমৃদ্ধ খাবারগুলো হলো :
- ভাত
- রুটি
- লাল আটা রুটি
- আলু ইত্যাদি
৯। আঁশ (Fibre) সমৃদ্ধ খাবার
বেশিরভাগ গর্ভবতী মায়েরা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভোগেন। তাই এই সমস্যা রোধে খাবার তালিকায় অবশ্যই আঁশ সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে। আঁশ বা ফাইবার যুক্ত খাবার গুলো হল :
- বাদামি ভাত (Brown rice)
- ওটস
- ভুট্টা
- ব্রকলি
- সবুজ মটর
- শাকসবজি ইত্যাদি
১০। ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার
শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (Immune system) বৃদ্ধিতে ভিটামিন ডি অনেক কার্যকরী। শিশুর স্বাভাবিক কোষ বিভাজন এবং দাঁত ও হাড়ের বিকাশে সাহায্য করে ভিটামিন ডি। এটি শরীরের ক্যালসিয়াম এবং ফসফেট এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
মনে রাখবেন খাবার থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ডি পাওয়া অনেকটাই অসাধ্য। ভিটামিন ডি এর প্রধান উৎস হচ্ছে সূর্যের আলো। প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট সরাসরি সূর্যের আলোতে থাকতে পারেন।
অনেক সময় এর চাহিদা পূরণ করার জন্য চিকিৎসকগণ এর সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ভিটামিন ডি ট্যাবলেট গ্রহণ করতে বলেন। ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার গুলো হলো :
- বিভিন্ন ধরনের মাংস, ডিম।
- ফর্টিফাইড ভোজ্য তেল।
- বিভিন্ন ধরনের মাছ যেমন : রুই, কাতলা, মৃগেল এবং তেলাপিয়া।
১১। তরল খাবার
গর্ভাবস্থায় শিশুর বৃদ্ধি হরমোনের ব্যালেন্সের জন্য অনেক বেশি তরল খাবারের প্রয়োজন। চিকিৎসকগণ সাধারণত একজন গর্ভবতী নারীকে ১৮-২০ গ্লাস পানি দৈনিক পান করতে বলেন। শুধু বিশুদ্ধ পানি পান করতে সমস্যা মনে হলে পানি জাতীয় খাবার খেতে পারেন। পানি বা তরল খাবার যেমন :
- ডাবের পানি
- স্যালাইন
- চিকেন স্যুপ
- ভেজিটেবল স্যুপ
- ফলের রস ইত্যাদি
১২। অন্যান্য খাদ্য উপাদান
বিভিন্ন ধরনের খাদ্য উপাদান সম্পর্কিত ওপরে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও ২ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকাতে যে সকল খাদ্য উপাদান দরকার তা হলো :
- ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড
- ফ্যাট জাতীয় খাবার (ফাস্টফুট নয় কিন্তু)
- স্বাস্থ্যকর চর্বি (যেমন : ঘি ও সরিষার তেল)
- ভিটামিন বি-৬
- ভিটামিন বি-১২
- আয়োডিন সমৃদ্ধ খাবার
- DHA (Docosahexaenoic acid) সমৃদ্ধ খাবার
বিশেষ দ্রষ্টব্য : আপনার যদি শারীরিক কোন সমস্যা থাকে তবে খাবার তালিকার জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন। আপনার শারীরিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে ডাক্তার আপনাকে একটি উত্তম খাবার তালিকা করে দিবে।
২ মাসের গর্ভবতী মায়ের যত্ন এবং টিপস্
- গর্ভবতী মাকে শারীরিক বা মানসিকভাবে চাপে রাখা যাবে না। শারীরিক বা মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়লে বাচ্চার উপর প্রভাব পড়বে।
- বমির ভাব বা বমি হলে যেন পুষ্টিগুণের অভাব না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে আগের তুলনায় সুষম খাবারের পরিমাণ বাড়াতে পারেন।
- হজমের সমস্যা দূর করতে সহজপাচ্য এবং কম তেল-মসলাযুক্ত খাবার খেতে হবে।
- কিছু খাবার গর্ভাবস্থায় খাওয়া ঠিক নয়। যেমন : আঙ্গুর, কাঁচা বা পাকা পেঁপে, আনারস, ক্যাফেইন জাতীয় খাবার, সামুদ্রিক মাছ, অর্ধ-সিদ্ধ ডিম বা মাংস, লিস্টেরিয়া যুক্ত স্প্রেড মাংস, কাঁচা মাছ, প্রক্রিয়াজাত মাংস, অ-পাস্তুরাইজড দুধ, অ্যালকোহল বা মাদকদ্রব্য।
- প্রথম ট্রাইমেস্টারে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে ভারী কাজ না করতে। এমনকি সংক্রামক রোগী আছে এমন জায়গায় যাওয়া যাবে না।
- প্রতিদিন কমপক্ষে আধা ঘন্টা ব্যায়াম করতে পারেন। ব্যায়াম না করলেও অন্তত কিছুক্ষণ হাঁটতে পারেন।
- প্রথম ট্রাইমেস্টারে সহবাস না করাই উত্তম।
- ভ্রমণের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকবেন। উঁচু-নিচু জায়গা এড়িয়ে চলবেন। ঝাঁকুনি লাগে এমন জায়গায় গাড়িতে না গিয়ে হেঁটে যাওয়ার চেষ্টা করবেন।
- ঢিলেঢালা আরামদায়ক ব্রা পড়তে হবে। পরনের পোশাকও ঢিলেঢালা হলে ভালো হয়।
- রুটিন অনুযায়ী চলার চেষ্টা করতে হবে। যেমন : প্রতিদিন নিয়মমত খাওয়া, সময় করে হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম ইত্যাদি।
- স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বিশ্রাম বেশি করতে হবে। নিজের প্রতি যত্নশীল হতে হবে।
শেষকথা
আশা করছি উপরের আলোচনা থেকে ২ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা সম্পর্কে একটি ধারণা পেয়েছেন। গর্ভবতী মায়ের সুস্থতার উপর নির্ভর করে তার সন্তানের সুস্থতা। মা এবং শিশুর সুস্থতার জন্য আশেপাশের সবাইকে অনেক সাহায্য করতে হবে।
২ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা সম্পর্কে যদি কোন প্রশ্ন থাকে আপনাদের অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না। আমরা আপনার মূল্যবান কমেন্টের উত্তর দিতে প্রস্তুত। সবার সুস্থতা কামনা করে আজকে বিদায় নিচ্ছি।
২ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা সম্পর্কে প্রশ্ন এবং উত্তর / FAQ
১. গর্ভবতী মা কি রুটি খেতে পারবে?
উত্তর : হ্যাঁ, একজন গর্ভবতী মা অবশ্যই রুটি খেতে পারবে। কারণ একজন গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিন ১৭৫-২১০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট প্রয়োজন।
২. গর্ভাবস্থায় কত সপ্তাহে তিন মাস হয়?
উত্তর : গর্ভাবস্থায় ৯-১২ সপ্তাহ হচ্ছে তিন মাস।
৩. ২৮ সপ্তাহ কি তৃতীয় ত্রৈমাসিক?
উত্তর : হ্যাঁ, গর্ভাবস্থার ২৮ সপ্তাহ তৃতীয় ত্রৈমাসিকের অন্তর্ভুক্ত।
৪. গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন কমপক্ষে কত প্রোটিন প্রয়োজন হয়?
উত্তর : একজন গর্ভবতী নারীর প্রতিদিন প্রায় ৬০ গ্রাম প্রোটিনের প্রয়োজন।
আরও পড়ুন-
গর্ভবতী মায়েদের খাবার তালিকা ও খাবারের নিয়মাবলী
গর্ভবতী হওয়ার ঔষধের নাম, খাওয়ার নিয়ম ও সতর্কতা