নাপা সিরাপ খাওয়ার নিয়ম ও প্রয়োজনীয় তথ্য

নাপা সিরাপ খাওয়ার নিয়ম

নাপা আমাদের অতি পরিচিত একটি প্যারাসিটামল ওষুধ। এই ওষুধটি মুলত আমরা জ্বর বা সর্দি কাশিতে শরীর অতিরিক্ত গরম হলে সেবন করি। তবে অনেকেই পরিমান না জেনেই নাপা সিরাপ সেবন করে। যা অনেক সময় শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

আজকাল আমাদের সর্দি, কাশি এবং জ্বর শরীরের সঙ্গী হয়ে গেছে। ফলে রোজ রোজ ডাক্তারের কাছে যাওয়াও সম্ভব হয়ে উঠেনা।

নাপা সিরাপ খাওয়ার নিয়ম নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকে। তবে সবসময় আমাদের নিয়ম গুলো জানা থাকে না। আজকের আর্টিকেলে নাপা সিরাপ ব্যবহারের নিয়ম গুলো আপনাদের জন্য খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছি।

এই আর্টিকেলটি এমনভাবে সাজানো হয়েছে যার মাধ্যমে আপনি সকল বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন এবং সে অনুযায়ী ঔষধ ব্যবহার করে সমস্যার সমাধান করতে পারবেন।

আরও পড়ুনঃ টাইফয়েড জ্বর কতদিন থাকে, চিকিৎসা ও প্রতিকার

নাপা সিরাপ ব্যবহারের নিয়ম 

নাপা সিরাপ খাওয়ার নিয়ম

নিম্নে নাপা সিরাপ খাওয়ার নিয়ম আলোচনা করা হলো।

ট্যাবলেট

এডাল্টদের জন্য : 1-2 টি ট্যাবলেট 4-6 ঘন্টা পর পর দিনে সর্বোচ্চ মোট 8 টি ট্যাবলেট সেবন করা যেতে পারে।

শিশু (6-11 বছর) : অর্ধেক থেকে 1টি ট্যাবলেট দিনে 3-4 বার খাওয়াতে হবে ।

সিরাপ

শিশু (3 মাসের নীচে) : 10 mg  হিসাবে (জন্ডিস থাকলে 5 mg হিসাবে) দিনে 3-4 বার খাওয়াতে হবে।

3 মাস – 1বছরের নীচে : 1/2 থেকে 1 চা চামচ দিনে 3-4 বার খাওয়াতে হবে।

1-5 বছর : 1-2 চা চামচ দিনে 3-4 বার সেবন করতে হবে।

6-12 বছর : 2-4 চা চামচ দিনে 3-4বার সেবন করতে হবে।

প্রাপ্তবয়স্ক: 4-8 চা চামচ দিনে 3-4 বার সেবন করতে হবে।

এক্স আর ট্যাবলেট : 2টি করে ট্যাবলেট দিনে 3 বার সেবন করতে হবে।

সাপোজেটরি : 1-5 বছর : 125-250 mg দিনে 4 বার সেবন করতে হবে।

6-12 বছর বয়সের বাচ্চাদের জন্য : 250-500 mg দিনে 4 বার সেবন করতে হবে।

প্রাপ্ত বয়স্ক ও 12 বছরের বেশী বয়সের বাচ্চাদের জন্য : 0.5-1g দিনে 4 বার সেবন করতে হবে।

পেডিয়াট্রিক ড্রপস্ : বাচ্চা : 3 মাস বয়স পর্যন্ত : 0.5 মি.লি (40mg), দিনে 4 বার ।

4-11 মাস বয়স পর্যন্ত : 1 মি.লি. (80 mg), দিনে 4 বার। 1-2 বছর বয়স পর্যন্ত : 1.5 মি.লি. 

(120 mg), দিনে 4 বার।

নাপা সিরাপ খাওয়ার উপকারিতা

নাপা সিরাপ একটি প্রয়োজনীয় ও প্রভাবশালী ঔষধ যা সবসময় এবং সহজেই আশেপারের ঔষুধের দোকানে পাওয়া যায়। নাপা সিরাপ খাওয়ার নিয়ম হলো এটি বেশিরভাগ মানুষ ব্যবহার করেন সর্দি,  কাশির ও জ্বর হলে। এই সিরাপের এর উপকারিতা নিম্নলিখিত আলোচনা করা হলো।

১। সর্দি ও কাশি নিরাময়

নাপা সিরাপ সর্দি ও কাশির লক্ষণগুলি কমায় ও সাধারণের  নিরাময় প্রদান করে। এই সিরাপ সেবন কারলে সর্দি কাশির হওয়াতে বাধা দেয়।

২। গলা প্রশ্বাস ও এক্সপেক্টোরেন্ট

নাপা সিরাপ গলা প্রশ্বাসে সাহায্য করে ও এক্সপেক্টোরেন্ট বিকারপ্রাপ্ত নাসাল মালাস্ত্রণের অবস্থায় মুক্তি প্রদান করে।

৩। শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা

নাপা সিরাপ একটি দ্রবণীয় ঔষধ যা শরীরের তাপমাত্রা কমায় যার ফলে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ থাকে।

৪। মিউকাসে ও পার্শ্বপ্রতিরোধ করতে সাহায্য করা

নাপা সিরাপ মিউকাসের প্রসারণ ও পার্শ্বপ্রতিরোধ করে যা নাসাল পাঠালির উন্নত স্বাভাবিক কাজে সাহায্য করতে পারে।

৫। কাশি থেকে মুক্তি

নাপা সিরাপের ব্যবহার মাধ্যমে কাশির মুক্তি হতে পারে এবং কাশির পরিমাণ কমাতে সাহায্য করতে পারে।

৬। কাশি প্রতিরোধ

এটি কাশির প্রতিরোধের ক্ষমতা প্রদান করে।

নাপা সিরাপ খাওয়ার নিয়ম এর এই উপকারিতা গুলি বিভিন্ন ব্যক্তির স্বাস্থ্যের অবস্থার উপর নির্ভর করে। তবে, যদি কোনও ধরনের অসুস্থতা বা কোন ধরনের ঔষধের ব্যবহারে সন্দেহ থাকে, পেশাদার চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।

নাপা সিরাপ খাওয়ার নিয়ম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

নাপা সিরাপ খাওয়ার কিছু সাধারণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে। যেমন:

১। মুখের সুস্থ রঙের পরিবর্তন

কিছু মানুষের কাছে নাপা সিরাপ খেলে মুখের রঙের পরিবর্তন হয়ে থাকতে পারে। 

২। জিহ্বার বা মুখের পাশের প্রতিরোধ

কিছু মানুষের কাছে জিহ্বার বা মুখের পাশে স্থানীয় বা ভেদভাবে প্রতিরোধ হতে পারে।

৩। অনিয়ন্ত্রিত হাঁচির অনুভূতি

কিছু মানুষের কাছে নাপা সিরাপ খাওয়ার পর অনিয়ন্ত্রিত হাঁচি আসতে পারে।

৪। কানের ক্ষতিসাধ্যতা

কোন মানুষের কাছে নাপা সিরাপ খেলে তারা অস্থির অবস্থা অথবাকানে অস্থিরতা অনুভব করতে পারে।

৫। পাচন সমস্যা

কিছু মানুষের কাছে নাপা সিরাপ খেলে পাচনের সমস্যা হতে পারে।

এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার মধ্যে কোনটি ও গভীরভাবে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে তা নয়, তবে যদি কোন অস্বাভাবিক অনুভূতি অনুভব করা হয়, তবে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।

সতর্কতা

যাদের কিডনি ও লিভারের  সমস্যা আছে তাদের নাপা ওয়ান সাবধানতার সাথে সেবন করা উচিত।  লিভারের উপর প্রভাব পড়ে এমন ঔষধের সাথে নাপা ওয়ান সেবনের সর্তকতা অবলম্বন করা উচিত।

মিথস্ক্রিয়া

যারা অতিরিক্ত বারবিচুরেট জাতীয় ও বিষন্নতারোধী ট্রাইসাইক্লিক জাতীয় ঔষধ গ্রহণ সেবন করেন এবং যারা নিয়মিত এলকোহল পান করে তাদের ক্ষেত্রে নাপা ওয়ানের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে।

যারা অতিরিক্ত এলকোহল পান করেন তারা যদি নাপা ওয়ান সেবন করেন তাহলে তাদের লিভারের বিষক্রিয়া আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। এছাড়া খিচুনিবিরোধী ঔষধ, স্টেরয়েডজাতীয় ঔষুধ এবং জন্মনিরোধকের দীর্ঘ দিন ধরে ব্যবহার করে তাদের লিভার এনজাইমকে প্রণোদিত করে।

ফলে এ জাতীয় ঔষধের সাথে যদি নাপা সিরাপ সেবন করা হয় তাহলে কোন কার্যকর হবে না বরং ক্ষতি হতে পারে ফলে আমার জানা গুরুত্বপূর্ণ নাপা সিরাপ খাওয়ার নিয়ম গুলো।

উপসংহার

আলোচনা পরিশেষে আমরা জানতে পারলামনাপা সিরাপ খাওয়ার নিয়ম এবং এই সিরাপ খেলে কি ধরনের সমস্যা হয়।সাধারণ ঠান্ডা জনিত সমস্যা হলে নাপা সিরাপ সেবন করা হয় এবং খুব সহজেই এই সিরাপ পাওয়া যায়।

এই সিরাপের তেমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নাই বলতে গেলেই চলে তবে নাপা সিরাপ সেবন করার আগে অবশ্যই একজন প্রফেশনাল চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। 

নাপা সিরাপ সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ

১। নাপা সিরাপ কত সময় পর পর খাওয়া যায়?

উত্তরঃ নিম্নের 5টি ক্ষেত্রে একজন প্রপেশনাল ডাক্তারের অনুমতি ছাড়া বাচ্চাদেরকে প্যারাসিটামল ঔষিধ সেবন করাবেন না— .

প্রতি চা চামচ সিরাপে 5 মিলিলিটার (ml) অথবা 120 মিলিগ্রাম (mg) প্যারাসিটামল ঔসুধ থাকে। এক ডোজ প্যারাসিটামল সিরাপ সেবন কারানোর পর কমপক্ষে 4 ঘন্টা পরে পরবর্তী ডোজ সেবন করানো  যাবে। 

২। জ্বরের জন্য কোন নাপা ভালো?

উত্তরঃ Napa 500 mg জ্বরের জন্য বেশি ভালো। তবে জ্বর ছাড়াও আমরা যে সব কারনে নাপা ব্যবহার করে থাকি তাহলো সাধারণ সর্দি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, মাথাব্যথা, দাঁত ব্যথা, কানের ব্যথা, শরীর ব্যথা, মায়ালজিয়া, নিউরালজিয়া, ডিসমেনোরিয়া, মচকে যাওয়া, কোলিক ব্যথা, পিঠে ব্যথা, অপারেটিভ ব্যথা, প্রসব পরবর্তী ব্যথা, প্রদাহজনিত ব্যথা এবং টিকা দেওয়ার পর ব্যাথা ইত্যাদি কারণে ব্যবহার করা হয়।

আরও পড়ুন –

টাইফয়েড জ্বরের এন্টিবায়োটিক, সতর্কতা ও চিকিৎসা

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা

Leave a Comment