৬ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা
একজন নারীর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি সময় গর্ভাবস্থা। এসময় একদিকে গর্ভাবস্থায় মা দুশ্চিন্তা করে নিজের ও সন্তানের সুস্বাস্থ্য নিয়ে অন্যদিকে সন্তান জন্মদানের আনন্দ কাজ করে।
অনেক গুলো ধাপের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় একজন গর্ভবতী মাকে। এ মসয় গর্ভবতী মায়ের পরিবর্তন আসে একেকটা ধাপে একেক রকমের। একজন গর্ভবতী মায়ের যত্ন নেওয়ার ধরণও আলাদা এই সময়গুলোতে।
শিশুর স্বাভাবিক জন্ম নির্ভর করে মায়ের যত্নের উপরেই। অনেক ধরণের মতামত আছে গর্ভবতী মায়ের যত্ন নিয়ে। একজন গর্ভবতী মায়ের সেবায় অবহেলা করা উচিত নয় যা মা ও শিশুর জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে থাকে। তাই একজন গর্ভবতী মা ও তার পরিবারকে ৬ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা সর্ম্পকে ধারণা থাকতে হবে।
আজকে আমাদের আলোচনার মুল বিষয় হল ৬ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা। আশা করছি এই কথাগুলো আপনাদের অনেক প্রয়োজনে লাগবে।
আরও পড়ুন- নাভি কেমন হলে ছেলে হয়, সঠিক ধারনা ও তথ্যসমুহ
৬ মাসের গর্ভবতী মায়ের যত্নের প্রয়োজনীয়তা

শিশুর উন্নয়নমূলক কার্যক্রমগুলো আরো দ্রুত হয়ে থাকে একজন গর্ভবতী মা যখন ৬ মাসের গর্ভাবস্থায় পদাপর্ণ করে। আগের থেকে দ্রুত গতিতে গর্ভর শিশুর বিকাশ হয়ে থাকে। মায়ের সঠিক যত্ন নিতে হবে এই সময় বাচ্চার বৃদ্ধিতে যাতে কোন বাধা না আসে সে জন্য।
কারণ শিশু তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায় মায়ের মাধ্যমেই। এসময় গর্ভবতী মাকে ৬ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা সর্ম্পকে সচেতন হতে হবে।
এছাড়াও নানা রকম পরিবর্তন দেখা যায় ৬ মাসের গর্ভবতী মায়ের। যেমন: পিঠে যন্ত্রণা, পা ফুলে ওঠা, যোনিতে সাদা স্রাব, গ্যাস্টিক এর সমস্যা বৃদ্ধি কিংবা মাড়ি ফুলে রক্ত বের হওয়া ইত্যাদি সমস্যা এ সময় দেখা দেয়। এসব কারণে শরীরে পুষ্টির চাহিদা বেশি থাকে ৬ মাসের গর্ভবতী মায়ের।
একদিকে মায়ের স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে এই ঘাটতি পুরণ না হলে। অন্যদিকে বিভিন্ন সমস্যা তৈরী হয় সন্তান জন্মের আগে এমনকি গর্ভপাত ও হতে পারে। তাই এ সময় গর্ভবতী মায়ের অতিরিক্ত যত্ন ও পুষ্টিকর খাবার প্রয়োজন হয়।
৬ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা
একজন গর্ভবতী মাকে অনেক রকম পুষ্টিকর খাবার খেতে হয়। কারণ এ সময় সন্তান দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে তাই মায়ের শরীরে পুষ্টির ঘাটতি দেখা দেয়। নিম্নে৬ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা সর্ম্পকে আলোচনা করা হলো:
ফল এবং শাকসবজি
১। বেরি (স্ট্রবেরি, রাম্পবেরি, র্বলুবেরি)
২। আপেল
৩। সাইট্রাস ফল
৪। কলা
৫। শাক-সবজি (পালংশাক, লেটুস, কেল)
৬। গাজর
৭। ব্রকলি
৮। বেল মরিচ
শস্যদানা
১। বাদামী ভাত
২। গমের পাউরুটি
৩। কুইনোয়া
৪। ওটস
৫। যব
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার
১। মাছ (সার্ডিন, স্যামন)
২। চর্বিহীন মাংস (টার্কি,মুরগি,চবিহীন গরুর মাংস)
৩। ডিম
৪। তোফু
৫। লেগুম (ছোলা,মটরশুটি, মসুর ডাল)
৬। বাদাম এবং বীজ ( বাদাম, চিয়া বীজ, আখরোট)
৭। গ্রীক দই
দুগ্ধজাত পণ্য
১। পনির (মোজারেলা, কুটির পনির)
২। দুধ
৩। দই (সাধারণ বা গ্রীক দই)
স্বাস্থ্যকর চর্বিজাতীয় খাবার
১। জলপাই তেল
২। অ্যাভোকাডোস
৩। নারকেল তেল
৪। চর্বিযুক্ত মাছ (ম্যাকেরেল, স্যামন)
৫। বাদাম এবং বীজ (তিসি বীজ,আখরোট)
আয়রন সমৃদ্ধ খাবার
১। পালং শাক
২। মসুর ডাল
৩। চর্বিহীন মাংস
৪। তোফু
৫। ছোলা
৬। সুরক্ষিত সিরিয়াল
ক্যালসিয়ামের উৎস
১। দই
২। দুধ
৩। পনির
৪। সয়া দুধ, বাদাম দুধ
৫। পাতাযুক্ত শাক ( কেল, কলঅর সবুজ শাক)
স্বস্থ্যকর খাবার
১। ট্রেল মিশ্রণ (বাদাম,বীজ,শুকনো ফল)
২। ফলের সাথে গ্রীক দই
৩। সবজি লাঠি সঙ্গে
৪। ফল,দই এবং পালং শাক দিয়ে স্মুদি।
৫। পানির সঙ্গে পুরো শস্য ক্র্যাকারস
হাইড্রেটেড থাকার জন্য সারাদিন প্রচুর পানি পান করতে হবে। নিবন্ধিত খাদ্য বিশেষজ্ঞের সাথে পরমর্শ করে অর্ন্তনিহিত স্বাস্থ অবস্থার উপর ভিত্তি করে ৬ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা দেওয়ার জন্য সুপাডরিস করতে হবে।
৬ মাসের গর্ভবতী মায়ের ফল খাওয়ার তালিকা
১। কলা
২। আপেল
৩। বেরি
৪। কমলালেবু
৫। কিউই
৬। আম
৭। আনারস
৮। পেঁপে
৯। আঙ্গুর
১০। তরমুজ
১১। নাশপাতি
১২। সাইট্রাস ফল
১৩। অ্যাভোকাডো
১৪। পীচ
১৫। চেরি
১৬। বরই
১৭। পেয়ারা
১৮। ডালিম
১৯। ক্যান্টালুপ
২০। এপ্রিকটস
এ সকল ফল মা এবং শিশু উভায়ের স্বাস্থের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই ফলগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ফোলাটে, পটাসিয়াম এবং ভিটামিন এ থাকে।
গর্ভবতী মায়ের কোন খাবার গ্রহণ করা উচিৎ নয়
আমরা অনেকে ৬ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা সর্ম্পকে জানতে চায়। কিন্তু আমরা অনেকে জানি না এ সময় কোন কোন খাবার খাওয়া যায় না। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো:
১। কাঁচা বা কম রান্না করা মাংস
২। দুগ্ধজাত পণ্য
৩। কাঁচা বা কম সিদ্ধ ডিম
৪। কাঁচা ঝিনুক
৫। নির্দিষ্ট সামুদ্রিক খাবার
৬। অ্যালকোহল
৭। ক্যাফেইন
৮। কৃত্রিম সুইটনারের অত্যাধিক গ্রহণ
৯। ডেলি মিটস এবং কিছু নরম চীজ
৬ মাসের গর্ভবতী মায়ের করণীয়
গর্ভাবস্থার ছষ্ঠ মাসে, একজন মাকে মানসিক এবং শারীরিক সুস্থতার যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি মাকে আসন্ন সন্তানের আগমনের প্রস্তুতি দিকে মনোনিবেশ করা উচিত। ৬ মাসের গর্ভবতী মায়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরমর্শ নিম্নে দওয়া হলো:
১। নিয়মিত প্রসবপূর্ব চেক-আপে যোগ দিতে হবে:
স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রসাবপূর্ব চেক- আপে যোগদান চালিয়ে যাওয়া নিয়মিত। গর্ভবতী মায়ের উদ্বেগ বা প্রশ্নগুলোর সমাধান করতে শিশুর বৃদ্ধি, স্বাস্থ নিরীক্ষণ করতে, এবং মানশিক বিকাশ ইত্যাদি জানার জন্য নিয়মিত স্বাস্থ পরিক্ষা করতে হয়।
২। স্বাস্থকর এবং সুষম খাদ্য খান
সঠিক পুষ্টি অত্যাবশ্যক গর্ভাবস্থায়। ৬ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা সুষম খাদ্য গ্রহণের পাশাপাশি গোটা শস্য,সবজি, বিভিন্ন ধরণের ফল এবং স্বাস্থকর চর্বি এবং চর্বিহীন প্রোটিন থাকতে হবে। নিজেকে হাউড্রেটেড থাকার জন্য সারাদিন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
৩। প্রসবপূর্ব ভিটামিন গ্রহণ করা
প্রসবপূর্ব স্বাস্থসেবা প্রদানকারী দ্বারা নির্ধারিত ভিটামিন নিয়মিত সেবন করতে হবে। কারণ এই ভিটামিন প্রয়োজনীয় পুষ্টির যোগান, আয়রন, ফলিক এসিড, ক্যালসিয়াম প্রাপ্তি নিশ্চিত করে থাকে যা শিশুর বিকাশ এবং স্বাস্থ উভয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৪। একটি স্বাভাবিক ব্যপার গর্ভাবস্থায় বার বার খিদে পাওয়া। তবে ফল এবং সবজির মতো খাবার গ্রহণ করতে হবে ক্ষুধা নিবারণের জন্য।
৫। গর্ভাবস্তায় খুব আগ্রহ জন্মায় অন্যান্ন মুখরোচক এবং ফাস্ট ফুড খাবারের প্রতি কন্তু কষ্ট হলেও এসব খাবার পরিহার করতে হবে।
৬। কোন ঔষধ সেবন করা যাবে না ডাক্তারের পরমর্শ ব্যতীত।
৭। চেষ্টা করতে হবে ধীরে ধীরে খাবার খাওয়ার।
৮। বার বার খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে একবারে বেশি না খেয়ে।
৯। ধীরে ধীরে হাঁটতে হবে হাঁটাচলা বন্ধ করা যাবে না।
১০। কোন ভারী ব্যায়াম করা যাবে না চিকিৎসকের পরমর্শ ছাড়া।
শেষ কথা
গর্ভের শিশুর সকল শারীরিক চাহিদা, শক্তি এবং বৃদ্ধি উৎস হলো মা। তাই একটি সুস্থ শিশু জন্ম দেওয়ার জন্য মা এর প্রতি যত্নবাণ হতে হবে। তবে এখনোও অনেকে সচেতন না মা ও শিশুর স্বাস্থ্য নিয়ে। এ জন্য অনেক গর্ভবতী মা খুব ঝুঁকিপূর্ণ তাদের সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে।
কারণ গর্ভাবস্থায় সব যত্ন নেওয়া সম্ভাব হয় না একা মায়ের পক্ষে। গর্ভাবস্থায় যত্নের দরকার পড়ে বিভিন্ন ধাপে আলাদা আলাদা। ৬ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা উপর বিশেষ নজর রাখতে হবে। একজন গর্ভবতী মা খুবই জটিল সময় পার করে ছয় মাসের গর্ভাবস্থায়।
গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ
১। কি খেলে গর্ভের সন্তান সুন্দর হয়?
উত্তরঃ জাফরান গর্ভের শিশুর গায়ের রঙ ফর্সা করে। চেরি ও বেরি জাতীয় ফলে উচ্চমাত্রার অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং ত্বকের ক্ষতি রোধ করে। তাই স্ট্রবেরি, ব্ল্যাক বেরি, ব্লু বেরি ইত্যাদি ফল খাওয়া হয় সুন্দর ত্বকের জন্য।
২। গর্ভাবস্থায় কত সপ্তাহে কত মাস?
উত্তরঃ শিশুর জন্ম সর্বশেষ রজঃস্রাবের সময় থেকে প্রায় ৪০ সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয় এবং শিশু জন্মের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয়। মাত্র দশ মাস দশ দিনে মাসে এই প্রক্রিয়ার সমাপ্তি ঘটে থাকে যেখানে প্রতি মাসে প্রায় ৩১ দিন হয়। এটি গর্ভ সঞ্চারের প্রায় ৩৮ সপ্তাহ পরে হয়ে থাকে।
৩। গর্ভাবস্থায় লবণ খাওয়া যাবে কি?
উত্তরঃ যেহেতু গর্ভাবস্থায় বিশেষ করে থার্ড ট্রাইমেস্টারে উচ্চ রক্তচাপের একটা ঝুঁকি থাকে তাই খুব বেশি লবণ খাওয়া যাবে না। তাছাড়া লবণ ও অন্যান্য লবণযুক্ত খাবার বেশি খাওয়ার ফলে পায়ে পানি আসতে পারে।
আরও পড়ুন-
গর্ভবতী হওয়ার প্রথম মাসের লক্ষণ ও সতর্কতা
৭ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া ও জরুরী সতর্কতা