সুস্থ জীবনের জন্যে স্বাস্থ্যকর খাবার sustho-jibone-jonno-sasthokor-khabar

সুস্থ থাকার জন্য খাবারের তালিকা

দেহের উন্নতি সাধন করতে এবং সামগ্রিক সুস্থ্যতা বজায় রাখতে। যে সকল সুস্থ থাকার জন্য খাবারের তালিকা আমাদের শরীরে প্রয়োজন সেসকল খাবারকে স্বাস্থ্যকর খাবার বলে। খাদ্যের ছয়টি উপাদানের সবকটিই মানব শরীরের গঠন এবং সুস্থ থাকার জন্যে অবশ্য প্রয়োজনীয়।

স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল, এই কথাটি আমরা শুনে শুনে বড় হয়েছি সেই শৈশব কাল থেকে। অনেক শুনে থাকলেও সেই সুন্দর স্বাস্থ্য রক্ষা করতে কিন্তু আমরা তেমন কিছুই করি না। অনেক ভেবে ভেবেও ঠিক করা হয়ে উঠে না অনেক সময় তুমুল ব্যস্ততার জন্যে, মাঝে মাঝে আলসেমির জন্যে। কিন্তু যতদিনে আমরা বুঝতে পারি ততদিনে দেখা যায় আমরা মারাত্নক কোন এক রোগ বাধিয়ে বসে আছি আমাদের সুন্দর শরীরে।

তাই সময় থাকতে সাবধান হওয়া খুব জরুরি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অপুষ্টি থেকে সুরক্ষা প্রদান করে, এবং অ-সংক্রামক রোগব্যাধি যেমন বহুমূত্র রোগ, হৃদরোগ,সন্ন্যাস রোগ বা স্ট্রোক ও কর্কট রোগ (ক্যানসার) প্রতিরোধে সাহায্য করে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কিছু ছোট ছোট পরিবর্তন আনার মাধ্যমেই আমরা ধরে রাখতে পারি দীর্ঘকালীন সুস্থ্যতা আর পেতে পারি রোগহীন জীবন। আসুন জেনে নিই কি ভাবে আমরা সুস্বাস্থ্য ধরে রাখব।

স্বাস্থ্য কি (Health)

স্বাস্থ্যকে ভেবে দেখুন ব্যাপারটি এমন সহজ নয়।হয়তো বয়স অনুযায়ী আপনার যে ওজন, যে কর্মক্ষমতা থাকার কথা তা আপনার নেই । অন্যেরা আপনাকে স্বাস্থ্যবান মনে করেনা, আপনি তো নন—ই। তাহলে স্বাস্থ্যকে সংজ্ঞায়িত করব কিভাবে? অগত্যা বিশ্বস্বাস্থ্যসংস্থা  (WHO) বর্ণিত, একটি মোটামুটি সর্বমান্য সংজ্ঞার সাহায্য নেয়া যাক।সেই মতে, অসুস্থতা বা অক্ষমতার অনুপস্থিতিই স্বাস্থ্য নয়; শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক, এই তিনদিকে পরিপূর্ণ ভাবে ভালো থাকাই হ’ল স্বাস্থ্য।সুন্দর সংজ্ঞা বটে।কিন্তু আমাদের বোধগম্যতার গোলমিটলকি ? আমার তো মনেহচ্ছে, কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ উঠে এল । আসলে আমরা আমাদের শরীর নিয়েই ভাবছিলাম।এখন এর মধ্য মন ও সমাজ যুক্ত হয়ে পুরো বিষয়টাকে গুবলেট পাকিয়ে দিল।

সাধারণত স্বাস্থ্য বলতে শারীরিক আর মানসিক স্বাস্থ্যকেই বোঝায়। এই দুই ধরণের স্বাস্থ্যকে বজায় রাখার জন্য আধ্যাত্মিকতা, আর্থিক সচ্ছলতা, নিয়ন্ত্রিত আবেগ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

 

স্বাস্থ্য ভালো করার উপায়

১.রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা ২.শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগানো ৩.শরীরকে শক্তি সামর্থ্য দেওয়া। ৪.শরীরকে কর্মক্ষম রাখা ৫.শরীরকে রোগমুক্ত রাখা ৬.শরীরের গঠন, বৃদ্ধিসাধন ও ক্ষয়পূরণ এইসবগুলো কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন হবে। যদি আমরা কিছু অভ্যাস নিয়মিত করে ফেলতে পারি আমাদের রুটিনের সাথে।


আরও পড়ুনঃ অস্থিরতা দূর করার উপায়


সুষম খাদ্যের তালিকা

প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০০ গ্রাম ফল ও শাকসবজি খাওয়া উচিত। ৪০০ গ্রামকে সহজে বোঝাতে গেলে বলতে হবে প্রায় পাঁচ মুঠোর মতো শাক সবজি প্রতিদিন খাবারের রুটিনে রাখতে হবে। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাসে শিম জাতীয় খাদ্য ডাল আছাঁটাশস্যদানা (যেমন: অপ্রক্রিয়াজাত ভুট্টা,যব, জোয়ার, জই ও লাল চাল) ও বাদাম-ও অন্তর্ভুক্ত। Good Protein যেমন ডিম, দুধ, মাছের তেল, বাদাম, মাখন এসব স্নেহ জাতীয় খাবার আমাদের শরীরে শক্তি যোগাতে সহায়তা করে। তবে এর পরিমান বেশি হলে ফ্যাটি এসিড,মেদ,দুর্বলতা এবং অলসতা সহ আরও নানান সমস্যা দেখা দেয়।

সুস্থ থাকার উপায়

গবেষনায় দেখা গেছে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাটলে যে পরিমাণ ক্যালরি ঝরে পরে শরীর থেকে সেটা অনেক সময় ভারি ব্যায়াম বা কার্ডিও করলেও হচ্ছে না এবং এই ৩০ মিনিটের হাটার ফলে ভবিষ্যতে ডায়বেটিস এড়ানো সম্ভব বলে ডাক্তাররা মনে করেন। হাটা প্রাচীন কাল থেকেই অনেক বড় ঔষধ হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে, খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে হাটলে শরীর ও মন দুইই সুস্থ থাকে। সকালের প্রথম দিকে কর্টিসল (cortisol) এবং গ্রোথ হরমোন সহ হরমোনগুলো লিভারকে  উৎপাদন বাড়াতে সংকেত দেয়, যা আমাদেরকে ঘুম থেকে উঠতে সাহায্য করে এবং শক্তি সরবরাহ করে।

এটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষকে ইনসুলিন মুক্ত করতে সক্রিয় করে। সকালে খালি পেটে হাটলে প্রচুর ঘাম ঝরে শরীর থেকে আর তার সাথে ঝরে পরে ক্ষতিকর ফ্যাট। একটি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস এখন অনেকের মধ্যেই লক্ষ্য করা যায় আর সেটি হলো ঘুম থেকে উঠেই খালি পেটে সহনীয় তাপমাত্রার গরমপানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়া, এটি অনেক ক্ষেত্রেই পরিক্ষিত যে টানা ৭ দিন এভাবে খেলে আর সাথে লো কার্ব ডায়েট মেনে চললেই এই অভ্যাস দারুনভাবে ওজন কমাতে সাহায্য করবে আর এতে মেটাবলিজমও বাড়বে, কিডনির পাথর হওয়াও রোধ করতে পারে সকালের এই এক গ্লাস লেবু পানি।

শরীর চর্চার কথা না বললেই না, দিনে মাত্র ৩০ মিনিটের ব্যায়াম আপনাকে দিতে পারে একটি সুস্থ জীবন, দূরে রাখতে পারে উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়েবিটিস এর মত রোগকে, আর যদি সময় করে সেটা ১-২ ঘন্টা করা যায় তাহলে তো কথাই নেই, মেদ ঝরে,শরীর সুস্থ রেখে আপনিও হতে পারেন আকর্ষণীয় শরীরের অধিকারী।

সময় মতো খাদ্যাভ্যাস তৈরি করা

আমরা অনেকেই রাতে দেরি করে খাবার খাই, এতে করে আমাদের শরীর পরিপাকতন্ত্রের গোলমালে ভোগে, রাতে খাওয়ার পর সাথে সাথে ঘুমিয়ে পরলে শরীর তার মেদ ঝরানোর সুযোগ পায় না, তখন রাতের খাবারই আমাদের অতিরিক্ত মেদ জমাতে সাহায্য করে , রাতে ঘুমানোর কমপক্ষে ৪ ঘন্টা আগে অবশ্যই রাতের খাবার শেষ করা উচিত, যাতে করে শরীর সঠিকভাবে খাবার হজম করার কাজ শুরু করতে পারে।

অনেকেই এত আগে খেয়ে এরপর ক্ষুদা লাগলে কি করবেন সেটা নিয়ে চিন্তা করেন, সেক্ষেত্রে বলব আপনি তরল জাতীয় কিছু অবশ্যই খেতে পারেন এই যেমনঃ গ্রিন টি, চিয়া সিড পানিতে ভিজিয়ে রাখা পানি, ইসুবগুলের ভুসি, ভিটামিন সি আছে এমন ফলের জুস, শসা, খেজুর বা প্রোটিন আছে এমন সবজি দিয়ে তৈরি স্যুপ। সহজ কথায় এমন খাবার যা তাড়াতাড়ি হজম হয়ে যায় এবং যার মধ্যে পানির পরিমান বেশি, তরল পানীয় খুব দ্রুতই মূত্রের মাধ্যমে আমাদের শরীর থেকে বেরিয়ে যায়, এতে করে হজমের ঝামেলা থাকছে না।


আরও পড়ুনঃ উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায়


স্বাস্থ্যকর খাবার চেনা

সুস্থ থাকার জন্য খাবারের তালিকা না খাওয়ার জন্য  রক্তশূণ্যতা এবং ক্যালসিয়াম কমে যাওয়া একটি বহুল আলোচিত বিষয়। রক্তশূণ্যতা বেশিরভাগ সময়ে নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায় আর ক্যালসিয়ামের সমস্যা খানিকটা বয়স হওয়ার পর মাথা চারা দিয়ে ওঠে। রক্তশূণ্যতা রোধে আমাদের বেশি করে সবুঝ শাকসবজি, কলিজা, ডিমের কুসুম, বাদাম, কমলার জুস কিসমিস,আপেল, ডুমুর, তরমুজ, গরুর গোশত, লাল শাক, কচু ইত্যাদি খেতে হবে। নারীদের যেহেতু প্রতি মাসে মাসিক হবার কারনে শরীর থেকে অনেকটা রক্ত ক্ষয় হয়ে যায় তাই তাদেরকে বিশেষভাবে রক্ত প্রবৃদ্ধির জন্যে আয়রনযুক্ত খাবার খেতে হবে।

খাবার রান্নার সময় যে লবণ দেওয়া হয় সেই লবণ বাদ দিয়ে আলাদা করে লবণ খাওয়া কমাতে হবে, সবচেয়ে ভালো হয় একদম আলাদা লবণ খাওয়া ছেড়ে দিতে পারলে।  ক্যালসিয়ামের হার বাড়াতে দুধের বিকল্প নেই কিন্তু তার সাথে সাথে আরও কিছু খাবার যোগ করলে এই সমস্যা রোধ করা সম্ভব। যেমনঃ চিজ, স্যামন মাছ, বাদাম, সবুজ শাকসবজি , দৈ, কমলালেবু, ব্রকলি,পালং শাক, শালগম, ডুমুর ইত্যাদি।

স্বাস্থ্যকর খাবার রুটিন

১. সুস্থ থাকার জন্য খাবারের তালিকা সকালের নাস্তায় ডিম অবশ্যই রাখা প্রয়োজন, সেদ্ধ, পোচ, ভাজি যে ভাবেই হোক। তবে সেদ্ধ ডিম সবচেয়ে ভালো হিসেবে বিবেচিত। আর চেষ্টা করা যাতে সকালের নাস্তাটা একটু ভারি হয়। ২. দুপুরের খাবার সকালের তুলনায় হালকা করা, সবজি বেশি করে খাওয়া, ভাত ছোট কাপের এক কাপ, সাথে একবাটি ডাল শর্করার অভাব দূর করতে সাহায্য করবে।

সালাদ রাখা উচিত অবশ্যই কারন সালাদে রয়েছে প্রচুর পরি মানে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, বেটা ক্যারোটিন, ক্যালসিয়াম, ফাইবার,ফাইটো নিউট্রিয়েন্টস, ফোলেট। সালাদ অনেক বেশি পুষ্টিকর কারন এতে কোলেস্ট্রল নেই এবং ক্যালরি ও সোডিয়ামের পরিমান কম। ৩. রাতের খাবার ৭-৮ টা মধ্যে শেষ করা ভাল এতে করে শরীর খাবার প্রাকৃতিকভাবে হজমের সময় পায়।

তবে রাতের খাবার খুবই হালকা হওয়া উচিত। একবাটি সবজি, লাল আটা রুটি, মরুগির মাংস এরকম লো কার্ব খাবার খাওয়া উচিত। ৪. যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠে হাটার অভ্যাস করা এবং লিফট, এস্কেলেটর বাদ দিয়ে সিড়ি দিয়ে ওঠার অভ্যাস করা, এতে আমাদের পায়ের মাসল সচল থাকবে এবং অনাকাঙ্ক্ষিত মাসল ক্র্যাম্পস আমরা এড়াতে পারব।

এগুলোর সাথে সাথে সারাদিনে ৮ গ্লাস পানি এবং মৌসুমি ফল খেতে হবে শরীরকে প্রয়োজনীয় পানি যোগানোর জন্যে ,যাতে ডিহাইড্রেশন না হয়। চিনি পরিহার করতে হবে। শরীর সুস্থ রাখতে এই ছোট ছোট পরিবর্তনগুলো আমাদের দায়িত্ব নিয়েই শুরু করতে হবে, নাহলে আমরা আক্রান্ত হবো নানান অসুখে যা কখনোই কাম্য নয়া


আরও পড়ুনঃ ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকা


শেষ কথা

প্রিয় পাঠক আশা করি, আপনি আমাদের এই আর্টিকেলটি পরে আনেক জানতে এবং বোঝতে পেরেছেন ও উপকিতে হয়েছেন। তাই এই রকম প্রতিনিয়ত তথ্য বহুল বিষয়ে জানতে ও পড়তে “প্রয়জনের” সাথেই থাকুন। এবং শেষ পন্তয় আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে জানায় অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 

আরও পড়ুন- 

চুল পড়ার কারণ ও প্রতিকার

ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ ও প্রতিকার

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।