বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান
বাংলাদেশে ভ্রমনের জন্য অনেক স্থান রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান নিয়ে আজ আমরা আলোচনা করবো।
বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি, বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ। এদেশে অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে বিশেষ করে শীতকালই ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। আশ্চর্যজনক খাবার এবং আকর্ষণে ভরা পরিবেশ যা শীতকালীন ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত।
যাইহোক, যদি আপনি শীতকালে ভ্রমণ করতে না পারেন তবে আপনার ভ্রমনের অপূর্ণতা থেকে যাবে। বাংলাদেশে শীতকালে দেখার মতো অনেক জায়গা রয়েছে। আপনাকে যেতে এবং অন্বেষণ করতে কিছু অতিরিক্ত সময় বের করতে হবে।
বাংলাদেশে সেরা ১০টি পর্যটন স্থান
শীতকালে বাংলাদেশ একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। শীতকালে বাংলাদেশে দেখার জন্য এখানে রয়েছে সেরা ১০টি দর্শনীয় স্থান। সেগুলি হলঃ- 1. কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত 2. রাতারগুল জলাবন 3.জাফলং 4. রাঙ্গামাটি 5. বান্দরবন 6. সাজেক ভ্যালি 7. সুন্দরবন 8. কক্সবাজার 9. সেন্টমার্টিন 10.টাঙ্গুয়ার হাওড়।
আরও পড়ুনঃ বাচ্চাদের পড়ায় মনযোগী করার উপায়
কক্সবাজার
কক্সবাজার ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে ভালো সময় হল শীতকাল। আর শীতকালে সবাই ঘুরতে বেশি পছন্দ করে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ভ্রমন করলে আপনি আপনার মনের প্রশান্তি খুঁজে পাবেন, সমুদ্রের পানির ঢেউয়ের গর্জন, ঢেউগুলো উপকূলে আছড়ে পড়ার দৃশ্য শীতল বাতাস, সমুদ্রের পানিতে গোসল করা, এগুলো পর্যটকদের আনন্দে ভাসিয়ে তোলে । আর যখন সী বিচে হাটার সময় পানি বা পানির ঢেউ যখন নিজের দিকে আসে তখন অনেকটা ভয় ভয় লাগে.কক্সবাজার ভ্রমণে সূর্য উঠা এবং সূর্য অস্ত যাওয়ার দৃশ্যটি অন্যতম । সাগরের স্টিমার বা লঞ্চে ঘুরতে যাওয়া এটা একটা অন্যতম আনন্দ।
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত
কুয়াকাটা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে একটি সমুদ্র সৈকত ও পর্যটন কেন্দ্র । পর্যটকদের কাছে কুয়াকাটা সাগর কন্যা নামে পরিচিত 18 কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট কুয়াকাটা বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত । এখানে দেখা যায় সূর্য উদয় ও সূর্যাস্ত ।
সূর্যটি পানির নিচে ডুবে যাচ্ছে এবং ভোর বেলায় দেখা যায় যে সূর্যটি পানির উপর থেকেই উদয় হচ্ছে, এমনি দৃশ্য উপভোগ করার জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটক ভিড় জমায় আমাদের দেশে । এছাড়াও এখানে পাওয়া যায় শামুক ও ঝিনুকের তৈরী মালা, চুরি, কানের দুল, ইত্যাদি। খাবারের বিষয় আপনি যে খাবার পছন্দ করেন তাৎক্ষণিক আপনাকে রান্না করে দিবে এবং আপনি তাজা খাবার উপভোগ করতে পারবেন ।
রাতারগুল
বাংলাদেশের একমাত্র মিঠাপানির জলাবন এবং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য সিলেটের গোয়াইনঘাটে অবস্থিত । সিলেট শহর থেকে এর দূরত্ব 26 কিলোমিটার । এটা পৃথিবীর কয়েকটি জলাশয় এর মধ্যে অন্যতম। চিরসবুজ এই বনে গৃষ্ম কালে সাধারণত গাছের পাতা খুব একটা দেখা যায় না সেই সময় গাছের পাতা ঝরে যাওয়ার কারণে গাছগুলো শুকনো বা প্রাণহীন দেখা যায় । এই রাতারগুল জলাবনে বিভিন্ন প্রজাতির পশু পাখি ও জীব জন্তু রয়েছে । বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য বিধায় বন্য প্রাণী নির্ভয়ে চলাচল করে যা আমাদের পর্যটকদের আনন্দের মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
সিলেট জাফলং
বাংলাদেশ সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত । জাফলং পাথরের জন্য বিখ্যাত, এখানে প্রচুর পরিমানের পাথর পাওয়া যায় তাই এখানকার শ্রমজীবীরা পাথর বিক্রি করেই জীবন যাপন করে । জাফলংয়ে অনেক উঁচু উঁচু পাহাড় রয়েছে সে পাহাড় থেকে নেমে এসেছে সুন্দর ঝরনা, আর এই ঝরনা ঝর্ণা দেখার জন্য পর্যটক ছুটে চলে জাফলং। আর এই ঝর্ণার পানিতে গোসল করতে না পারলে পর্যটকদের ভ্রমণ অসম্পূর্ণ মনে হবে । এখানে পর্যটকদের আর একটি দর্শনীয় বিষয় হচ্ছে ঝুলন্ত ব্রিজ ।
রাঙ্গামাটি
আপনি জীবনযাত্রার ক্লান্তি ভুলে সবুজ পাহাড়, দৃষ্টিনন্দন লেক আর সরল জীবন যাপন করা আদিবাসীদের মধ্যে একান্তে কিছু সময় কাটাতে চান তাহলে প্রকৃতির এসব স্বাদ উপভোগ করতে ঘুরে আসতে পারেন রাঙামাটির আকর্ষণীয় কয়েকটি স্থান । রাঙ্গামাটির জনপ্রিয় ভ্রমণ স্থানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কাপ্তাই লেক, ঝুলন্ত সেতু ,রাজবন বিহার ,শুভলং ঝর্ণা, কাপ্তাই বাঁধ, কর্ণফুলী কাগজ কল নৌবাহিনী একাডেমি, শুভলং ঝর্ণা, কর্ণফুলী নদী, শেখ ইকোপার্কসহ মনোরম সব পর্যটন কেন্দ্র। এখানে রয়েছে পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য এবং পাহাড়ের সাথে সাথে নদীর পানির সৌন্দর্যের মহিমা ছড়িয়ে পড়েছে এই রাঙামাটিতে।
আরও পড়ুনঃ রমজান মাসে ওজন কমানো ৫টি উপায়
বান্দরবান
নীলাচল বাংলাদেশের বান্দরবন জেলার ন্যূনতম দর্শনীয় স্থান। নীলাচল কে বাংলাদেশের দার্জিলিং বলে আখ্যায়িত করা হয়, কেননা পাহাড়ের উপর থেকে দেখা যায় মেঘের অপরূপ সৌন্দর্যের মহিমা । আবার পাহাড়ের উপর থেকে নিচের দিকে তাকালে মনে হয় যে মেঘ কিভাবে ভেসে বেড়াচ্ছে এমন অপরূপ দৃশ্য দেখতে কার না ভালো লাগে।
সাজেক ভ্যালি
সাজেক ভ্যালি বর্তমান সময়ে ভ্রমণ পিপাসু মানুষের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থান গুলোর মধ্যে একটি । বাংলাদেশের রাঙ্গামাটি জেলার বাঘা উপজেলার অন্তর্গত সাজেক ইউনিয়নের একটি বিখ্যাত পর্যটন আকর্ষণ হচ্ছে সাজেক ভ্যালি । বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন, যার আয়তন 67 বর্গমাইল, এখানে সাজেক বিজিপি ক্যাম্প অবস্থিত । বিজিপি ক্যাম্প থেকে পর্যটকদের নিরাপত্তা দেওয়া হয়ে থাকে । আর এখানে বিজিবি অবস্থান করার কারণে আশেপাশের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র খুব সুন্দর উন্নত ভাবে সাজানো হয়েছে । সাজেক ভ্যালিতে ত্রিপুরা আদিবাসীরা বসবাস করে থাকে।
সুন্দরবন
বাংলাদেশের আর একটি অন্যতম পর্যটনের নাম সুন্দরবন । সুন্দরবনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো চারিদিকে সবুজের সমারোহ যেদিকে তাকাবেন সেইদিকে সবুজ আর সবুজ দেখতে পাবেন । সুন্দরবনে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সুন্দরী, শাল, গজারি, গেওয়া, গোলপাতা ইত্যাদি । এখানে রয়েছে নানা ধরনের পশু পাখি ও জীব জন্তুর বসবাস । এখানে দেখাযায় বাঘ, ভাল্লুক, কুমির, হরিণ, চিত্রা হরিণ নানা জাতের কীটপতঙ্গ । সুন্দরবনে দেখাযায় জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য মধু সংগ্রহ করার দৃশ্য । আর এই অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করার পর্যটকদের জন্য বিখ্যাত সুন্দরবনের আশেপাশে রয়েছে অসংখ্য পর্যটন স্পর্ট ।
সেন্টমারটিন
দেশের ভ্রমণ পর্যটকদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান হল সেন্টমার্টিন দ্বীপ। বর্তমানে দারুচিনি দ্বীপ নামেও পরিচিত এই সেন্টমার্টিন দ্বীপ। এর চতুর্পাশে সাগর আর আকাশে মিলেমিশে একাকার সারি সারি নারিকেল গাছ আর সাগর তলার মায়াময় সৌন্দর্যে মন জুড়ে যায় নিমিষেই। সৈকতে বসে নরম কোমল স্নিগ্ধ বাতাসেই গা জুড়িয়ে যায়। এখানে প্রচুর পরিমানে শুটকি মাছ পাওয়া যায়, দেখা যায় কয়েক কিলোমিটার জুড়ে শুটকি মাছ শুকাচ্ছেন. আমাদের দেশের বেশিরভাগ শুটকি মাছের জোগান এখান থেকেই হয়। দ্বীপটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র এখানে প্রচুর পরিমাণে দেশ-বিদেশ বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটক এই সুন্দর সৌন্দর্যের মহিমা দেখতে আসে।
আরও পড়ুনঃ মিশরের পিরামিড সম্পকে অজানা তথ্য
টাঙ্গুয়ার হাওর
বাংলাদেশের সু-বিশেষ আকৃতির অগভীর এ জলাভূমি কে টাঙ্গুয়ার হাওড় বলা হয়। যা প্রতিবছর বর্ষার পানিতে প্লাবিত হয়ে টিউনিং সাগরের মতো আকার ধারণ করে। বছরে সাত মাস হাওর পানিতে ডুবে থাকে শীতকালেও গৃষ্ম কালে হাওর দেখতে মনে হয় সীমানাহীন প্রান্তর সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা তাহিরপুর উপজেলার মাঝে প্রায় 100 বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ঘন নীল জলরা। টাঙ্গুয়ার হাওড় বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিষ্টি জলের জলাভূমি, এই টাংগর হাওরে মেঘালয়ের ত্রিশটি খালের সংমিশ্রণে তৈরি। এখানে প্রচুর পরিমানে পাখির সমারোহ দেখা যায়দ। ঘন নীল জলরাশি আর অতিথি পাখির সমারোহ উপভোগ করার জন্য পর্যটক এখানে এসে ভিড় জমায়।
আরও জানুন ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়মঃ
আমরা ভ্রমনে যাওয়ার জন্য যানবাহন হিসেবে ট্রেনকে প্রথম সারিতে রাখি। কারন ট্রেন ভ্রমন টা অনেক মজার।
বাংলাদেশের প্রায় ৯০% মানুষ ট্রেনে যাতায়াত করতে পছন্দ করে। স্টেশনে যেয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে ট্রেনের টিকিট কাটার থেকে মানুষ এখন প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে ঘরে বসেই টিকিট ক্রয় করা কে বেশি পছন্দ করে। তাই জেনে নেওয়া উচিত অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম গুলো কি?
উপসংহার
পরিশেষে আমরা বলতে পারি আমাদের দেশ প্রকৃতিতে ভরপুর। উষ্ণ জলবায়ু আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার সময়ই হলো শীতকাল। আমাদের এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য প্রবন দেশে প্রচুর পরিমানে পর্যটন কেন্দ্র আছে। তাই শীতকালে আমাদের দেশে প্রচুর পরিমানে পর্যটক ভ্রমণ করতে আসেন। আর তাই আমরা আমাদের দেশের জন্য গর্ব করি। প্রিয় পাঠক তাহলে আজ আমরা জানলাম বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে। আশা করি সকল কিছু বোঝতে পেরেছেন, এর যদি বোঝতে সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে কমেন্ট করে অবশ্যয় জানাবেন। শেষ পয়ন্ত আমাদের সাথেই থাকার জন্য “ধন্যবাদ”।