কোমরের ব্যথা কমানোর উপায় ও কার্যকরী চিকিৎসা

কোমরের ব্যথা কমানোর উপায়

ব্যাক পেইন অথবা কোমরের ব্যথা এই শব্দটার সাথে সচরাচর আমরা সবাই পরিচিত। বিশেষ করে এটা কম্পিউটারের কর্মজীবীদের মধ্যে বেশি দেখা দেয়। যাদের সারাদিন কম্পিউটারের সামনে বসে বসে কাজ করতে হয়,

সারাদিন বসে বসে কাজ করার ফলে একটা সময় কোমরের ব্যথার সৃষ্টি হয়। এছাড়াও কোমর ব্যথার রয়েছে আরো বিভিন্ন কারণ। ভারী কোন জিনিস তোলার সময় অথবা শোয়া বা বসার ভুলেও অনেক সময় প্রচন্ড কোমর ব্যথায় ভুগতে হয়।

উঠতে, বসতে কোমরের অস্বস্তিকর ব্যথা দেখা দেয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা কোমরের ব্যথায় আক্রান্ত হয়। আমাদের আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন, কোমরের ব্যথা কমানোর উপায় সহ কোমর ব্যথা সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য। তো চলুন জেনে আসি, কোমরের ব্যথা কমানোর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। 


আরও পড়ুনঃ থাইরয়েড কমানোর ঘরোয়া উপায়


কোমরের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া কিছু উপায় 

কোমরের ব্যথা কমানোর উপায়

হঠাৎ কোমরে ব্যাথা হলে প্রথমেই ঘরোয়া কিছু উপায় অবলম্বন করতে পারেন। ঘরোয়া উপায় গুলো ব্যবহার করার পরও যদি দেখেন কোমরের ব্যথা কমছে না তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন। বার বার কোমরে ব্যথা বা ব্যাক পেইন হওয়া মোটেই ভালো লক্ষণ নয়। ঘরোয়া ভাবে কিছু কোমরের ব্যথা কমানোর উপায় হচ্ছে –

১। সরিষার তেল ও রসুন

সরিষার তেলের মধ্যে সামান্য রসুন কুচি মিশিয়ে গরম করে, শরীরের যে স্থানে ব্যাথা সেখানে ব্যবহার করলে তাড়াতাড়ি ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

২। গরম সেঁক

কোমরের ব্যাথা কমানোর ক্ষেত্রে দিনে ২ থেকে ৩ বার গরম সেঁক দিবেন। কোমরের ব্যথার ক্ষেত্রে গরম সেঁক খুবই উপকারী। 

৩। নারকেল তেল ও কর্পুর 

নারকেল তেল ও কর্পুর একত্রে মিশিয়ে গরম করে নিন। এই মিশ্রিত তেলটি ঠান্ডা করে কোমরের যে স্থানে ব্যাথা হচ্ছে সেখানে কয়েকবার ব্যবহার করুন। কোমরের ব্যথা সেরে যাবে।

৪। পান পাতা ও ঘি

পান পাতায় ঘি লাগিয়ে সেটি গরম করে পিঠে বা কোমরে (যে স্থানে ব্যথা হচ্ছে) কিছুক্ষণ সেঁক দিন। অনেকটা আরাম অনুভব করবেন এবং আস্তে আস্তে ব্যাথা কমে যাবে। 

৫। নীলগিরি তেল

সামান্য পরিমাণ পানি ফুটিয়ে নিয়ে, পানিটাকে ঠান্ডা করে তার মধ্যে কয়েক ফোঁটা নিলগিরি তেল মিশিয়ে নিন। এই তেলটি কোমরের ব্যথার স্থানে ব্যবহার করুন। আস্তে আস্তে ব্যথা কমে যাবে। 

৬। দুধ,মধু ও হলুদ

এক গ্লাস গরম দুধে সামান্য পরিমাণ হলুদ এবং মধু মিশিয়ে নিন। কিছুটা ঠান্ডা করে দুধটি পান করুন। এতে কোমরের ব্যথা অনেকাংশ হ্রাস পায়।

৭। ক্যালসিয়াম,ম্যাগনেশিয়াম জাতীয় খাদ্য

প্রতিদিন নিয়মিত শাকসবজি, দুধ, পনির, ঘি, বাদাম ক্যালসিয়াম জাতীয় খাদ্য খাবারের তালিকায় রাখবেন। এবং নিয়মিত ব্যয়াম করবেন। এগুলোর ফলে কোমরের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। 

কোমরের ব্যথার কিছু কারন

কোমরে ব্যথা হওয়ার শারীরিক কিছু কারন আছে। আবার দৈনন্দিন কর্মক্ষেত্রের মধ্য থেকেও কোমরের ব্যথার সৃষ্টি হয়। কোমরে ব্যথার সেরকমই কিছু কারন হচ্ছে –

১। এলআইডি

এলআইডি কোমরের ব্যথার অন্যতম একটি কারণ। বিশেষ করে যাদের বয়স ৩০ থেকে ৪০ বছর তাদের ক্ষেত্রে এ সমস্যাটি হতে পারে। মানুষের শরীরের হাড়ের মধ্যে ফাঁকা জায়গা থাকে, সেই ফাঁকা জায়গাটি পূরণ তাকে তালের শাঁসের মতো চাকতি দিয়ে।

কোন কারণবশত যখন এই চাকতি বের হয়ে যায়, তখনই স্নায়ুর উপর চাপ প্রয়োগ হয়। এর ফলে কোমরে ব্যথা হয়।

২। নন স্পেসিফিক লো ব্যাক পেইন

অনির্দিষ্ট কারণে মাংসপেশি, হাড়, স্নায়ু এই তিনটি উপাদানের সামঞ্জস্য নষ্ট হলে তখন কোমরের ব্যথার সৃষ্টি হয়। এটি সাধারণ তরুণ বয়সে তুলনামূলক বেশি হয়ে থাকে। 

৩। লাম্বার স্পনডাইলোসিস

শরীরে কোমরের মধ্যে পাঁচটি হাড় রয়েছে। কোমরের এই হাড়গুলো যদি বংশগত কোনো কারনে অথবা বয়সের কারনে ক্ষয় হয়ে যায়, তখন থাকে লাম্বার স্পনডাইলোসিস বলা হয়। এই হাড়গুলো ক্ষয় হয়ে যাওয়ার ফলে কোমরের ব্যাথা হতে পারে। 

৪। অন্যান্য কিছু কারন

এগুলোর পরেও আরো বিভিন্ন কারনে কোমরে ব্যথা হতে পারে।

  • ইনফেকশন হলে অথবা মেরুদন্ডে টিউমার হলেও কোমরে ব্যথা হতে পারে। 
  • তাছাড়াও মাংসপেশী শক্ত হয়ে গেলে অথবা মাংসপেশী অতিরিক্ত দুর্বল হয়ে গেলেও কোমরে ব্যথা হয়। 
  • শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়ার ফলে। 
  • একটানা অনেকক্ষণ হাঁটলে বা কোথাও অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেও কোমরে ব্যথা হয়।
  • ভারী জিনিসপত্র বহন করার ফলেও কোমরে ব্যথা হয়।

উপরে উল্লেখিত বিষয়ের মধ্যে আলোচনা করা হয়েছে, কোমরের ব্যথা কমানোর উপায় সম্পর্কে।

কোমরের ব্যথা থেকে দূরে থাকবেন যেভাবে

হুটহাট করে কোন ধরনের ভারী জিনিস বহন করতে যাবেন না। কয়েকজন মিলে ভারী জিনিসটি বহন করবেন,এতে ভারী জিনিসের পুরো ওজন আপনার উপরে পড়বে না। একই স্থানে দীর্ঘ সময় বসে থাকবেন না। মাঝেমধ্যে উঠে একটু হাঁটবেন অথবা জায়গা পরিবর্তন করবেন।

এক জায়গায় অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন না, হেঁটে হেঁটে কথা বলবেন অথবা কাজ করবেন। হাঁটা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। নরম ফোমের বিছানায় কখনই শোবেন না। একটানা অনেকক্ষণ মাটিতে বসে কাজ করবেন না। এবং কোমরে ব্যথা করলেই ফার্মেসি থেকে হুটহাট যেকোনো ব্যথার ঔষধ খাবেন না।

অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ঔষধ সেবন করবেন। এগুলো সবসময় মাথায় রাখবেন এবং কোমরের ব্যথা কমানোর উপায় গুলো ব্যবহার করে দেখবেন।

শেষ কথা

আমাদের আজকের এই পুরো আর্টিকেলটি পড়ে অবশ্যই কোমরের ব্যথা কমানোর উপায় সম্পর্কে অনেক তথ্য জানতে পারলেন। আশা করি কিছুটা হলেও আপনি উপকৃত হয়েছেন।

কোমরের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়গুলো ব্যবহার করার পরও যখন ব্যথা কমছে না বা কিছুদিন পর পরই ব্যথা দেখা দিচ্ছে, তখন অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। যেকোনো সামন্য রোগকেই অবহেলা করা উচিত নয়।

সামান্য সমস্যা থেকেই অনেক সময় বড় ধরনের রোগের সৃষ্টি হয়ে যায়। সতর্কতার সহিত চলাফেরা করুন, সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ। 

কোমরের ব্যথা কমানোর উপায় সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ

১। কোমর ব্যথার জন্য কোন ডাক্তার দেখানো উচিত? 

উত্তর:- কোমর ব্যথার জন্য আপনাকে অবশ্যই অর্থোপেডিক ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। অর্থোপেডিক্স হচ্ছে, মেডিসিনের একটি শাখা যেখানে হাড়, হাড়ের জয়েন্টগুলো এবং পেশীবহুল সিস্টেমে ত্রুটি-বিচ্যুতি, বিভিন্ন অংশের ব্যথা এবং অবক্ষয়জনিত ব্যধি সংশোধন করে। 

২। কিডনির সমস্যা হলে কোথায় কোথায় ব্যাথা হয়? 

উত্তর:- কিডনি পুষ্টির জন্য রক্ত সংশোধন করে এবং শরীরের প্রস্রাব নির্গত করে। কিডনির সমস্যা হলে, কিডনির অবস্থানের মতই পেটের নিচের দিকে ব্যাথা অনুভূত হবে সাধারণত একপাশে (যে পাশে কিডনি জড়িত থাকে)। এবং এটা খুব কমই উভয়  দিকে ঘটতে পারে। 

৩। সহবাস করার পর কোমর ব্যথা হয় কেন?

উত্তর:- শরীরের হরমোনের নানা পরিবর্তন হয় মোনোপজের সময় এবং যোনিতে লুব্রিকেশনের অভাব দেখা দিতে পারে। ফলে সে সময় যৌনসঙ্গম করলে ব্যাথা হওয়াটা স্বাভাবিক। 

৪। পিঠে ব্যথা নাকি কিডনিতে ব্যাথা? 

উত্তর:- পিঠের ব্যথার চেয়ে কিডনির ব্যথা আপনার শরীরে বেশি এবং গভীরভাবে অনুভূত হবে। পিঠের ব্যাথা এটি আপনার পিঠের উপরের অর্ধেক অনুভব করতে পারেন, নীচের অংশে নয়।

৫। অল্প বয়সে কোমর ব্যথার কারণ কি? 

উত্তর:- অল্প বয়সে কোমর ব্যথার কিছু কারণ হচ্ছে –

  • ভারী জিনিস নিয়মিত বহন করলে। 
  • দীর্ঘদিন একই ভঙ্গিতে বসে থাকলে। 
  • ড্রাইভিং এর সময় সামনের দিকে বেশি ঝুঁকে চালালে। 
  • কাঁত হয়ে বা শুয়ে দীর্ঘসময় বই পড়লে। 
  • এবং বসার চেয়ারে ঠিক না হলেও সামনে-পেছনে ঝুঁকে বসলে এই সমস্যা হয়। 

আরও পড়ুন-

এলার্জি চুলকানি দূর করার উপায় ও ঘরোয়া পদ্ধতি

পাতলা পায়খানা হলে করণীয়, চিকিৎসা ও খাবার তালিকা

Leave a Comment