মাংসপেশির ব্যথার কারণ ও চিকিৎসা
মাংসপেশির ব্যথার কারণ ও চিকিৎসা: আমাদের শরীরে মাংসপেশিতে বিভিন্ন সময় ব্যথা হয়ে থাকে। বিশেষ করে বয়স ৩০ পার হলেই এই ব্যথা বেশি পরিলক্ষিত হয়। শরীরের যে কোনো যায়গার মাংসপেশিতে বিশেষ করে হাত-পায়ের মাংসপেশিতে এই ব্যথা বেশি অনুভূত হয়। মাংসপেশিতে এই ব্যথা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।
যেমন: মাংসপেশির দুর্বলতা, অতিরিক্ত পরিশ্রম, আঘাত জনিত কারন, ভিটামিন ডি -এর অভাব, ডিহাইড্রেশন, বাতরোগ ইত্যাদি। অনেক সময় কিছু কিছু রোগের কারণেও এই ব্যথা হয়ে থাকে। তবে যে কারনেই এই ব্যথা হোকনা কেনো সময় মত সঠিক পদক্ষেপ গ্রহন করলে এই ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। নিম্নে মাংসপেশির ব্যথার কারণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
মাংসপেশির ব্যথার কারণ
মাংসপেশির দুর্বলতা বা আঘাত: মাংসপেশিতে যে সকল কারনে ব্যথা হতে পারে তাদের মধ্যে অন্যতম একটি করণ হচ্ছে মাংসপেশির দুর্বল হয়ে যাওয় বা কোনো কারনে আঘাত লাগা। যদি কোনো কারনে হটাৎ করে আপনি দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন, হাঁটেন, দৌড়ান অথবা কোনো আঘাত পান সেক্ষেত্রে মাংসপেশি দুর্বল হয়ে যেতে পারে এবং ব্যথা হতে পারে।
ভিটামিন ডি -এর অভাব: ভিটামিন ডি এর অভাবে মাংসপেশিতে বিশেষ করে পায়ের মাংসপেশিতে ব্যথার হতে পারে। দৈর্ঘ্য দিন ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার গ্রহন না করার ফলে শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব দেখা দেয়, যার ফলে মাংসপেশিতে ব্যথা অনুভূত হয়।
ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা: ডিহাইড্রেশন বা শরীরে পানিশূন্যতা কারনে আমাদের শরীরে তাৎক্ষনিক যে সকল সমস্য দেখা দেয় তাদের মধ্যে একটি মাংসপেশি ক্র্যাম্প বা সংকোচন হওয়া, যা মাংসপেশিতে ব্যথার অন্যতম একটি কারণ হতে পারে।
এছাড়াও যে সকল কারনে মাংসপেশিতে ব্যথা হতে পারে সেগুলো হলো অতিরিক্ত পরিশ্রম বা মাংসপেশির অতিরিক্ত ব্যবহার যেমন হটাৎ জিম করা, পেশীর লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ভাইরাল সংক্রমণ, মানসিক চাপ, কিছু রোগ যেমন: ফাইব্রোমায়ালজিয়া, আর্থ্রাইটিস, বা পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজ এর কারণেও হাত-পা বা শরীরের যে কোনো স্থানের মাংসপেশিতে ব্যথা হতে পারে।
মাংসপেশির ব্যথার চিকিৎসা
হতাৎ অতিরিক্ত পরিশ্রম, ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা কারনে মাংসপেশিতে ব্যথা হলে প্রথমিকভাবে আমরা যা করতি পারি তা হলো:
বিশ্রাম নেয়া: মাংসপেশিকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দেয়া। হতাৎ অতিরিক্ত পরিশ্রম, ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা কারনে মাংসপেশিতে ব্যথা হলে কিছুদিন বিশ্রাম নিন এবং অতিরিক্ত পরিশ্রম করা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। এত করে কিছু দিনের মধ্যেই মাংসপেশির ব্যথা সেরে যাবে। আর পরবর্তিতে হতাৎ অতিরিক্ত
পরিশ্রম বা ব্যায়াম করতে যাবেন না। পরিশ্রেমের চাপ আস্তে আস্তে বাড়ান এবং ব্যায়ামের শুরুতে ওয়ার্মআপ করুন এতে করে পেশির ওপর চাপ কম পড়ে।
গরম সেঁক দেয়া: ব্যথাযুক্ত মাংসপেশিতে গরম সেঁক দেয়া। ব্যথাযুক্ত মাংসপেশিতে বা ব্যথার স্থানে গরম সেঁক দিন। দিনে ২-৩ বার। এটি রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
বরফ সেঁক দিন: ব্যথাযুক্ত মাংসপেশিতে বরফ সেঁক দিন। যদি মাংসপেশির ব্যথা আঘাত জনিত কারণে হয়ে থাকে, তাহলে প্রথমে বরফ সেঁক দিন। এটি তাৎক্ষনিক ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে।
ম্যাসাজ করুন: হারকা গরম সরিষার তেল দিয়ে ব্যথাযুক্ত মাংসপেশিতে মৃদু ম্যাসাজ করুন। এটি মাংসপেশিকে শিথিল ও ব্যথা কমাতে খুব ভালো সাহায্য করতে পারে।
ব্যায়াম করা: উক্ত কারনে মাংসপেশিতে ব্যথা হলে হালকা ব্যায়াম, যেমন হাঁটা বা যোগব্যায়াম করা যেতে পারে। এটি মাংসপেশির শক্তি ও নমনীয়তা বাড়িয়ে থাকে।
ভিটামিন ডি -এর অভাব, ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতার কারনে মাংসপেশিতে ব্যথা হলে উপরোক্ত কাজগুলোর পাশাপাশি যে সকল কাজ আমরা করতে পারি তা হলো:
পর্যাপ্ত পানি ও তরল খাবার খাওয়া: ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতার মূল কারনই হচ্ছে শরীরে পারিন পরিমান কমে যাওয়া। তাই এমন হলে পর্যাপ্ত পরিমানে পানি ও স্বাস্থ্যকর তরল খাবার খেতে হবে।। এটি শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে সাথে সাথে ব্যথাও কমায়।
পুষ্টিকর খাদ্য করা: নিয়মিত স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার। শুধুমাত্র একটি ভিটামিনের উপর জোর দিলেই হবে না, শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সকল বিটামিন যেনো আমাদের খাদ্য তালিকায় নিয়মিত তাকে সেদিকেউ খেয়াল রাখতে হবে।
ব্যথানাশক ওষুধ সেবন: আইবুপ্রফেন, নেপ্রোক্সেন সোডিয়াম এ যাতীয় সেবন করা যেতে পারে যা পেশি শিথিলকারক এগুলি ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে অবশ্যই ব্যথানাশক ওষুধ সেবনের পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ফিজিওথেরাপি: যদি ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী ও অতি তীব্র হয়, এমন ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার মাধ্যমে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীনভাবে ব্যথা কমানোর জন্য একজন ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন।
এবসেও যদি কোনো কাজ না হয় তাহলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ধন্যবাদ!