পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়

পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়

পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়: পাইলস, যাকে আমরা অর্শ্বরোগ বলে জানি। ইংরেজিতে বা ডাক্তারের ভাষায় যাকে হেমোরয়েড বলে বলা হয়। আমাদের মল দারের শেষাংশে রেকটামের ভেতরে ও বাইরে কুশনের মতো একটি রক্তশিরার জালিকা থাকে, যা প্রয়োজন অনুসারে সংকুচিত ও প্রসারিত হয়। এটা সবার থাকে। যখন কোনো কারনে পায়ুপথের এসব শিরা সংক্রমণ তখন তাকে পাইলস বলা হয়।

পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়

পাইলস রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার বেশ কিছু উপায় থাকলেও এমন ৫টি উপায় রয়েছে যেগুলো বসথেকে বেশি কার্যকর। সেই পাঁচটি কার্যকর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত নিম্নে তুলে ধরা হলো। 

১. সিটজ বাথ বা উষ্ণ গোসল

সিটজ বাথ বা উষ্ণ গোসল, যা পাইলসের জন্য খুব সহজ কিন্তু অত্যন্ত কার্যকর একটি পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে সহনীয় গরম পানিতে বসে থাকতে হয়। যা নিতম্বকে পানিতে ডুবে রাখে। গরম পানি ফোলা কমাতে সাহায্য করে সাথে সাথে চুলকানি এবং অস্বস্তি থেকে মুক্তি দেয়। সিটজ বাথ বা উষ্ণ গোসল প্রস্তুত করতে নিম্নের পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করুন:

  •  প্রথমে সহনীয় তাপমাত্রার গরম পানি দিয়ে একটি বেসিন বা বাথটাব পূরণ করুন।
  • তারপর আপনার নিতম্ব সম্পূর্ণরূপে সেই পানিতে ডুবে রাখুন।
  • বেসিন বা বাথটাব ১৫-২০ মিনিট বসে থাকুন।
  • বেসিন বা বাথটাব থেকে উঠে মলদ্বার শুকনো অংশে আলতো করে চাপ দিন।
  • এই প্রক্রিয় দিনে ২-৩ বার করলে ভালো ফলাফল পওয়া যায়।

২. কোল্ড কম্প্রেস বা বরফ থেরাপী

পাইলস আক্রান্ত স্থানে কোল্ড প্যাক লাগালে এর ফোলাভাব দ্রুত কমে যায় এবং হেমোরয়েডের ব্যথা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। ঠান্ডা তাপমাত্রা রক্তনালীকে সংকুচিত করে থাকে যা আমাদের সাময়িক স্বস্তি দেয়। কোল্ড কম্প্রেস বা বরফ থেরাপী নেয়ার পদ্ধতি:

  • প্রথমে একটি পরিষ্কার কাপড়ে কয়েক টুকরো বরফে নিয়ে একটি পোটলা করুন।
  • তারপর সেই বরফের পোটলা বায়ুপথে হালকা চেপে ধরে রাখুন যতক্ষন রাখা যায়।
  • এভাবে ১৫-২০ বার করুন।
  • প্রয়োজনে দিনে কয়েকবার এই প্রক্রিয়াটি পুনরাবৃত্তি করুন।

৩. নারিকেল তেল

নারিকেল তেল পাইলসের জন্য খুব কার্যকারি একটি প্রাকৃতিক ঔষুধ যা হেমোরয়েডের লক্ষণগুলি থেকে আমাদের মুক্তি দিতে পারে। নারিকেল তেলে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য আক্রান্ত স্থানকে প্রশমিত করে। পাইলস আক্রান্ত স্থানে নারিকেল তেল ব্যবহার পদ্ধতি:

  • প্রথমে বায়ুপথ সাবান ও হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।
  • পরিষ্কার কাপড় বা টিস্যু দিয়ে বায়ুপথ অংশটি শুকিয়ে নিন।
  • তুলোর বল বা পরিষ্কার আঙ্গুল ব্যবহার করে হেমোরয়েডগুলিতে অল্প পরিমাণে নারকেল তেল লাগিয়ে দিন।
  • দিনে ২-৩ বার এই প্রক্রিয়াটি অনুসরন করুন।

৪. ভেজা মোছা বা ওয়াইপ ব্যবহার করা

পাইলসে আক্রান্ত হলে শুকনো টয়লেট পেপার ব্যবহারের পরিবর্তে ভেজা ওয়াইপ ব্যবহার করা উত্তম কেননা,  ভেজা ওয়াইপ জ্বালা কমাতে এবং হেমোরয়েড উপশম করতে সাহায্য করে। শুকনো টয়লেট পেপার বা টিস্যুর ঘর্ষণের ফলে রক্তনালীগুলির জ্বালাতন আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। যে কোনো সম্ভাব্য জ্বালা যন্ত্রনা এড়াতে সুগন্ধি-মুক্ত এবং অ্যালকোহল-মুক্ত ভেজা ওয়াইপ ব্যবহার করুন। ভেজা ওয়াইপ বা ওয়াইপ আপনার নিকটস্থ ফার্মেসিতে পেয়ে যাবেন।

৫. ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার গ্রহন

ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার বেশি বেশি গ্রহন করা যেমন: ব্রোকোলি, ফুলকপি, মটরশুঁটি, মিষ্টি আলু, পালং শাক ইত্যাদি সাথে চিনাবাদাম, আখরোট, চিয় বিজও খাওয়া যেতে পারে। আঁশযুক্ত খাবার হজম শক্তি বাড়ায় এবং মল ত্যাগকে সহজ করে যা মলদ্বারের রক্তনালীগুলির উপর চাপ কমায়।

এছাড়াও নিয়মিত ব্যয়াম শারীরিক পরিশ্রম পর্যাপ্ত পানি পান করা ঘুমও আমাদের সুস্থ্য শরীরের জন্য খুবই জরুরী।

কখন ডাক্তার দেখাবেন

উপোরক্ত পদ্ধতিগুলো ফলো করার পরও যদি দেখেন আপনার পাইলসের কোন উন্নতি হচ্ছে না তখন একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সরনাপন্ন হোন। ধন্যবাদ।

Leave a Comment